টাঙ্গাইলে ব্রিজের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন, লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি
Published: 8th, October 2025 GMT
টাঙ্গাইলের সদর উপজেলায় চারাবাড়ি এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক ধসে গিয়ে পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ব্রিজের পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কাতুলী, হুগড়া, কাকুয়া, মাহমুদ নগর ও নাগরপুরের ভাড়রা ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর ওপর চারাবাড়িঘাটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিগত ২০০৬ সালে ১৭০.
এলাকাবাসী জানায়, গুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজ দিয়ে চরাঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। এছাড়া মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন অফিস আদালতে যাতায়াতেও ব্যাঘাত ঘটছে।
এদিকে চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য, তাঁত শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা-নেওয়া করতে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক, অটোভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে থাকে এই ব্রিজের উপর দিয়ে।
সিএনজি চালিত অটো রিকশার চালক আব্দুল হাই ও খোরশেদ আলম বলেন, “আজকে ভোরে যাত্রী নিয়ে এসে দেখলাম ভেঙে গেছে। পরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ভাঙনের দৃশ্য দেখতেছি। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না।”
কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুমন দেওয়ান বলেন, “নদীর পানির চাপ বেড়ে পশ্চিম পাশের অ্যাপ্রোচসহ সংযোগ সড়ক ও কয়েকটি বাড়িতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ব্রিজ ভেঙে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে।”
সদর উপজেলার এলজিইডি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সদর উপজেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আজকের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/কাওছার/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে আর কোনো মেয়ে যেন মাসিক নিয়ে ভয়ের মধ্যে না থাকে
দৃঢ় মনোবল আর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো বাধা পেরোনোই কঠিন নয়। দরকার ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রম। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের জীবনগাথায় লিখে চলেছেন অদম্য জয়ের গল্প। তাঁদের সেই সাফল্য ব্যক্তিগত অর্জনের সীমানা পেরিয়ে সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। তেমনই কয়েকজনের গল্প নিয়ে ধারাবাহিক এ আয়োজন। আজ জানব নেত্রকোনার কলমাকান্দা অঞ্চলের গারো সম্প্রদায়ের বাসিন্দা রিশা তাড়ি ঘাগরার জীবন–গল্প।
আমি রিশা তাড়ি ঘাগরা। বেড়ে উঠেছি নেত্রকোনায়, কলমাকান্দা অঞ্চলের গারো সম্প্রদায়ে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমার প্রথম পিরিয়ড বা মাসিক হয়। ওই বয়সে বুঝে উঠতে পারিনি—মাসিক মেয়েদের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যদিও আমার মা আমাকে এই বিষয়ে অবহিত করেছিল। কিন্তু হোস্টেলে থাকা অবস্থায় আমাকে কেউ বলেনি যে মাসিক কী? কিংবা মাসিক হলে কী করতে হয়।
সত্যি বলতে, সেই সময় আমার চারপাশের পরিবেশ বা আত্মীয়স্বজনেরা এই বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতেন না। তাই আমার প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। হোস্টেলের বড় আপুদের সহযোগিতায় আমি কিছুটা সামলাতে পেরেছিলাম। কিন্তু ট্রমা কাটতে অনেক সময় লেগেছে।
এখনো কিন্তু আমাদের দেশে মাসিক নিয়ে সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা পরিবারে প্রকাশ্যে কথা বলা হয় না। বিশেষ করে গ্রামে অনেকেই ভাবেন, মাসিক হচ্ছে মেয়েদের একটা অসুখ। আমি এখন কর্মসূত্রে বরগুনার পাথরঘাটায় থাকি, ব্র্যাকের ওয়াশ (WASH) প্রোগ্রামে কাজ করি। আমি স্কুল এবং মাদ্রাসায় মেয়েশিক্ষার্থীদের মাসিক নিয়ে সচেতন করতে গিয়ে এমন অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই।
বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষকেরা খোলাখুলি কথা বলতে চান না, ভাবেন মাসিক বা পিরিয়ড একটা ‘মেয়েলি রোগ’। এটি যে একটি মেয়ের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়—তা উপলব্ধি করতে পারেন না। আমার সঙ্গে অধিকাংশ সময় সংকোচ নিয়ে কথা বলেন। অনেক সময় নারী–শিক্ষকের মাধ্যমে কথা বলেন। এসব আচরণের মাধ্যমে আমি বুঝতে পারি, আমাদের সাধারণ সমাজব্যবস্থায় এখনো মেয়েদের মাসিক নিয়ে অনেক কুসংস্কার বা ভুল ধারণা আছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাসিকবান্ধব না হলে নারীশিক্ষার কত বড় ক্ষতি হয়—তা এখনো বুঝে উঠতে পারে না অনেকেই। আমার শৈশবের ভয়াবহ স্মৃতি আমাকে এই সচেতনতামূলক কাজে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। আমি যখন এই কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করি, কৈশোরের স্মৃতি আমাকে উৎসাহিত করে। আমি জানি, মাসিকের সময় একটি মেয়ের শরীর আর মনে কী ধরনের পরিবর্তন আসে। ভীতি কীভাবে কাজ করে। শহুরে তরুণীরা কিছুটা সচেতন হলেও এখনো গ্রামের কিশোরী–শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ততটা সচেতন নয়।
কাজের শুরুতে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। প্রথমত, আমি গারো সম্প্রদায়ের বলে অনেকেই আমাকে সহজভাবে গ্রহণ করেনি। একটু দ্বিধা ছিল। আমার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করত। ছাত্রীদের সচেতনতার জন্য সেশনের অনুমতি নিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। দিনের পর দিন অনুমতির অপেক্ষা করেছি। অনেকভাবে অপমানিত হয়েছি কিন্তু দমে যাইনি। ধৈর্য আমাকে ফলাফল দিয়েছে। আমি যখন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাসিক নিয়ে কথা বলি, করণীয় বিষয় সম্পর্কে সহজ করে বোঝাই, তখন শিক্ষক বা স্কুল কমিটি বুঝতে পারে এর গুরুত্ব। বিশেষ করে নারী শিক্ষকেরা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। কারণ, তাঁদের সময় কেউ এ রকমভাবে সচেতন করেনি।
স্কুলের সীমানা পেরিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাসিক নিয়ে মা-মেয়ের খোঁজ নেন রিশা তাড়ি ঘাগরা