মেঘনা নদীতে পুলিশের ওপর চাঁদাবাজদের হামলা, আহত ৫
Published: 7th, October 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজির সময় অভিযান চালালে চাঁদাবাজরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। তিন পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে উপজেলার মেঘনা নদীর নুনেরটেক এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা করা হয়।
আরো পড়ুন:
একসঙ্গে ৫ সন্তানের জন্ম দিলেন লামিয়া
নরসিংদীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
বৈদ্যেরবাজার নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচাজ মাহাবুবুর রহমান জানান, দীর্ঘ দিন ধরে একটি চক্র মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছে। আজ মঙ্গলবার সকালে চাঁদাবাজরা বিভিন্ন বাল্কহেড থেকে টাকা তোলার সময় বাল্কহেডের শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে।
তিনি আরো জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে চাঁদাবাজরা পুলিশের উপর হামলা করে। তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। দুই চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার মেঘনা নদীতে দীর্ঘ দিন ধরে পাশ্ববর্তী কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার নলচর গ্রামের বারেকের নেতৃত্বে তার ছেলে মহসিন, হাসনাত, রানা, সাজ্জাদসহ ২০-৩০ জনের দল বালু ও মালবাহী বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছে। সকালে বিভিন্ন নৌযান নুনেরটেক এলাকায় মেঘনা নদী দিয়ে যাওয়ার পথে বারেকের নেতৃত্বে টিটু, মহসিনসহ তাদের লোকজন টেঁটা, বল্লম, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় মেসার্স আমানিল্লাহ বাল্কহেডের শ্রমিক মহিবুল্লাহ ও জাকারিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে।
খবর পেয়ে বৈদ্যেরবাজার নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা যৌথ অভিযান চালায়। তখন চাঁদাবাজরা পুলিশের উপর টেঁটা, বল্লম, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করলে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে বারেকের ছেলে রানা ও সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/অনিক/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত র ম ঘন উপজ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় নিশ্চিত করল ডিনেট
মৌলভীবাজারের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুশাসন ও সরকারি সেবার মান নিশ্চিতে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) একটি পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিনেটের (Dnet) উদ্যোগে এবং মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্থানীয় হোটেল রেস্ট ইনের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ সভার লক্ষ্য হলো—প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন, চাহিদা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন এবং সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য মূল সরকারি বিভাগ ও স্থানীয় অংশীদারদের সহযোগিতামূলক সমর্থন নিশ্চিত করা।
সভায় বিশেষ অতিথি এবং প্যানেল আলোচনা অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা)। তিনি বলেছেন, “মৌলভীবাজারে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। প্রথমত, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন, যা নিশ্চিত করবে যেন জনগণের বিকল্প কোনো পথের প্রয়োজন না হয়। দ্বিতীয়ত, চা শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া।”
২৭ মাসব্যাপী ‘নাগরিক সমন্বয়’ প্রকল্পটি সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার (জিএসি) আর্থিক সহায়তায় সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ডের (নাগরিকতা) অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ডিনেট চারটি স্থানীয় সহযোগী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সংস্থাগুলো হলো—কমলগঞ্জে জনকল্যাণ কেন্দ্র (জে কে কে), শ্রীমঙ্গলে প্রগতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (পিএসইউএস), কুলাউড়ায় নিঃস্ব সহায়ক সংস্থা (এনএসএস) এবং বড়লেখায় প্রচেষ্টা।
প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—মৌলভীবাজারের চার উপজেলা—বড়লেখা, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, যুব ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ক্লাইমেট জাস্টিস এবং সরকারি সেবার সমতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
সভার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—প্রকল্পের চাহিদা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করা। এই গবেষণামূলক তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি সেবার ঘাটতি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্ণিত করেছে, যা সবার মধ্যে একটি অভিন্ন বোঝাপড়া তৈরি করবে এবং প্রকল্পের অ্যাডভোকেসি কৌশল নির্ধারণে মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
সভায় উপস্থাপিত মূল গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজার জেলায় অর্থনৈতিক বৈষম্য বেশ প্রকট। চা শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশ এখনো মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার। সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পেতেও নাগরিকদের জটিলতা পোহাতে হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন যে, ভাতা পেতে তাদের ঘুষ (১০০ থেকে ৩০০ টাকা) দিতে হয়েছে। জলবায়ুগত ঝুঁকির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মতো উপজেলাগুলোতে ৬৪ শতাংশ নারী বন্যা ও ভূমিধসের মতো জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে তাদের আয়ের প্রধান উৎস হারিয়েছেন।
ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেছেন, “আগামী দুই বছরে আমাদের লক্ষ্য—মৌলভীবাজারে এমন কিছু সাফল্যের গল্প তৈরি করা, যা এই প্রকল্পের পরবর্তী ধাপের যাত্রাকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।”
নাগরিকতা ফান্ডের প্রতিনিধি ও জিএফএ কনসাল্টিং গ্রুপের লিড এক্সপার্ট– সিএসও সক্ষমতা উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কর্মকর্তা জনাব নুরুল ইসলাম বলেছেন, “নাগরিকতা কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের লক্ষ্য— ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৬ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছানো। তাই, আমরা চেষ্টা করছি এই কর্মসূচি ভৌগোলিক ও জনমিতিকভাবে সকল শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে।”
নাগরিক সমন্বয়ের প্রকল্প পরিচালক আসিফ আহমেদ তন্ময় সভা পরিচালনা করেন।
ঢাকা/আজিজ/রফিক