প্রেমিকার বাড়ির উঠানে ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ খেয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছেন এক যুবক। জানাচ্ছেন বাঁচানোর আকুতি। সেই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছেন বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা, কেউ–বা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছেন। একপর্যায়ে যুবক নিস্তেজ হয়ে গেলে তাঁকে একটি স্থানীয় ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গতকাল বুধবার রাতে এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সামান্যপাড়া গ্রামের। ভিডিওটি গতকাল ছড়িয়ে পড়লেও ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার সকালে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারা যাওয়া ওই যুবকের নাম স্বপন প্রামাণিক (৩৫)। তিনি পাবনা সদর উপজেলার খয়সুতি গ্রামের ইমাম প্রামাণিকের ছেলে। তিনি সাঁথিয়া উপজেলার সামান্যপাড়া গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর (প্রেমিকা) বাড়িতে গিয়ে প্রেমের স্বীকৃতি না পেয়ে ওই ঘটনা ঘটান। ঘটনার পর কথিত প্রেমিকা পালিয়ে গেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সামান্যপাড়া গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান স্বপন প্রামাণিক (৩৫)। দীর্ঘদিন সম্পর্কের সূত্র ধরে স্বপনকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই নারী। একপর্যায়ে তিনি স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর গত সোমবার সকালে ওই নারীর বাড়িতে যান স্বপন। সেখানে গিয়ে প্রথমে তিনি নিজের হাত কাটেন। এরপরও ওই নারী বিয়েতে রাজি না হওয়ায় স্বপন গ্যাস ট্যাবলেট খান। এতে অসুস্থ হয়ে তিনি বাড়ির উঠানে গড়াগড়ি করতে থাকেন। চিৎকার করে বাঁচানোর আকুতি জানাতে থাকেন। এ সময় বাড়ির লোক ছাড়াও প্রতিবেশীরা সেখানে ছুটে আসেন। কিন্তু কেউ তাঁকে উদ্ধার না করে ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করেন। একপর্যায়ে স্বপন নিস্তেজ হয়ে পড়লে এলাকার লোকজন তাঁকে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ স্বপনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

পরে ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্বপন বাড়ির উঠানে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। নিস্তেজ হয়ে পড়ার আগে নিজেকে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। আশপাশের অনেকে ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

এ ঘটনার পর ওই নারী পালিয়ে যান। ওই নারীর মামাশ্বশুর বলেন, খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু তার আগেই স্বপন মারা যান।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তি ও নারী দুজনই বিবাহিত। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে স্বপনের স্ত্রী বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ন র স বপন

এছাড়াও পড়ুন:

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও রাগসংগীতে বিশুদ্ধতার ধারণা

আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব বরাবরই এক বিস্ময়কর মানুষ। এ কথা যেমন নিরেট সত্য, তেমনি এ কথাও সত্য যে তিনি একই সঙ্গে এক পরম সাধারণ মানুষ ছিলেন। খাঁ সাহেবের সংগীতের মূলে কোনো আভিজাত্য বা দূরত্ব ছিল না, প্রতিটি সুরের ভেতর দিয়ে ধ্বনিত হয়েছে মাটির গন্ধ, ক্ষুধার ইতিহাস, মানুষের ক্লান্তি ও আশ্বাসের শব্দ।

আমি আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবকে চিনেছি আমার গুরুজির কাছ থেকে। সেদিন বিহাগের তালিম চলছিল। তালিমের একপর্যায়ে গুরুজি আমায় থামিয়ে বললেন, ‘তোকে একটা গল্প বলি। বাবা আলাউদ্দিন খাঁ বিহাগের বিনকারী শেষ করবেন, সম্ভবত ঝালা বাজাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর চোখ দিয়ে জল বয়ে এল আর তিনি বললেন, “এত দিন পর গান্ধারটা লাগল!”’ সেই গল্প শুনে আমি বুঝেছিলাম আত্মসন্ধান, শ্বাসের আশ্বাসে গলার মধ্য দিয়ে উঠে আসা আত্মার ছবিও নেহাত।

আলাউদ্দিন খাঁ কলোনিয়াল ভারতবর্ষে সেই সামন্ত সংগীতের শৃঙ্খল ভেঙে নয়া সংগীতধারার বিনির্মাণ করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র, কৃষক, ‘মুসলমান’, ‘হিন্দু’, ‘বাঙালি’, উড়িয়া, মারাঠি—সবাই এক সুরে মিশে যেত। সংগীতে ধর্মের সীমা ভেঙে যায় এবং সেই ভাঙার মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় নতুন গণতান্ত্রিক নন্দনচেতনা।

আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব উপমহাদেশের একটা জটিল সময়ে বর্তমান ছিলেন। দীর্ঘ দমন, কলোনিয়াল আধিপত্য, সামাজিক বিভাজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া মানে একপ্রকার সোশিও-পলিটিক্যাল আত্মপরিচয় পুনরুদ্ধারও। ভারতীয় সংগীত, বিশেষ করে আলাউদ্দিন খাঁর মতো মানুষদের হাতে হয়ে উঠেছিল এক প্রতিস্পর্ধী রাজনীতি। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব নিজেই ছিলেন এক বিপ্লবী সংগীতচেতা। কলোনিয়াল ভারতবর্ষে সেই সামন্ত সংগীতের শৃঙ্খল ভেঙে নয়া সংগীতধারার বিনির্মাণ করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র, কৃষক, ‘মুসলমান’, ‘হিন্দু’, ‘বাঙালি’, উড়িয়া, মারাঠি—সবাই এক সুরে মিশে যেত। সংগীতে ধর্মের সীমা ভেঙে যায় এবং সেই ভাঙার মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় নতুন গণতান্ত্রিক নন্দনচেতনা। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব এখানেও বিস্ময়কর।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও রাগসংগীতে বিশুদ্ধতার ধারণা
  • হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সচালকদের সংঘর্ষে সেবা বন্ধ, রোগীর মৃত্যু
  • বরগুনায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
  • ফেনীতে শিশু হত্যা মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড