গণভোট অপ্রয়োজনীয়, তবে এরপরও যদি হয়...
Published: 8th, October 2025 GMT
ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ১৫ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে। কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের কথায় এটা স্পষ্ট যে তাঁরা আর এর মেয়াদ বাড়াতে চান না। এর আগেই জুলাই সনদের কাজটি তাঁরা সারতে চান। আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক আছে। বলা হচ্ছে, এই বৈঠকেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে।
এরই মধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। কিন্তু এই গণভোটের প্রক্রিয়া বা গণভোট কবে হবে; জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন, নাকি আগে—এসব বিষয়ের সুরাহা হয়নি।
সবচেয়ে বড় কথা, গণভোট আয়োজনের সাংবিধানিক ও আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো যদিও গণভোটের ব্যাপারে একমত হয়েছে, কিন্তু এর আদৌ কোনো দরকার আছে কি না, সেই আলোচনাও আছে।
আরও পড়ুনসংসদ, পরিষদ না গণভোট— কোন পথে যাবে দেশ২০ আগস্ট ২০২৫প্রস্তাবিত জুলাই সনদের অনেক ইস্যুতে সব পক্ষ একমত হয়েছে, আবার কিছু ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত রয়েছে। কমিশন সেই বিবেচনা থেকে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবিত বিষয়গুলো দুই ভাগে ভাগ করে গণভোট করতে আগ্রহী। কিন্তু এই ধারণা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত?
ঐকমত্য কমিশন সূত্রে আমরা জানি যে রাজনৈতিক দলগুলোর ৯টি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে। এখন এই সব কটি বিষয় গণভোটের এক ভাগে রাখা হলে জনগণ এর ওপর মত দেবে কীভাবে? এই বিষয়গুলোর মধ্যে কেউ কিছু বিষয়ে একমত হতে পারে, আবার অনেকগুলোতে না–ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী হবে?
উদাহরণ দিয়ে বলি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বা সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন—এ ধরনের বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত আছে। এখন একজন ভোটার হয়তো দুটি বিষয়ে একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থানের সঙ্গে একমত আর বাকিগুলোর ক্ষেত্রে নন। এই ভোটারের মত গণভোটে কীভাবে প্রতিফলিত হবে?
বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনটি গণভোটের নজির আছে। একটি ১৯৭৭ সালে। এর মাধ্যমে পঁচাত্তর–পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জিয়াউর রহমান জনগণের মধ্যে তাঁর আস্থা এবং ক্ষমতায় থাকার বৈধতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৯৮৫ সালে সামরিক শাসক এরশাদ তাঁর ক্ষমতার বৈধতা প্রমাণ করতে গণভোটের আয়োজন করেছিলেন। সর্বশেষ গণভোট হয়েছিল ১৯৯১ সালে। রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব সংসদে পাস হওয়ার পর জনগণ তা গ্রহণ করছেন কি না, তা যাচাইয়ের জন্য গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল।
গণভোট অনুষ্ঠিত হয় একটিমাত্র প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে। উত্তর হতে হবে, ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’। বাংলাদেশের অতীতের তিনটি গণভোটও একটি প্রশ্নের ওপরই হয়েছে। গণভোটের মাধ্যমে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ থাকে না।
বাংলাদেশের অতীত তিনটি গণভোট বিবেচনায় নিলে জুলাই সনদের জন্য আদৌ কোনো গণভোটের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সংবিধান সংশোধনের যে বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন বা বিতর্ক নেই।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের সাংবিধানিক ও আইনি চ্যালেঞ্জগুলো কী০৬ অক্টোবর ২০২৫যে ইস্যুগুলোতে বিতর্ক আছে, সেগুলোর জন্যও গণভোটের দরকার পড়ে না। কারণ, ওই ইস্যুগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা আছে। এর ওপর ভিত্তি করেই জনগণ জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোকে ভোট দেবে। সুতরাং জাতীয় নির্বাচনই আসলে একধরনের গণভোট।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করি, যেমন বিএনপি চায় প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকুক (একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান)। জামায়াত বা এনসিপি তা চায় না। এখন এ বিষয়ে একজন ভোটারের যা অবস্থান, সে অনুযায়ী তিনি তাঁর দল বেছে নেবেন। আবার রাষ্ট্রের মূলনীতির ক্ষেত্রে কোন দল কী চায়, তা–ও সব দল পরিষ্কার করেছে।
যে দলটির ঘোষিত রাষ্ট্রের মূলনীতি একজন ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, সেই দলকেই তিনি ভোট দেবেন। সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে জুলাই সনদের যে ইস্যুগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত আছে, সেই প্রশ্নে গণভোট এই বিবেচনায় তাই অর্থহীন।
শেখ হাসিনার আমলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। তবে পরে পঞ্চদশ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলার রায়ে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংশোধনীতে বাদ দেওয়া গণভোট–সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনরায় বহাল করা হয়।তবে গণভোট যেহেতু সংসদে পাস হওয়া আইন বা রাজনৈতিক ঐকমত্যকে শক্তি জোগায়, তাই গণভোট যদি করতেই হয়, তবে তা হওয়া উচিত জাতীয় নির্বাচনের পর। নির্বাচিত সরকার সংসদে গিয়ে জুলাই সনদের সব দলের একমত হওয়া বিষয় এবং নিজ দলের নোট অব ডিসেন্টের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে তা রাষ্ট্রপতির সইয়ের জন্য পাঠানোর আগে একটি গণভোট আয়োজন করতে পারে।
এখন জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু একমত হয়েছে, তাতে এটা ধরে নিতে হচ্ছে যে গণভোট একটা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কী এবং কেমন হওয়া উচিত এই গণভোট? খরচের কথা বিবেচনা করে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে তা হতে পারে। আর গণভোটটি হওয়া উচিত জুলাই সনদের যে বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, তার ওপর এবং একটি প্রশ্নের ভিত্তিতে। প্রশ্নটির মূল বিষয় হবে জুলাই সনদ গ্রহণ করা বা না করার বিষয়ে। ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’–এর মাধ্যমে যার উত্তর দেওয়া যাবে।
আগেই বলেছি, সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেওয়ার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত নিয়ে গণভোটের কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর এসব ভিন্নমতকে দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে দেখতে হবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই জনগণ তাঁর দল বাছাই করবেন। নির্বাচিত দল তার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বিবেচনায় নিয়ে সংবিধান সংশোধন করবে। কারণ, কোনো দলের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া মানে তার অবস্থানের পক্ষেই জনগণ সমর্থন জানিয়েছে।
এবার আসি গণভোটের সাংবিধানিক ও আইনগত কিছু প্রশ্ন নিয়ে। এই প্রশ্নগুলো আসলে ধার করা। বিএনপি যদিও গণভোটের ব্যাপারে রাজি হয়েছে, কিন্তু দলটি জাতীয় কমিটির সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.
শেখ হাসিনার আমলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। তবে পরে পঞ্চদশ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলার রায়ে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংশোধনীতে বাদ দেওয়া গণভোট–সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনরায় বহাল করা হয়।
রুহুল কুদ্দুস প্রশ্ন তুলেছেন, হাইকোর্টের এই রায়ের কারণে কি এই অনুচ্ছেদ তাৎক্ষণিকভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে গেছে? নাকি আদালতের রায় বিবেচনায় নিয়ে সংসদকে তা নতুন করে সংবিধানে যুক্ত করতে হবে? এর চেয়ে বড় কথা, হাইকোর্টের রায়ই চূড়ান্ত রায় নয়। মাত্র ১০ মাস আগে এই রায় হয়েছে এবং সামনে সুপ্রিম কোর্টে আপিল ও রিভিউ পিটিশনের সুযোগ আছে। তিনি মনে করেন, ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো যে গণভোটের ব্যাপারে একমত হয়েছে, তার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে রুহুল কুদ্দুসের বক্তব্য হচ্ছে, ‘গণভোট আইন ১৯৯১’–এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের গত ডিসেম্বরে দেওয়া রায়কে বিবেচনায় নিয়ে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীকেই সাংবিধানিক ভিত্তি ধরতে হবে। গণভোটের সিদ্ধান্ত হলে সেটি বাস্তবায়নের জন্য ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’–এর সংশোধনও লাগবে।
সব রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে কি?
এ কে এম জাকারিয়া প্রথম আলোর উপসম্পাদক
[email protected]
মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণভ ট র ব য প র ন ট অব ড স ন ট ব ধ ন ক ও আইন জ ল ই সনদ ন য় জ ল ই সনদ র গণভ ট র স প রস ত ব ব ষয়গ ল ভ ন নমত অবস থ ন র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্বোধ্য প্রস্তাবে গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার
ঐকমত্য একটি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরকার। সাধারণ মানুষের চাহিদাটি হলো একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অর্থনীতি ভালো থাকা। এই দুটি বৃহত্তর জাতীয় চাহিদা মাথায় রেখেই আমাদের সমাধান খোঁজা দরকার।
আমরা দেখছি, একটু ঐকমত্য হলো, আবার ঐকমত্যের ঘাটতি হলো—এখানে পরীক্ষা সবাই দিচ্ছে। কমিশন তার দক্ষতা ও নিয়তের পরীক্ষা দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো সদিচ্ছার পরীক্ষা দিচ্ছে। জনগণ এখানে অনুপস্থিত নয়। জনগণ যমুনায় আমন্ত্রিত হচ্ছে না, কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়া তিনটি গন্তব্যের দিকে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি কাঙ্ক্ষিত। সেটি হলো, সম্মানজনক ও কার্যকর সমাপ্তি। দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত। একটি হলো, ব্যাপক আয়োজন সত্ত্বেও কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল না আসা। অন্যটি হলো, হযবরল অবস্থা তৈরি হওয়া। এটির মানে হলো, এগোনোর পথ অপরিষ্কার।
আরও পড়ুনসংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে কমিশন ৫৭ মিনিট আগেএকটা বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। যাঁরা ঐকমত্যের প্রক্রিয়ায় আছেন, ঐকমত্যের কথা বলছেন, কখনো কখনো তাঁরা একে অপরকে অবিশ্বাস করছেন। অবিশ্বাসের মধ্যে আমরা ঐকমত্য তৈরি করতে চাইছি, এটা তো স্ববিরোধী ব্যাপার।
আমরা দেখছি, যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন ছিল, সেটার বদলে গণভোটের দিকে যাত্রা করা হচ্ছে। কারণ, নিজেরা সমঝোতায় আসতে পারছে না। গণভোট কখন হবে, সেটা নিয়েও একেক পক্ষের মতামত একেক রকম। এ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী জনগণ চরম বিরক্ত ও হতাশ হবে। কারণ, জনগণ চায় সম্মানজনক ও কার্যকর সমাপ্তি। অন্য কোনো গন্তব্য যেন তৈরি না হয়।
হযবরল অবস্থা তৈরি হলে দেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে না। কোনোরকম উত্তরণ হলেও সমস্যার সমাধান ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হবে না। সে জন্য আশা করব, সদিচ্ছার পরীক্ষায় রাজনৈতিক পক্ষগুলো যেন উত্তীর্ণ হয়। হযবরল অবস্থা তৈরির আশঙ্কা যেন তারা বুঝতে পারে।
এখন সামনে এসেছে গণভোটের প্রসঙ্গ। এটা একধরনের মতামত জরিপ। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারে (পিপিআরসি) আমাদের মতামত জরিপ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। এটাকে পন্থা হিসেবে গ্রহণ করতে হলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনগণভোটে ঐকমত্য, তবে সেটা কখন তা নিয়ে বিএনপি–জামায়াতের ভিন্ন মত০৫ অক্টোবর ২০২৫কোনো জটিল ও দুর্বোধ্য প্রস্তাবের ওপর গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার করার শামিল। এতে হযবরল অবস্থা তৈরির আশঙ্কাই বেশি। গণভোটের মাধ্যমে মানুষকে তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা যদি এলিটদের (অভিজাত শ্রেণি) থাকে, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। গণভোটের ক্ষেত্রে জটিল প্রস্তাব পরিহার করা প্রয়োজন। কারণ আমরা দেখেছি, জটিল বিষয়ে মতামত জরিপে প্রকৃত ফলাফল আসে না।
গণভোটের ক্ষেত্রে প্রশ্নটি যদি প্রাক্-ধারণানির্ভর হয়, তাহলে কিন্তু সেটা সৎ গণভোট হবে না। গণভোট সৎ হওয়া দরকার। কী চাওয়া হচ্ছে, সেটা কি মানুষের কাছে পরিষ্কার? মানুষ কি জুলাই সনদ সম্পর্কে জানে? মানুষ কি আইনি ভিত্তি দিলে কী হবে, সে সম্পর্কে ধারণা রাখে? শহরের মানুষ কিছু কিছু জানতে পারে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক মানুষেরা সেটা সম্পর্কে কি ধারণা রাখে?
মতামত জরিপের একটি সাধারণ সমস্যা হলো ‘লিডিং কোশ্চেন’ সমস্যা। আমি যেভাবে উত্তর চাই, সেভাবেই প্রশ্নটি সাজালাম। কিন্তু সেটা হওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত০৫ অক্টোবর ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের কার্যকর ও সম্মানজনক পরিসমাপ্তি যদি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে হয়ে যায়, তারপর আরেকটি ঐকমত্য দরকার হবে। সেটিকে আমি বলছি ‘অন্য ঐকমত্য’। এর জন্য গণভোটের দরকার নেই। অন্য ঐকমত্য হলো, রাজনৈতিক দলগুলোকে গণ ঘোষণার মাধ্যমে বলতে হবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো কী কী করবে। এ বিষয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকা দরকার। নির্বাচনী ইশতেহারে সেটা থাকতে পারে। তাহলে আমরা বলতে পারব, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ঐকমত্য যেমন হয়েছে, তেমনটি ‘অন্য ঐকমত্যও’ হয়েছে।
মানুষ যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান করেছে, সেটার আকাঙ্ক্ষাকে কোনোভাবেই বিসর্জন দেওয়া যাবে না। এটা আমাদের অন্যতম একটি জাতীয় অর্জন। কাগজে-কলমে যা-ই হোক, আইন হোক, ধারা যুক্ত হোক, সেটা ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায়। এর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কিন্তু যেটা ছুড়ে ফেলা যায় না, সেটা হলো মানুষের আকাঙ্ক্ষা, পরিবর্তনের প্রত্যাশা। জনপরিসরে সুস্পষ্ট অঙ্গীকারে শামিল হলে সেখান থেকে ফিরে যাওয়াটা কঠিন।
হোসেন জিল্লুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান
[মতামত লেখকের নিজস্ব]