সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা ৪৮ ক্লাবের
Published: 8th, October 2025 GMT
বিসিবি নির্বাচন স্থগিত না করা ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করায় সব ধরনের ক্রিকেট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকার ৪৮টি ক্লাব। বুধবার (০৮ অক্টোবর) রাজধানীর এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্লাবগুলো।
বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পর তামিম ইকবাল আড়ালে ছিলেন। আজকের সংবাদ সম্মেলনে তিনিও হাজির হয়ে লিগ বর্জনের সিদ্ধান্তে একাত্মতা জানিয়েছেন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা মাসুদুজ্জামান বলেছেন, ‘‘আমরা একই কথা বারবার বলে ক্লান্ত। আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে ৬ তারিখের বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে। এই বয়সে আমরা বহু বিতর্কিত নির্বাচন দেখেছি, রাতের ভোট এবং দিনে কারচুপি দেখেছি। সব কিছুকে ছাপিয়ে সবার সামনেই এবারের ভোট হলো। আমরা সুষ্ঠু ভোট চেয়েছিলাম। আমাদের কথা যেহেতু তাদের কানে পৌঁছায়নি, সেজন্য আমরা আসন্ন সব প্রতিযোগিতা বর্জন করব।’’
আরো পড়ুন:
বিসিবির পরিচালক নির্বাচনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ
সর্বসম্মতিক্রমে বিসিবি সভাপতি আমিনুল
তিনি আরও বলেন, ‘‘সামনে ফেডারেশন ক্রিকেট লিগ আছে, সেখান থেকে যাবতীয় দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ আছে, দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ থেকে প্রথম বিভাগ, প্রিমিয়ার ডিভিশন আমরা যে সব ক্লাব আছি ভেবেছিলাম অংশ নেব। আজ থেকে আমরা বলতে চাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য হারিয়েছে। আপনারা যদি এভাবে চালাতে চান আমরা ক্রিকেট খেলব না। আপনারা যারা ক্লাব প্রতিনিধি আছেন কাউকে যদি হুমকি দেয়া হয়, ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলা হয় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আপাতত ক্রিকেট বন্ধ থাকবে। আমরা ঘোষণা দিচ্ছি।’’
এদিকে সমঝোতার সঙ্গে একমত ছিলেন না দেখেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তামিম। স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ী হতেন বলে বিশ্বাস তার। কিন্তু নির্বাচনের মারপ্যাঁচ এতোটা খারাপ হবে ভাবেননি।
তামিম বলেন, ‘‘সমঝোতার সঙ্গে আমরা একমত ছিলাম না দেখেই তো আমরা বের হয়ে এসেছি। কিছু কিছু জিনিস আমাদের দিক থেকে এতটুকুই থাকুক। এটা নিয়ে পাবলিকলি আলোচনা করি এটা ঠিক না। প্রথম দিন থেকেই অবস্থান একই ছিল। ঠিক এ কারণেই এখান থেকে সরে আসা।’’
তামিম আরও যোগ করেন, ‘‘আমি এটা গ্যারেন্টি দিয়ে বললাম। আমি স্বতন্ত্র হিসেবে যদি দাঁড়াতাম আমার পক্ষে কোন টিম আছে, আমার বিপক্ষে কোন টিম আছে; তারপরও আমি সহজেই পাশ করতাম। এটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ ছিল না।’’
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোট অপ্রয়োজনীয়, তবে এরপরও যদি হয়...
ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ১৫ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে। কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের কথায় এটা স্পষ্ট যে তাঁরা আর এর মেয়াদ বাড়াতে চান না। এর আগেই জুলাই সনদের কাজটি তাঁরা সারতে চান। আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক আছে। বলা হচ্ছে, এই বৈঠকেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে।
এরই মধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। কিন্তু এই গণভোটের প্রক্রিয়া বা গণভোট কবে হবে; জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন, নাকি আগে—এসব বিষয়ের সুরাহা হয়নি।
সবচেয়ে বড় কথা, গণভোট আয়োজনের সাংবিধানিক ও আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো যদিও গণভোটের ব্যাপারে একমত হয়েছে, কিন্তু এর আদৌ কোনো দরকার আছে কি না, সেই আলোচনাও আছে।
আরও পড়ুনসংসদ, পরিষদ না গণভোট— কোন পথে যাবে দেশ২০ আগস্ট ২০২৫প্রস্তাবিত জুলাই সনদের অনেক ইস্যুতে সব পক্ষ একমত হয়েছে, আবার কিছু ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত রয়েছে। কমিশন সেই বিবেচনা থেকে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবিত বিষয়গুলো দুই ভাগে ভাগ করে গণভোট করতে আগ্রহী। কিন্তু এই ধারণা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত?
ঐকমত্য কমিশন সূত্রে আমরা জানি যে রাজনৈতিক দলগুলোর ৯টি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে। এখন এই সব কটি বিষয় গণভোটের এক ভাগে রাখা হলে জনগণ এর ওপর মত দেবে কীভাবে? এই বিষয়গুলোর মধ্যে কেউ কিছু বিষয়ে একমত হতে পারে, আবার অনেকগুলোতে না–ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী হবে?
উদাহরণ দিয়ে বলি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বা সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন—এ ধরনের বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত আছে। এখন একজন ভোটার হয়তো দুটি বিষয়ে একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থানের সঙ্গে একমত আর বাকিগুলোর ক্ষেত্রে নন। এই ভোটারের মত গণভোটে কীভাবে প্রতিফলিত হবে?
বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনটি গণভোটের নজির আছে। একটি ১৯৭৭ সালে। এর মাধ্যমে পঁচাত্তর–পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জিয়াউর রহমান জনগণের মধ্যে তাঁর আস্থা এবং ক্ষমতায় থাকার বৈধতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৯৮৫ সালে সামরিক শাসক এরশাদ তাঁর ক্ষমতার বৈধতা প্রমাণ করতে গণভোটের আয়োজন করেছিলেন। সর্বশেষ গণভোট হয়েছিল ১৯৯১ সালে। রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব সংসদে পাস হওয়ার পর জনগণ তা গ্রহণ করছেন কি না, তা যাচাইয়ের জন্য গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল।
গণভোট অনুষ্ঠিত হয় একটিমাত্র প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে। উত্তর হতে হবে, ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’। বাংলাদেশের অতীতের তিনটি গণভোটও একটি প্রশ্নের ওপরই হয়েছে। গণভোটের মাধ্যমে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ থাকে না।
বাংলাদেশের অতীত তিনটি গণভোট বিবেচনায় নিলে জুলাই সনদের জন্য আদৌ কোনো গণভোটের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সংবিধান সংশোধনের যে বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন বা বিতর্ক নেই।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের সাংবিধানিক ও আইনি চ্যালেঞ্জগুলো কী০৬ অক্টোবর ২০২৫যে ইস্যুগুলোতে বিতর্ক আছে, সেগুলোর জন্যও গণভোটের দরকার পড়ে না। কারণ, ওই ইস্যুগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা আছে। এর ওপর ভিত্তি করেই জনগণ জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোকে ভোট দেবে। সুতরাং জাতীয় নির্বাচনই আসলে একধরনের গণভোট।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করি, যেমন বিএনপি চায় প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকুক (একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান)। জামায়াত বা এনসিপি তা চায় না। এখন এ বিষয়ে একজন ভোটারের যা অবস্থান, সে অনুযায়ী তিনি তাঁর দল বেছে নেবেন। আবার রাষ্ট্রের মূলনীতির ক্ষেত্রে কোন দল কী চায়, তা–ও সব দল পরিষ্কার করেছে।
যে দলটির ঘোষিত রাষ্ট্রের মূলনীতি একজন ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, সেই দলকেই তিনি ভোট দেবেন। সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে জুলাই সনদের যে ইস্যুগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত আছে, সেই প্রশ্নে গণভোট এই বিবেচনায় তাই অর্থহীন।
শেখ হাসিনার আমলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। তবে পরে পঞ্চদশ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলার রায়ে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংশোধনীতে বাদ দেওয়া গণভোট–সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনরায় বহাল করা হয়।তবে গণভোট যেহেতু সংসদে পাস হওয়া আইন বা রাজনৈতিক ঐকমত্যকে শক্তি জোগায়, তাই গণভোট যদি করতেই হয়, তবে তা হওয়া উচিত জাতীয় নির্বাচনের পর। নির্বাচিত সরকার সংসদে গিয়ে জুলাই সনদের সব দলের একমত হওয়া বিষয় এবং নিজ দলের নোট অব ডিসেন্টের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে তা রাষ্ট্রপতির সইয়ের জন্য পাঠানোর আগে একটি গণভোট আয়োজন করতে পারে।
এখন জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু একমত হয়েছে, তাতে এটা ধরে নিতে হচ্ছে যে গণভোট একটা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কী এবং কেমন হওয়া উচিত এই গণভোট? খরচের কথা বিবেচনা করে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে তা হতে পারে। আর গণভোটটি হওয়া উচিত জুলাই সনদের যে বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, তার ওপর এবং একটি প্রশ্নের ভিত্তিতে। প্রশ্নটির মূল বিষয় হবে জুলাই সনদ গ্রহণ করা বা না করার বিষয়ে। ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’–এর মাধ্যমে যার উত্তর দেওয়া যাবে।
আগেই বলেছি, সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেওয়ার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত নিয়ে গণভোটের কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর এসব ভিন্নমতকে দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে দেখতে হবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই জনগণ তাঁর দল বাছাই করবেন। নির্বাচিত দল তার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বিবেচনায় নিয়ে সংবিধান সংশোধন করবে। কারণ, কোনো দলের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া মানে তার অবস্থানের পক্ষেই জনগণ সমর্থন জানিয়েছে।
এবার আসি গণভোটের সাংবিধানিক ও আইনগত কিছু প্রশ্ন নিয়ে। এই প্রশ্নগুলো আসলে ধার করা। বিএনপি যদিও গণভোটের ব্যাপারে রাজি হয়েছে, কিন্তু দলটি জাতীয় কমিটির সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস এই প্রশ্নগুলো তুলেছেন। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত সোমবার ছাপা হয়েছে (জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের সাংবিধানিক ও আইনি চ্যালেঞ্জগুলো কী)।
শেখ হাসিনার আমলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। তবে পরে পঞ্চদশ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলার রায়ে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংশোধনীতে বাদ দেওয়া গণভোট–সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনরায় বহাল করা হয়।
রুহুল কুদ্দুস প্রশ্ন তুলেছেন, হাইকোর্টের এই রায়ের কারণে কি এই অনুচ্ছেদ তাৎক্ষণিকভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে গেছে? নাকি আদালতের রায় বিবেচনায় নিয়ে সংসদকে তা নতুন করে সংবিধানে যুক্ত করতে হবে? এর চেয়ে বড় কথা, হাইকোর্টের রায়ই চূড়ান্ত রায় নয়। মাত্র ১০ মাস আগে এই রায় হয়েছে এবং সামনে সুপ্রিম কোর্টে আপিল ও রিভিউ পিটিশনের সুযোগ আছে। তিনি মনে করেন, ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো যে গণভোটের ব্যাপারে একমত হয়েছে, তার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে রুহুল কুদ্দুসের বক্তব্য হচ্ছে, ‘গণভোট আইন ১৯৯১’–এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের গত ডিসেম্বরে দেওয়া রায়কে বিবেচনায় নিয়ে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীকেই সাংবিধানিক ভিত্তি ধরতে হবে। গণভোটের সিদ্ধান্ত হলে সেটি বাস্তবায়নের জন্য ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’–এর সংশোধনও লাগবে।
সব রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে কি?
এ কে এম জাকারিয়া প্রথম আলোর উপসম্পাদক
[email protected]
মতামত লেখকের নিজস্ব