ভোট গণনা শেষ, কে পাচ্ছেন সাহিত্যে নোবেল?
Published: 6th, October 2025 GMT
নোবেল পুরস্কার নিয়ে ‘বাজি’ বা ‘পোলিং’ হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। মূলত সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে জুয়া খেলা বা বাজি ধরা, যা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রচারিত হয়। কে কী কারণে এ পুরস্কার পেতে পারেন, এসব নিয়ে চলে হিসাব–নিকাশ। এ বছরও সাহিত্যে কে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন, এ নিয়ে চলছে অঙ্ক কষাকষি। পোলিংও করছে অনেক ওয়েবসাইট। দেখা যায়, কোনো বছর কোনো প্রতিষ্ঠানের জরিপের ফলাফল মিলে যায়। কোনো বছর আবার মেলে না।
এ বছর এমন কয়েকটি ওয়েবসাইট সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রাপ্তের ছোট তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে THE BERLINER একটি। এখানে ম্যাথিল্ড মন্টপেটিটের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখায় বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তিনি জানান, চার বছর ধরে তাঁর বুক ক্লাব প্রতিবছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার কে জিতবেন, তা অনুমান করার জন্য একটি পুল পরিচালনা করছে। গত তিনবারই তাঁর অনুমান সত্য হয়েছে। ম্যাথিল্ড মন্টপেটিট বলেন, ‘আমরা সাধারণত সবাই পাঁচজন লেখকের নাম পাই এবং বিজয়ী হন একজনই। আমরা এটিকে গুরুত্বসহকারে নিই। তবে সাহিত্য এত গুরুত্বপূর্ণ যে কে সন্ত হচ্ছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামানো কখনোই উচিত নয়।’
২০১৯ সালে পিটার হান্ডকে তো ২০২০ সালে লুইস গ্লুক। পরের বছর ২০২১ সালে আবদুলরাজাক গুরনাহ, ২০২২ সালে অ্যানি আর্নো। মানে একবার পুরুষ সাহিত্যিক তো অন্যবার নারী সাহিত্যিক। কোরিয়ার হান কাং গত বছর জিতেছিলেন, তাই এ বছরের বিজয়ী হবেন একজন পুরুষ।সাত বছর ধরে, ধরেন ২০১৮ সালে, যখন পোলিশ ঔপন্যাসিক ওলগা টোকারচুক জিতেছিলেন, তখন থেকে দেখা যাচ্ছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন এ বছর একজন পুরুষ লেখক তো পরের বছর নারী লেখক।
২০১৯ সালে পিটার হান্ডকে তো ২০২০ সালে লুইস গ্লুক। পরের বছর ২০২১ সালে আবদুলরাজাক গুরনাহ, ২০২২ সালে অ্যানি আর্নো। মানে একবার পুরুষ সাহিত্যিক তো অন্যবার নারী সাহিত্যিক। কোরিয়ার হান কাং গত বছর জিতেছিলেন, তাই এ বছরের বিজয়ী হবেন একজন পুরুষ। এদিক বিবেচনা করলে যেন নোবেল কমিটি সাহিত্যের ব্যাপারে বসেই আছে নারী-পুরুষের লিঙ্গবৈষম্য কমানোর জন্য। এবারের পুরুষ লেখক তবে কে? এ বিষয়ে ম্যাথিল্ড মন্টপেটিট প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন, বিজয়ী লেখক হতে পারেন ভারতীয় অমিতাভ ঘোষ। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল বিজয়ী হওয়ার পর আর কোনো ভারতীয় এ পুরস্কার পাননি। তিনি মজা করে বলছেন, অরুন্ধতী রায় ও সালমান রুশদি হতে যাচ্ছেন না, দুঃখিত। কারণ, একজন অ্যাকটিভিস্ট, অন্যজন বেশি খ্যাত।
ম্যাথিল্ড মন্টপেটিট.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব ল প রস ক র প রস ক র প এ বছর র বছর ত বছর
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগান্তির আরেক নাম ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, অনিয়ম, দালালচক্র আর জনবল ঘাটতির কারণে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা।
এই হাসপাতাল শুধু ভেড়ামারা নয়, দৌলতপুর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল। অথচ চিকিৎসকের অপ্রতুলতা আর দুর্নীতির কারণে রোগীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
ডা. পলাশচন্দ্র দেবনাথের অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থান, হাসপাতালের গেটের সামনে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টানাটানি, অনিয়ম ও দালালচক্র সবমিলিয়ে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা চরম বিপর্যস্ত। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো তীব্র হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত ২৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারি) ও তিনজন মেডিকেল অফিসার।
ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদশূন্য রয়েছে- জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), আইএমও, এনেসথেটিস্ট এবং এমও (এ.এমসি)।
এছাড়া হাসপাতালে একজন মিডওয়াইফ, একজন জুনিয়র নার্স, একজন অ্যাকাউন্টেন্ট, একজন ক্যাশিয়ার, তিনজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিন), একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই), দুইজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১২ জন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন কম্পাউন্ডার, অফিস সহায়ক, তিনজন ওয়ার্ড বয়, দুইজন আয়া, দুইজন কুক, একজন মালি, একজন নিরাপত্তার প্রহরী, তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুইজন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে।
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে একজন করে মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও সবগুলো পদই শূন্য। শুধু সাতবাড়ীয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়োগ করা মেডিকেল অফিসারকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রায় অচল।
প্রতিদিনই হাসপাতালে বরাদ্দকৃত সিটের বাইরে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাই তাদের ফ্লোরে অথবা বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গাইনি ও এনেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় অপরেশন বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ৪০০ রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। জরুরি বিভাগ ও প্রসূতি সেবাও ভেঙে পড়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অদক্ষ অপারেটার ও এক্স-রে মেশিন বিকল রয়েছে। প্রয়োজনীয় ল্যাব টেস্টও করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল বা বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটে যেতে। ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালে সনো করা বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. পলাশ চন্দ্র দেবনাথ (কোড নং-১৩১৯০০) ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনদিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেন। কিন্তু ছুটি শেষে আর অফিসে যোগ দেননি।
জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে চলে গেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
রোগীরা বলছেন, সরকারি বেতন খেয়ে ডাক্তার যদি অবৈধভাবে বিদেশে চলে যান, তাহলে আমাদের চিকিৎসা সেবা কে দেবে? ডা. দেবনাথের দীর্ঘ অনুপস্থিতি ইতোমধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসা সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
হাসপাতালের ভেতরে থাকা সক্রিয় দালালচক্র এখান থেকে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সরকারি বরাদ্দের খাবারও রোগীরা ঠিকভাবে পান না।
হাসপাতালের গেটের সামনে রয়েছে তিনটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অভিযোগ রয়েছে, যেকোনো টেস্টের সময় এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা রোগীদের হাত ধরে টানাটানি করে নিজেদের সেন্টারে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে রোগীরা বিব্রত ও চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
সম্প্রতি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্দেশে হাসপাতালের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী বদলি হয়েছেন। এতে স্বাস্থ্য সহকারী, দফতরি, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সংকট আরো তীব্র হয়েছে।
এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন দৌলতপুর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী অঞ্চলের মানুষও। কিন্তু চিকিৎসকের অভাব, পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা আর অনিয়মের কারণে তাদের অবস্থাও নাভিশ্বাস। শেষ পর্যন্ত অনেককে বাধ্য হয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাসপাতালে যেতে হয়, যা সময়, অর্থ ও কষ্ট তিনটিই বাড়িয়ে দেয়।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ডা. পলাশ চন্দ্র দেবনাথ (কোড নং- ১৩১৯০০) অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি জানিয়ে নতুন ডাক্তারের জন্য ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে একাধিককার আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালের অনিয়ম ও চিকিৎসক সংকট বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে চিকিৎসক সংকট একটি জাতীয় সমস্যা।” হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়েও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন. “ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। স্টাফদের অনিয়ম ও দুর্ব্যবহারের বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী