রাজশাহীতে হিমাগারে নারী ও কিশোরীকে পিন ফুটিয়ে নির্যাতন
Published: 7th, October 2025 GMT
রাজশাহীর একটি হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা ওই হিমাগারের অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ডস্টোরেজের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ওই হিমাগারের মালিক রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার ওরফে জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। এর আগে পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
ভুক্তভোগীদের বাড়ি পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর নারী (৩০) ও কিশোরী (১৩) ওই তরুণের খালাতো বোন। তাঁদের নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হিমাগারের অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে শিশুসন্তান দেখা যায়। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তাঁর কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আহত মেডিকেল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম দেখা যায়। পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর ওই কিশোরীর ঠোঁটে রক্ত দেখা যায়।
নির্যাতনের শিকার নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তাঁর ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাঁদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাঁর (ওই নারী) অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ওই নারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তাঁর খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাঁদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিসকক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁরা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। ওই কিশোরীর দাবি, তাঁকে ও তাঁর খালাতো বোনকে মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে সারা শরীরে সেফটি পিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করেছেন।
এ ঘটনা জানাজানি হলে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলেমেয়েদের অবরুদ্ধ করে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাঁদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর দুইটার দিকে স্থানীয়রা অফিসকক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বান্দরবানের লামায় চাঁদাবাজির অভিযোগে এক কিশোরসহ তিনজন গ্রেপ্তার
বান্দরবানে লামা উপজেলার সরইয়ে গতকাল শনিবার রাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয় লোকজন এক কিশোরসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশের হস্তান্তর করেছে।
এলাকার লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা গভীর রাতে এলাকায় গিয়ে একটি পরিবার থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। তিনজনই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন বলে আজ রোববার পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে চারজন তরুণ লামা-সুয়ালক সড়কের তংগোঝিরি ত্রিপুরাপাড়ায় যান। পাড়ায় বাগানের মালিক মাসাইয়া ত্রিপুরার কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ধরে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দেন। এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তিনজনকে আটক করেন এবং একজন পালিয়ে যান। আটকেরা হলেন বান্দরবান সদর ইউনিয়নের উজিমুখ হেডম্যাপাড়ার চ হ্রী মারমার ছেলে বুইক্য মারমা (৩৬), আলীকদমের রেফারফাড়ি এলাকার মেনওয়াই ম্রোর ছেলে মেনয়ুক ম্রো (৩৫) ও রাঙামাটি কাপ্তাইয়ের ১৪ বছরের এক কিশোর।
তংগোঝিরিপাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) হানাসিং ত্রিপুরা জানিয়েছেন, পাড়ার মাসাইয়া ত্রিপুরা থেকে প্রথমে এক লাখ এবং পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারলে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তাঁরা। এরপর এলাকার পাহাড়ি-বাঙালি মিলে তিনজনকে আটক করলেও একজন পালিয়ে যায়।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, মাসাইয়া ত্রিপুরা বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। তিনজনই নিজেদের ইউপিডিএফের সদস্য পরিচয় দিয়েছেন। তবে মূল ইউপিডিএফ নাকি ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক তাঁরা বলেননি। তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।