সংস্কার আটকে গেলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হবে: এনসিপি নেতা আখতার
Published: 9th, November 2025 GMT
পুরোনো ব্যবস্থা বদলাতে সংবিধান সংস্কারে জোর দিচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তা না হলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদের মধ্যে আজ রোববার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেন আখতার হোসেন। এনসিপি–সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স অ্যালায়েন্স (এনএলএ) আয়োজিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পথরেখা’ শিরোনামের এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
আখতার হোসেন বলেন, সংস্কারের জায়গায় কোনো বাধা তৈরি হলে, সংস্কার না হওয়ার কারণে সরকারের ‘এক্সিট পয়েন্ট’ কী হবে, আর সামনে নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশার জায়গা তৈরি হবে। সেই ধোঁয়াশার জায়গা যেন সরকারের তরফে বা সরকারের ভেতরে কোনো শক্তি করার চেষ্টা না করেন।
পুরোনো ব্যবস্থার সবকিছু পরিবর্তন করা না গেলেও যতটুকু অর্জন করা গেছে জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে, ততটুকুও যদি বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে এত মানুষের জীবন দেওয়া, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার জায়গায় ‘গুড়ে বালি’ পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পুরোনো সংবিধানের ফাঁদে পড়ে সব আশা–আকাঙ্ক্ষাকে, পরিবর্তনের লক্ষ্যকে জলাঞ্জলি দেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে আখতার হোসেন বলেন, ‘এই সংবিধানের ততটুকুই কার্যকর আছে, যতটুকু বিপ্লব–পরবর্তী বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন। এর অতিরিক্ত কোনো কিছু এই সংবিধানে আর কার্যকর নেই।’
সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে অনুরোধ
সংস্কারের বিষয়বস্তু রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে ঠেলে না দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
আখতার হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ–আলোচনা করেছে, ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে রাজনৈতিক সংকট নিরসন করে জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জমা দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ বিষয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। তবে সেই আহ্বানে সাড়া মেলেনি। গণভোটের সময় প্রশ্ন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত অবস্থান নিয়ে আছে।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘বিষয়টা হওয়ার কথা ছিল এটাই যে এনসিপি, বিএনপি, জামায়াত, সব পক্ষ, সরকার, ঐকমত্য কমিশন—আমরা সবাই মিলে পুরোনো যে ব্যবস্থা, পুরোনো যে দল, তাদেরকে আমরা গোল দেব। কিন্তু বিএনপি ওই পুরোনো দলে জয়েন করে নিজেরা গোল খাওয়ার বেদনা নিয়ে এখন ঘুরছে।’
এই প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘আপনারা যে ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন, সেই ম্যান্ডেটের অন্যথা আপনারা করবেন না। জনগণের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ আপনারা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রহণ করেছেন, সেটা আমরা দেখতে চাই।’
আরও পড়ুনআলোচনা ছেড়ে দলগুলো রাজপথে, নভেম্বর কি উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “৩১ দফার মধ্যে সংস্কারের সম্পূর্ণ একটা রূপরেখা আছে। তো তারা সংস্কার চাক, আর না চাক। বলুক, আর না বলুক। আমরা সবাই মিলে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলাম, আমরা কিন্তু আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। ওই কমিশন কী বলে, ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো, এটাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।”
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি কামাল হোসেন।
তিনি অসুস্থ থাকায় তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে খসরু বলেন, “অন্য কারও (রাজনৈতিক দল) যদি কিছু থাকে, তারাও জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারে।...ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসেন। সংসদে আপনি পরিবর্তন করেন, এটাই তো নিয়ম। কিন্তু আপনি জোর করে ঢাকা শহরে বসে, আপনার দাবি মানতে হবে, এটার জন্য আবার ঐকমত্য কমিশনকে ব্যবহার করবেন, অথবা সরকারের ব্লেসিং (আশীর্বাদ) নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটার জন্য তো বাংলাদেশের মানুষ এত ত্যাগ স্বীকার করেনি।”
গণভোট বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থী উল্লেখ করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, “এই সংবিধানে গণভোটের কোনো প্রভিশন (অনুমতি/বিধান) নেই, ক্লিয়ারলি (পরিষ্কার)। আপনার যদি গণভোট করতে হয়, তাহলে এই সংবিধান পরিবর্তন করে গণভোটের প্রভিশন আগে আনতে হবে। তাহলে এই পরিবর্তনটা আপনাকে কোথায় করতে হবে? সংসদে করতে হবে এবং সংসদ হচ্ছে জনগণের রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রতিনিধি)।”
তিনি বলেন, “বিএনপি দেশে সহনশীলতা ও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রেক্ষাপটে এই গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে, তা–ও নির্বাচনের দিন। কিন্তু আসলে নির্বাচনের দিনও তো গণভোট হতে পারে না। এটা তো বিএনপির উদারতা এবং এই উদারতাটা দেখানো বিএনপির ঠিক হয়নি। কারণ, এটা সাংবিধানিকভাবে কারেক্ট (সঠিক) না। এটা নৈতিকভাবে কারেক্ট না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কারেক্ট না যে উদাহরণটা দেখিয়েছে, এটার জন্য আজকে আমরা সমস্যা ফেস করতেছি।”
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নারী পক্ষের সভাপতি শিরীন হক প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ