সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি দিল জামায়াত
Published: 12th, October 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে সারা দেশে মিছিল ও জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রবিবার (১২ অক্টোবর) তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
আরো পড়ুন:
নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে জামায়াত: খায়রুল হাসান
এবার সুশাসনের জন্য বিপ্লব করতে হবে: গোলাম পরওয়ার
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ১ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াতরে পাঁচ দাবি হলো- জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
নীলফামারী: সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা জামায়াতের কার্যালয় থেকে মিছিল বের হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে জামায়াত নেতারা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীর সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা পাঁচ দাবি উত্থাপন করেছি।”
খাগড়াছড়ি: একই দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দুপুরে স্বারকলিপি দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা জামায়াত। এর আগে, দলটি দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের মুক্ত মঞ্চ থেকে মিছিল বের করে। সেটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কাযালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন, খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট এয়াকুব আলী চৌধূরী, জেলা সেক্রেটারি মিনহাজুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এর আগে তারা শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যোনে সভা করেন।
জেলা জামায়াতের আমির আহসান হাবীব মাসুদ, নায়েবে আমির অধ্যাপক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, সেক্রেটারি মাওলানা হুমায়ুন কবির, সহকারী সেক্রেটারি হুসনি মোবারক বাবুল, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন বাদল, সেক্রেটারি আলমগীর হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
লক্ষ্মীপুর: রবিবার সকালে লক্ষ্মীপুর প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল বের করে জামায়াতে। মিছিল শেষ তারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সম্রাট খীসার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন।
মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। গণহত্যার বিচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার পাশাপাশি ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ও জামায়াত মনোনীত লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাংসদ সদস্য প্রার্থী ড.
তিনি বলেন, জনগণ ভিন্ন সময় বিভিন্ন দলকে নির্বাচিত করে তাদের শাসন দেখেছে। এবার তারা দাঁড়িপাল্লাকে বিজয়ী করতে চান। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে আগামী দিনে জামায়াতকে সংসদে দেখতে চান এ দেশের জনগণ। তাই জামায়াত ঘোষিত ৫ দাবি মেনে নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
ফরিদপুর: কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড় থেকে গণমিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও সমাবেশ পরবর্তী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন জামায়াত নেতারা।
সমাবেশে ফরিদপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, নায়েবে আমির মো. আবু হারিচ মোল্লা, সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল ওহাব আলী, সদর উপজেলা সেক্রেটারি মো. জসিম উদ্দিন, পৌর শাখার আমির ড. এহসানুল মাহবুব রুবেল বক্তব্য রাখেন।
নাটোর: পাঁচ দাবিতে রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কাছ স্মারকলিপি দিয়েছে নাটোর জেলা জামায়াত। এই স্মারকলিপিটি তারা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দিয়েছেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ড. মীর নুরুল ইসলাম, জামায়াত মনোনীত নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী, জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক সাদেকুর রহমান, সিংড়া- ৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী প্রফেসর সাইদুর রহমান।
পাবনা: জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি, সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতি চালুসহ পাঁচ দাবিতে পাবনায় মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে পাবনা শহীদ চত্তরে সমাবেত হয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, নায়েবে আমির মাওলানা জহুরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল মাওলানা ইকবাল হোসেন ও সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল গাফফার খান প্রমুখ।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা
জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।
দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপটহাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’
এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)
আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।
দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকতএই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।
আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।
দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫