পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্রদূতেরা যে কারও বাসায় যেতে পারেন। তবে তাঁরা কী নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন, কী প্রত্যাশা করেছেন, তা নিয়ে কনট্রোভার্সি (বিতর্ক) থাকতে পারে।

আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সম্প্রতি সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে নরডিক অঞ্চলের তিন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা বৈঠক করেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক এক মন্ত্রীর বাসায় তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক নিয়ে আপনারা অবগত কি না, যে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, এমন এক দলের নেতার সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠককে কীভাবে দেখছেন, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে।

জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা তো একজন ব্যক্তির বাসায় গেছেন। তিনি অপরাধী হলে তো তাঁকে নিশ্চয় কাস্টডিতে (নিরাপত্তা হেফাজতে) রাখা হতো। তা তো হয়নি।

রাষ্ট্রদূতেরা আসলে যে কারও বাসায় যেতে পারেন উল্লেখ করে দীর্ঘ সময় কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি তো কলকাতায় রাষ্ট্রদূত না, এক ধাপ নিচে ছিলাম। আমি যে কারও বাসায় গিয়েছি, সমস্যা নেই। তবে তাঁরা কী নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন, কী প্রত্যাশা করেছেন, তা নিয়ে কনট্রোভার্সি (বিতর্ক)থাকতে পারে। তবে অন দ্য ফেস অব ইট গেছেন তাঁরা, এটা নিয়ে তাঁদের আমার তেমন বলার কিছু নেই।’

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার দৈনিক কালবেলায় ‘সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ঢাকায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার সাবের হোসেনের গুলশানের বাড়িতে যান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাংলাদেশে পাটভিত্তিক উৎপাদনে বড় বিনিয়োগে আগ্রহী চীন’

বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, বস্ত্র ও ওষুধশিল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনা বিনিয়োগকারীরা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত উৎপাদন খাতের রূপান্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ আগ্রহ এসেছে।

আরো পড়ুন:

লিটনের কাঠগড়ায় শুরুর ব‌্যাটিং

বিব্রতকর পরাজয়ের সঙ্গে মিলল ‘ভুয়া, ভুয়া’ দুয়োধ্বনি

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠককালে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার (এক্সিম ব্যাংক) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং দোংনিং এ আগ্রহের কথা জানান।

সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

ইয়াং দোংনিং বলেন, “বাংলাদেশে চীনের দীর্ঘদিনের অবকাঠামো বিনিয়োগের পাশাপাশি এখন তারা উৎপাদন খাতে মনোযোগ দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রুফটপ সোলার প্যানেল এবং দেশের ‘সোনালি আঁশ’ পাটকে কেন্দ্র করে জ্বালানি, বায়োসার ও প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরির বড় প্রকল্প।”

তিনি জানান, এসব সরাসরি উৎপাদন বিনিয়োগে এক্সিম ব্যাংকও অর্থায়নে আগ্রহী।

ড. মা জুন বলেন, “ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। তারা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়।”

তিনি জানান, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরির জন্য বছরে ১০ লাখ টন পর্যন্ত পাট ব্যবহার করতে প্রস্তুত।

ড. মা আরো জানান, চীনা অর্থায়নে পাটভিত্তিক যৌথ উদ্যোগের বড় সুযোগ রয়েছে।

চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চীনা বিনিয়োগকারীরা চাইলে বাংলাদেশকে উৎপাদনশীল পণ্য রপ্তানির একটি হাবে রূপান্তর করা সম্ভব-যা উন্নত দেশসহ চীনে রপ্তানির সুযোগ বাড়াবে। তিনি ওষুধ ও স্বাস্থ্য সেবাকে চীনা বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করেন।”

ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরশক্তি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চীন রুফটপ সোলারসহ সবুজ জ্বালানি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “দেশের বিপুল তরুণ কর্মশক্তি ও বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যৌথ উদ্যোগে ব্যবহারের বড় সুযোগ তৈরি করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই এগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে যাক।”

ইয়াং দোংনিং জানান, এআই ও ই-কমার্স খাতেও বিনিয়োগের সুযোগও চীন বিবেচনা করছে—যে দুটি ক্ষেত্রে চীন ইতিমধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্বে রয়েছে।

জবাবে প্রধান উপদেষ্টা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কারখানা স্থাপনের আমন্ত্রণ জানান।

তিনি বলেন, “ওই অঞ্চলে দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর এবং মিয়ানমার-থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের কৌশলগত নিকটতা বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই অঞ্চলের সমুদ্রে প্রবেশাধিকারে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনা শিল্প কারখানাগুলো এখানে স্থানান্তর করলে উৎপাদিত পণ্য উন্নত দেশসহ চীনেও রপ্তানি করা যাবে।”

তিনি বলেন, “দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে আঞ্চলিক সংযোগ বাড়বে এবং স্থানান্তরিত কারখানার পণ্য রপ্তানি আরো সহজ হবে।”

বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা হংকংয়ের একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর সমবেদনা জানান।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় নিয়োজিত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ