ফরিদপুরে চুরির অভিযোগে তিন তরুণের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ
Published: 7th, October 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌর এলাকার মীরাকান্দায় চুরির অভিযোগে তিন তরুণের মাথার চুল কেটে দিয়েছে গ্রামবাসী। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার তিন মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, তিন যুবককে পাশাপাশি বসিয়ে কাঁচি দিয়ে এবড়োখেবড়োভাবে তাঁদের মাথার চুল কেটে ফেলা হচ্ছে। পাশে বসে ও দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন এ দৃশ্য উপভোগ করছেন এবং অনেককে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সৌদি আরবপ্রবাসী জুয়েল মাতুব্বরের মীরাকান্দা গ্রামের বাড়িতে ৫ থেকে ৭ জন যুবক প্রবেশ করে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে কাঁচি ধরে জিম্মি করে ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুটে নেন। পরদিন শনিবার থানায় অভিযোগ করেন জুয়েলের ছোট ভাই রুবেল মাতুব্বর। অভিযোগের পর রুবেল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে সন্দেহভাজনদের খোঁজে নামেন।
গত সোমবার দিবাগত রাতে গাংজগদিয়া গ্রাম থেকে মোশাররফের ছেলে বরকতকে (২৫) ধরে ফেলেন তাঁরা। বরকতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শলিথা গ্রামের খোরশেদ মাতুব্বরের ছেলে এনামুল (২৩) ও ফুলসুতি গ্রামের সেলিম মাতুব্বরের ছেলে আকাশকে (২২) আটক করা হয়। পরে আজ মঙ্গলবার সকালে রুবেল মাতুব্বরের বাড়ির প্রাঙ্গণে স্থানীয় গ্রামবাসী তাঁদের মাথার চুল কেটে দেন।
প্রবাসীর স্ত্রী তামান্না বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন গভীর রাতে তাঁরা ঘরে ঢুকে চুরি করছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে আমি তাদের দেখি। তখন তারা ঘরে থাকা কাঁচি দিয়ে আমার শিশুসন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে স্বর্ণালংকার, রুপা, টাকা, মুঠোফোন ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়। সন্তানের কথা ভেবে আমি চিৎকার করতে পারিনি।’
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, এ ঘটনায় আজ দস্যুতার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন রুবেল মাতুব্বর। মামলায় তিন তরুণকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শনিবার অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সেদিন রুবেল মাতুব্বর মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলেন, লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি।
তিন তরুণের মাথার চুল কেটে দেওয়ার বিষয়ে ওসি রেজাউল করিম বলেন, এখানে আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আইন নিজের হাতে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ওই তিন তরুণের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে সেটিও গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব ল ম ত ব বর ত ন তর ণ র ম ত ব বর র
এছাড়াও পড়ুন:
‘অভিনন্দন জসিম মাতুব্বর, এটি আপনার এনআইডি নম্বর’
জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) জন্য তিন বছর ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন ফরিদপুরের জসিম মাতুব্বর (২৬)। কিন্তু জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় আঙুলের ছাপ দিতে পারছিলেন না তিনি। তাই তাঁকে দেওয়া যাচ্ছিল না এনআইডি। নানা চেষ্টা করেও এনআইডি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জসিম।
অবশেষে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামের এই তরুণের দীর্ঘ অপেক্ষা ও ভোগান্তির অবসান হলো। তিনি পেলেন নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র। আজ রোববার বেলা ৩টা ২০ মিনিটে তাঁর মুঠোফোনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বার্তা এসেছে। এতে লেখা ‘অভিনন্দন জসিম মাতুব্বর, এটি আপনার এনআইডি নম্বর।’
দুই হাত না থাকায় পা দিয়ে লিখে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন জসিম। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে জসিম বড়। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি হাটে সবজি ও ফল বিক্রি করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালান।
জসিমের জীবনে বড় বাধা ছিল এনআইডি না থাকা। এনআইডি না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তিনি।
বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন এগিয়ে আসেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনওর উদ্যোগে জসিমকে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর পায়ের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ সংগ্রহ করা হয়। ইউএনওর সুপারিশসহ তথ্য পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এনআইডি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
ইউএনও দবির উদ্দিন বলেন, ‘জসিমের জীবনের গল্প জানার পর খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। হাত না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের যোগ্যতায় এসএসসি, এইচএসসি পাস করেছেন। তাঁর মতো একজন মেধাবী তরুণ শুধু এনআইডি না থাকার কারণে যেন পিছিয়ে না পড়েন, সেটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছি। নির্বাচন কমিশনের দ্রুত পদক্ষেপে আজ তিনি এনআইডি পেয়েছেন। এটি আমাদের সবার জন্য আনন্দের।’ তিনি আরও জানান, আগামীকাল সোমবার সকালে প্রিন্ট করা এনআইডিটি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এনআইডি পাওয়ার পর আবেগাপ্লুত জসিম মাতুব্বর বলেন, ‘জন্ম থেকে দুই হাত না থাকার কারণে অনেক কষ্ট করেছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও পরিচয়পত্র পাইনি। পড়াশোনা, ফরম পূরণ, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া—সব জায়গায় বাধা আসত। আজ নিজের এনআইডি পাওয়ায় মনে হচ্ছে, জীবনের বড় একটা অর্জন হলো।’