ঢাকা বিভাগীয় ট্যাংকলরী মালিক সমিতির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত
Published: 11th, October 2025 GMT
পদ্মা অয়েল ডিপোতে গাড়ীর সিরিয়াল নিয়ে জটিলতাসহ নানা সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় ট্যাংকলরী মালিক সমিতির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বার্মাস্ট্যান্ড এলাকায় সমিতির কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বেশিরভাগ মালিকরাই সিলেটের গাড়ী পদ্মা অয়েল ডিপোতে না ডুকার বিষয়ে একমত পোষন করেন এবং এ বিষয়ে সভাপতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সাথে যে চুক্তি করা হয়েছে, সেই চুক্তিতে সিলেটের গাড়ী কুর্মিটোলা থেকে লোড করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে সিলেটের গাড়ী এ পদ্মা অয়েল ডিপোতে ডুকানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা মেনে নেবো না।
তারা বলেন, এখান থেকে বলা হচ্ছে গাড়ীর মালিকরা নাকি গাড়ী দিতে পারে না এবং গাড়ী পরিচর্যা করে না। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভ্রান্ত কথাবার্তা। মূলত ডিপোর পয়েন্ট কম বলেই গাড়ীগুলো লোড দিতে পারে না। এবং ডিপুর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বিশেষ সুযোগ সুবিধার জন্য এ ধরনের কথাবার্তা প্রচার করে।
আমরা ডিপোর পয়েন্ট বাড়ানো সহ চিকুন পাইপকে মোটা পাইপ বানানোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি তেলের ট্যাঙ্কি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোন ট্যাঙ্কি থেকে যেন তেল সরবরাহ করা না হয়, সেই বিষয়ে সভাপতির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সকল মালিকদের বক্তব্য শোনার পর ঢাকা বিভাগীয় ট্যাংকলরী মালিক সমিতি অকিল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সিলেটের গাড়ী সিলেটে চলবে। আমাদের ১২৭টি গাড়ীতে যেন কেউ হস্তক্ষেপ না করে। কেউ যেন দুঃস্বপ্ন না দেখে এ ১২৭টি গাড়ীর মাঝে আরও গাড়ী ডুকাবে। আমাদের ছোট গাড়ী যদি পারে ৪ টি টিপ মারবে, তাহলে মারতে পারবে।
কিন্তু এ জন্য গাড়ীগুলোর ফিটনেস ঠিক করতে হবে, ড্রাইভারদের ফিটনেস ঠিক করতে হবে। যেসব ড্রাইভার অলস। তাদেরকে বাদ দিয়ে ভালো ড্রাইভার নেন। আর গাড়ীর সিরিয়ালটি যাতে ভিতর থেকে দেওয়া হয় এবং ডিপোর পয়েন্ট বাড়ানো ও পাইপ মোটাসহ সকল বিষয়ে আমরা ডিপোর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।
তিনি ষড়যন্ত্রকারিদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার দিয়ে আরও বলেন, আওয়ামী দোসররা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতির ছবির সাথে আমার ছবি দিয়ে আমাকে বলতেছে আওয়ামী লীগের দোসর। আরে চোরের ঘরের চোরেরা আমি ছিলাম মাদরাসার সভাপতি। তোদের বাপদাদার জায়গা মধ্যে নয়, আমার বাপদাদার জায়গার মধ্যে মাদরাসা করেছি।
সেই মাদরাসার সভাপতি ছিলাম আমি। সেই সময়ে মতি ছিলো কাউন্সিলর। সেই মাদরাসার বার্ষিক পুস্তক বিতরণী অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর হিসেবে মতি থাকতেই পারে। আর আমি যেহেতু সভাপতি আমিতো থাকবোই। সেই ছবি দিয়ে আওয়ামী দোসররা ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি মালিকদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারাই বলুন বিগত সময়ে আমি কি আন্দোলন সংগ্রাম কম করেছি? আমি কি মামলা হামলার কম শিকার হয়েছি? এ ওয়ার্ডে আমার চাইতে বড় বিএনপি কে আছে? আর আমাকে দোসর বানানোর চেষ্টা করেন। তাই বলছি, এ ওয়ার্ডে যারা আওয়ামী লীগের লোকজন আছে সাবধান হয়ে যান।
আপনারা আপনাদের মত থাকেন, বেশি নড়াচড়া করবেন সমস্যা হবে। বিগত সময়ে আমাদের ওপর হামলা মামলা চালিয়েছেন, ব্যবসা বাণিজ্য সব লুট করেছেন। আমি কিন্তু কিছু করতে দেই নি। বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসায় হামলা হয়েছে, গাড়ী ভাঙছে, বাড়ী ভাঙছে, লুট করছে। আমি কিন্তু আপনাদের বাড়ীঘর ভাঙতে দেই নাই।
আমি সবাইরে আটকিয়ে রাখছি। আমি মনে করি, দল অন্যকথা সবার আগে আমরা একই এলাকার মানুষ। তাই আপনাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হতে দেইনি। ভুলে যাবেন না। ভবিষ্যতে যদি আবারও ফাজলামি করেন, বিপদ হবে বলেন দিলাম।
সমিতির সহ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আপনারা জানেন আমরা ভূঁইয়াবাড়ীর সন্তান। আমাদের ভূঁইয়া বাড়ীর একটা ঐতিহ্য রয়েছে এ এলাকায়। আমাদের বাড়ীটা যেমন বড়, আমাদের ভোটারও অনেক বেশি। তাই যখনই নির্বাচন আসে সকল প্রার্থীরা আমাদের বাড়ীতে এসে ভীড় জমায়।
তখন তারা আমাদের বাড়ীতে এসে বসে, ভোট প্রার্থণা করে এবং অনেক প্রার্থী ছবিও তোলে। কিন্তু একটি কুচক্রি মহল সেই ছবিকে পুঁজি করে ষড়যন্ত্র করছে। তারা সেই ছবি দিয়ে আমাদেরকে আওয়ামী লীগের দোসর বানাতে চাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯১ সালে আমার দাদা মরহুম আব্দুল বারেক ভূঁইয়ার হাত ধরে আমি বিএনপিতে যোগদান করি গ্রাম সরকারের সচিব হিসেবে। পরবর্তিতে আমি ৬নং ওয়ার্ডের বিএনপির সদস্য ছিলাম। বর্তমানে মহানগর বিএনপি নেতা জাকির খান ও আমার চাচা অকিল উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপির রাজনীতি করে যাচ্ছি।
শুধু তাই নয়, আমার ছেলে ইরফান ভূঁইয়া বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করার সময় জুলাই মাসে গ্রেফতার হয়। তাকে অনেক মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়েছে। পরে ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তন হলে আমার ছেলে মুক্তি পায়। তাই বলছি, আমার দাদা, আমার চাচা, আমি এবং আমার ছেলেও বিএনপি করে।
সুতরাং আমরা তথা ভূঁইয়া পরিবার মানেই বিএনপি পরিবার, আমাদের নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করবেন না। এটা শুধু আমি বলছি না, এটা সবাই জানে এমনকি বিগত সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বলতো, ভূঁইয়া পরিবার মানেই বিএনপি পরিবার। তাই তারা বিগত ১৭টি বছর ভূঁইয়া পরিবারকে অনেকটা কোনঠাসা করে রাখছিলো।
ঢাকা বিভাগীয় ট্যাংকলরী মালিক সমিতির সভাপতি অকিল উদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, আক্তার হোসেন বাচ্চু, ডা: আহমদ হোসেন, মোহাম্মদ আলী, শরীফ ভূঁইয়া, মো: ফারুক আহমেদ, মো: সেলিম ভূঁইয়া, মো: আমির, ফয়েজ কাজী, হাজী সায়েদ কাজী, রুহুল আমি, মো: জুয়েল, আরিফ ভূঁইয়া, মিন্টু মোল্লা, মো: হামীম, মেজবা ভূঁইয়া, মো: আনিছ, মো: ইয়ার হোসেন ভূঁইয়া, রাজ কুমার চৌহান, মো: সজিব ভূঁইয়া প্রমূখ।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
‘খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে গন্তব্যে যাব?’
ঢাকায় যাবেন নির্মাণশ্রমিক রঞ্জু মিয়া। তাই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা রাধাকানাই থেকে আজ রোববার সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন ঢাকার উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই ঢাকায় যাওয়া হয়নি তাঁর।
জুলাইযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার জেরে ময়মনসিংহে এনসিপির নেতা-কর্মী ও পরিবহনশ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচির পর এখনো ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। আজ রোববার সকাল থেকে ময়মনসিংহ থেকে সব ধরনের বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহনশ্রমিক ও নেতারা। এতে বিপাকে পড়েছেন রঞ্জু মিয়ার মতো বহু মানুষ।
রঞ্জু মিয়ার প্রশ্ন, যানবাহনের মালিক-শ্রমিকেরা নিজেদের দাবি–দাওয়া নিয়ে কথা বলবে প্রশাসনের সঙ্গে। কিন্তু বাস বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের কেন ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে?
আরও পড়ুনঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল করছে না, নতুন করে আন্তজেলা বাসও বন্ধ ৪ ঘণ্টা আগেসমস্যার শুরু গত শুক্রবার সন্ধ্যায়। এনসিপির হালুয়াঘাট উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানকে ইউনাইটেড পরিবহনের শ্রমিক লাঞ্ছিত করেছেন—এমন অভিযোগে এনসিপির নেতা-কর্মীরা গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন। আর এনসিপি নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি ও এক শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিক্ষোভে নামেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে ময়মনসিংহ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে, দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
এরপর গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসন শ্রমিক নেতা ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হকের (শামীম) মালিকানাধীন ইউনাইটেড পরিবহনের ১৬টি গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে এনসিপি নেতারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। আর গাড়ি চলাচলে কেউ বাধা দেবেন না—এমন আশ্বাসে শ্রমিকেরাও গতকাল বিকেলে সড়ক থেকে সরে যান। কিন্তু বিকেল পাঁচটা থেকে ইউনাইটেড পরিবহনের ৭০টি ও শৌখিন এক্সপ্রেসের ১৫০টি বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আজ রোববার সকালে ময়মনসিংহ থেকে সব বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহনশ্রমিক ও নেতারা।
ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা বাস টার্মিনাল, দীঘারকান্দা বাইপাস ও পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের চিত্র। বাস না পেয়ে অনেকে অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যানে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। আবার অনেকে বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। তাঁদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবায়েত জাহান।
আজ সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে কথা হয় রুবায়েতের সঙ্গে। তিনি জানান, আজ থেকে তাঁর ক্লাস শুরু। কিন্তু মাসকান্দা বাস টার্মিনালে এসে দেখেন বাস চলছে না। তাই বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে।
ছোট ভাই রাফিউর হাসানকে টঙ্গীর মাদ্রাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন জুনায়েদুল ইসলাম। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি বলেন, ‘তারাকান্দা থেকেও কোনো বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছে না। ভেঙে ভেঙে এখানে এসেছি। কিন্তু এখান থেকেও বাস যাচ্ছে না। সে কারণে খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে গন্তব্যে যাব?’
নগরের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকা হয়ে ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল করে। সেখানে গিয়েও দেখা যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে বহু মানুষ। কিন্তু কোনো বাস নেই।
মাসকান্দা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারের সামনে ব্যানার টানিয়ে শ্রমিকেরা অবস্থান করছেন। সেখানে ব্যানারে লেখা, ‘পরিবহনশ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার দাবিতে অনশন ধর্মঘট। মিথ্যা অপবাদে শ্রমিকের পেটে লাথি মারা মানব না। ষড়যন্ত্র করে গাড়ি বন্ধ করা চলবে না। ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তার চাই। শ্রমিক ও যাত্রী হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।’
দাবির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পেয়ে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে এসেছিলেন বলে জানিয়ে জেলা এনসিপির সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার কোনো পরিবহন বন্ধের পক্ষে নই, শুধু ফ্যাসিস্ট শামীমের ১৬টি গাড়ি আমরা বন্ধের পক্ষে। কিন্তু তাঁরা (পরিবহনশ্রমিক ও মালিকরা) কেন ফ্যাসিস্টের পক্ষে সব গাড়ি বন্ধ রেখেছেন, তা বোধহগম্য নয়। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে তাঁরা এখানে একটি ষড়যন্ত্র করছেন।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাস চলাচল বন্ধ রাখা মালিকদের সিদ্ধান্তের বিষয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আলোচনা করছেন।
ময়মনসিংহ থেকে সব রুটে বাস চলাচলের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত সেল ময়মনসিংহ এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেতারা। শনিবার বিকেল চারটায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে