টাঙ্গাইলের সদর উপজেলায় চারাবাড়ি এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক ধসে গিয়ে পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ব্রিজের পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কাতুলী, হুগড়া, কাকুয়া, মাহমুদ নগর ও নাগরপুরের ভাড়রা ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর ওপর চারাবাড়িঘাটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিগত ২০০৬ সালে ১৭০.

৬৪২ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণ করে। নির্মাণের পর থেকেই কয়েকবার পূর্ব ও পশ্চিম তীরের অ্যাপ্রোচ সড়ক ধসে যায়। সর্বশেষ গত বছরের ১০ জুলাইও ব্রিজের পশ্চিম পাশে অ্যাপ্রোচ ভেঙে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, গুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজ দিয়ে চরাঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। এছাড়া মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন অফিস আদালতে যাতায়াতেও ব্যাঘাত ঘটছে।

এদিকে চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য, তাঁত শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা-নেওয়া করতে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক, অটোভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে থাকে এই ব্রিজের উপর দিয়ে।

সিএনজি চালিত অটো রিকশার চালক আব্দুল হাই ও খোরশেদ আলম বলেন, “আজকে ভোরে যাত্রী নিয়ে এসে দেখলাম ভেঙে গেছে। পরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ভাঙনের দৃশ্য দেখতেছি। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না।”

কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুমন দেওয়ান বলেন, “নদীর পানির চাপ বেড়ে পশ্চিম পাশের অ্যাপ্রোচসহ সংযোগ সড়ক ও কয়েকটি বাড়িতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ব্রিজ ভেঙে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে।”

সদর উপজেলার এলজিইডি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সদর উপজেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আজকের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/কাওছার/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপত্তা ও আবাসন সংকটের সমাধান চান শিক্ষার্থীরা

ট্রেন ছাড়তে তখনো ঘণ্টাখানেক বাকি। ঘড়ির কাঁটা একটার ঘর ছুঁয়েছে। স্টেশনে শিক্ষার্থীদের জটলা। ভেসে আসছে ‘গম্ভীরার’ সুর। সেই সুরে সুরে চলছিল চাকসুর প্রার্থীদের প্রচারণা। চারপাশে দাঁড়িয়ে কেউ তা মুঠোফোনে বন্দী করছিলেন, কেউ তুলছিলেন ছবি।

গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রেলস্টেশনে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ল। জটলার ভেতর দাঁড়িয়ে গম্ভীরার দুই চরিত্র ‘নানা-নাতির’ গান শুনে হাততালি দিচ্ছিলেন সামিয়া মুনতাহা। এক ফাঁকে জানালেন, তিনি সংগীত বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। গম্ভীরার সুরে এমন অভিনব প্রচারণা দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত।

সামিয়ার সঙ্গে কথায় কথায় নানা প্রসঙ্গ এল। চাকসুতে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের কাছে প্রত্যাশা কী—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। সামিয়া বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে এখনো উদ্বেগ রয়েছে। নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ ছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হলো, আবাসনসংকট। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই হলের বাইরে থাকতে হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ দুই বিষয় নিয়ে প্রথমেই কাজ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা।

আর মাত্র ছয় দিন পরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ১৫ অক্টোবর নির্বাচন হচ্ছে। এবার প্রার্থী হয়েছেন ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী। নানাভাবে প্রচারণা করে তাঁরা ভোটারদের মন জয় করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে এখন শুধু একটাই আলোচনা—চাকসু নির্বাচন।

সামিয়া মুনতাহার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন শাটল ট্রেন স্টেশনেই দাঁড়ানো। ট্রেন থেকে নেমে এলেন আরেক শিক্ষার্থী—জেরিন শুভা। ফিন্যান্স বিভাগের এ শিক্ষার্থী বললেন, ‘সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে আরও বেশি শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। আমরা চাই চাকসুতে নির্বাচিত হয়ে আসা প্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছ থেকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ আদায় করে নেবেন।’

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের প্রসঙ্গটি নতুন নয়। গত এক দশক ক্যাম্পাস ছিল ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ‘হাতের মুঠোয়’। সংগঠনটির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত। এর প্রভাবে অবরোধ, ধর্মঘটে বন্ধ থাকত ক্লাস–পরীক্ষা। যার ক্ষতি বহন করতে হতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

ছাত্রলীগের আধিপত্যের পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যও ছিল। শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের ক্যাম্পাসটি সবুজ পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত। শিক্ষার্থীরা সময় পেলেই পাহাড়ে ঢুঁ মারেন। দল বেঁধে চলে যান ক্যাম্পাস থেকে কয়েক কিলোমিটার গহিনের চালন্দা গিরিপথে। কিন্তু সেখানে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগের দাপট আর নেই। তবে ছিনতাইকারীর ভয় কেটে গেছে—এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারলেন না ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয় চাকমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসের পাহাড়গুলোতে যেতে এখনো ভয় হয়। নিরাপত্তাকর্মী আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রার্থী-ভোটারের মিলনমেলা

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়ি সব সময় জমজমাট থাকে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে ঝুপড়ির চায়ের দোকানে বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন। আবার কেউ কেউ ক্লাসে যাওয়ার আগে এখানেই সারেন নাশতা। এখানকার কোনো টেবিলে বসে মেতে ওঠেন গানে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে চায়ের দোকানে বসে কেউ শিঙাড়ায় কামড় বসাচ্ছিলেন। কারও হাতে ছিল ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। প্রার্থীরা একের পর এক আসছেন। প্রচারপত্র দিচ্ছেন। ভোট চাইছেন। এসব নিয়েই চলছিল কথাবার্তা।

ঝুপড়িতে পাওয়া গেল সমাজতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তৃণা দাশ ও আঞ্জলী ধরকে। তৃণা থাকেন চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায়। আর আঞ্জলীর বাসা অলংকারে। চাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গে বললেন, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবহনসংকট। শাটলে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে হয়। বগির সংকট রয়েছে। চাকসুর আগামী দিনের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

দুই ছাত্রীর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন প্রচারণা চালাতে এসেছিলেন চাকসুর স্বতন্ত্র ভিপি (সহসভাপতি) পদপ্রার্থী মো. মাহফুজুর রহমান। ভোট চাওয়ার পর তাঁর কাছে ইশতেহার চান ওই দুই ছাত্রী। পরে তিনি নিজের ইশতেহারও তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা সমাধানসহ নানা বিষয়।

গতকাল ওই ঝুপড়িতে আড্ডারত আরও ১০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো এ প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেছেন, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কার্যক্রম, অতীত ইতিহাস ও বর্তমান কার্যক্রম তাঁরা বিবেচনায় নিচ্ছেন। পাশাপাশি ইশতেহারে কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, তা–ও দেখছেন তাঁরা।

বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চাকসুর নেতারা শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবেন, কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন না, এমনটাই প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীরা আর লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি দেখতে চান না। প্রার্থীদের এটি মনে রাখতে হবে।

ক্যাম্পাসের আরেকটি ‘জনপ্রিয়’ জায়গা হলো সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ঝুপড়ি। গতকাল দুপুর ১২টায় ওই ঝুপড়িতে গিয়ে চোখে পড়ল লোকসমাগম। ক্লাসের বিরতিতে আড্ডায় মশগুল ছিলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন অনিন্দিতা চাকমা ও মনীষা তঞ্চঙ্গ্যা। তাঁদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারপত্র। অনিন্দিতা বলেন, ‘গ্রামবাসীর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনার পর পরিবেশ কিছুটা ভীতিকর হয়েছে। এখন রাতে ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করতে অস্বস্তি লাগে। তাই দ্রুত হলে ঢুকে যাই।’

ইশতেহারে আগ্রহ সবার

এবারের চাকসু নির্বাচনের মোট ভোটার প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন, ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচনে লড়তে ১৩টি প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্যানেল ইতিমধ্যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে। তবে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল এখনো তাদের ইশতেহার দেয়নি। আজ বুধবার ছাত্রশিবিরসহ বেশ কয়েকটি প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণার কথা রয়েছে।

অবশ্য সম্প্রতি ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব ‘ইস্যু’ আলোচিত, প্যানেলটির ইশতেহারে মোটাদাগে সেসব বিষয়ই জায়গা পেয়েছে। তারা সাতটি দফা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে পরিবহন, স্বাস্থ্য খাত, আবাসন ও খাদ্য, প্রশাসনিক খাত, গবেষণা ও একাডেমিক খাত, নিরাপদ ও সবুজ ক্যাম্পাস উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘রেভল্যুশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ ও ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামের দুটি প্যানেল।

নির্বাচনী আমেজ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রার্থীদের প্রচারণা নিয়ে কথা হয় রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হওয়ায় ভবিষ্যৎ চাকসু নেতাদের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বেশি থাকবে। যদিও নিরাপত্তা দেওয়া ও আবাসনসংকটের সমাধান করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তবে ভবিষ্যৎ নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা বা দর-কষাকষি করে এসব দাবি আদায় করে নিতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ