ভ্রমণে শপিং: প্রস্তুতি, সতর্কতা ও করণীয়
Published: 12th, October 2025 GMT
ভ্রমণ মানে কি শুধুই ঘোরাফেরা আর খানাপিনা? মোটেই নয়। কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানে শপিং না করলে ভ্রমণ যেন কিছুটা পানসেই রয়ে যায়। বিশেষ করে দেশের বাইরে কোথাও গেলে শপিং ছাড়া ভ্রমণ যেন অসম্পূর্ণ। কারণ, অনেকেরই দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ বারবার মেলে না। নতুন জায়গার সংস্কৃতি, পোশাক, খাবার, এমনকি হস্তশিল্প—সবকিছুই আমাদের কৌতূহল জাগায়। আর এই কৌতূহল থেকেই শুরু হয় শপিংয়ের পরিকল্পনা। নিজের বা প্রিয়জনের জন্য অথবা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু না কিছু কিনতেই চান সবাই। তবে এই শপিংয়ের আনন্দ যেন ঝামেলা বা বিড়ম্বনায় পরিণত না হয়, সে জন্য বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
বাজেট ও পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি করুন
বিদেশে ঘুরতে গিয়ে শপিংয়ের মোহে পড়ে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কী কিনতে চান—পোশাক, কসমেটিকস, গিফট নাকি স্যুভেনির? এগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে রাখুন। শপিংয়ের সময় তালিকা অনুসরণ করলে বাড়তি খরচের ঝুঁকি কমবে। এ ছাড়া কোথাও যাওয়ার আগে কোন মার্কেটে বা শপিং মলে কোন জিনিস সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়, তা আগে থেকেই খোঁজ নিয়ে রাখলে সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হবে। ট্রাভেল ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও বা স্থানীয়দের পরামর্শ এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হতে পারে।
কার্ড ও পেমেন্টে সচেতন থাকুন
বিদেশে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ড দিয়ে লেনদেন করা সুবিধাজনক হলেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির হেড অব কার্ডস তাসনিম হোসেন বলেন, বিদেশে শপিং করার সময় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করলে। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ডগুলো সবচেয়ে উপযোগী। যেমন ইবিএলের ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে গ্রাহকেরা বিদেশি লেনদেনে বোনাস রিওয়ার্ড পয়েন্ট পান এবং আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক পার্টনারদের কাছ থেকে এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট ও ভ্রমণসুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
তাসনিম হোসেন আরও বলেন, দেশের বাইরে এসব কার্ড ব্যবহার করার সময় গ্রাহকদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রথমত, দেশের বাইরে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে কার্ডে আন্তর্জাতিক লেনদেন সক্রিয় আছে কি না এবং লেনদেনের সীমা সম্পর্কেও জেনে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া পেমেন্টের সময় সম্ভব হলে নিজেই পিওএস মেশিন ব্যবহার করা উচিত এবং কার্ড নম্বর, সিভিভি, ওটিপি বা মেয়াদের তারিখ কাউকে জানানো যাবে না। কেনাকাটার আগে পেমেন্টের পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে লেনদেন এবং বিদেশে কার্ড ব্যবহারে প্রযোজ্য চার্জ ও ফি সম্পর্কে আগেই জেনে নেওয়া ভালো।
তাসনিম হোসেন জানান, বিদেশে কার্ড ব্যবহার করলে কিছু অতিরিক্ত চার্জ ও ফি প্রযোজ্য হয়। সাধারণত মুদ্রা রূপান্তর ও লেনদেন প্রক্রিয়াজনিত ফি হিসেবে এসব চার্জ কাটা হয়। এই চার্জগুলো লেনদেনের মোট খরচে কিছুটা প্রভাব ফেললেও সাধারণত এটি খুব বড় অঙ্কের হয় না।
স্থানীয় বাজারগুলো থেকে কেনাকাটা করুন
বড় শপিং মল বা ব্র্যান্ডেড স্টোরে আপনি মানসম্পন্ন জিনিস পাবেন ঠিকই, কিন্তু স্থানীয় বাজারে ঘুরলে পাবেন প্রকৃত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া। হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক বা স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি পণ্য সাধারণত কম দামে এবং অনন্য ডিজাইনে পাওয়া যায় স্থানীয় বাজারগুলোতেই। সেই সঙ্গে দর-কষাকষি করতে মোটেও সংকোচ করবেন না। বেশির ভাগ স্থানীয় দোকানে দাম কিছুটা হলেও কমানো যায়। তবে কেনাকাটার সময় মান যাচাই করে নিন এবং পণ্যের উৎপত্তি বা ব্যবহৃত উপকরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন, জিনিসটি আসল না নকল।
কাস্টমস ও লাগেজের সীমা জেনে নিন
বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় অনেকেই কাস্টমসে বিপাকে পড়েন। তাই আগে থেকেই জেনে নিন কোন পণ্য কতটুকু পরিমাণে আনতে পারবেন, কোনো আইটেমে শুল্ক প্রযোজ্য কি না। বিশেষ করে দামি গয়না, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি কেনার ক্ষেত্রে রসিদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করে রাখুন। এ ছাড়া লাগেজের ওজনসীমা মেনে চলাও জরুরি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে। তাই ভারী বা বড় আকারের জিনিস কেনার আগে ভেবে দেখুন লাগেজে জায়গা আছে কি না।
গুণমান, রিফান্ড ও ট্যাক্সের সুবিধা যাচাই করুন
ভ্রমণকালে কেনাকাটায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পণ্যের গুণমান ও সত্যতা। পর্যটন এলাকাগুলোয় অনেক সময় নকল বা নিম্নমানের পণ্য বিক্রি হয়। তাই ব্র্যান্ড, লেবেল ও ওয়ারেন্টি ভালোভাবে দেখে নিন। যদি দাম খুব কম মনে হয়, তাহলেও যাচাই করে নিন। অনেক সময় নকল জিনিস খুব কম দামে বিক্রি করে পর্যটকদের বোকা বানানো হয়। এ ছাড়া ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ট্যাক্স রিফান্ডের সুবিধা রয়েছে। কেনাকাটার সময় দোকান থেকে ‘ট্যাক্স রিফান্ড ফরম’ সংগ্রহ করে রাখলে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তা জমা দিয়ে কিছু অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। এটি অনেক বড় সাশ্রয়ের উপায় হতে পারে।
ভ্রমণে শপিং মানে শুধু নতুন কিছু কেনা নয়, বরং সেই দেশের সংস্কৃতি, রুচি ও মানুষের সঙ্গে এক আত্মিক সংযোগ তৈরি করা। তাই সচেতনভাবে কেনাকাটা করুন, কিছুটা গবেষণা করুন এবং মনে রাখুন, ভালো পরিকল্পনা মানেই ঝামেলামুক্ত শপিং ও আনন্দময় ভ্রমণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র ড ব যবহ র কর র র সময় ল নদ ন ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
ভ্রমণে শপিং: প্রস্তুতি, সতর্কতা ও করণীয়
ভ্রমণ মানে কি শুধুই ঘোরাফেরা আর খানাপিনা? মোটেই নয়। কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানে শপিং না করলে ভ্রমণ যেন কিছুটা পানসেই রয়ে যায়। বিশেষ করে দেশের বাইরে কোথাও গেলে শপিং ছাড়া ভ্রমণ যেন অসম্পূর্ণ। কারণ, অনেকেরই দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ বারবার মেলে না। নতুন জায়গার সংস্কৃতি, পোশাক, খাবার, এমনকি হস্তশিল্প—সবকিছুই আমাদের কৌতূহল জাগায়। আর এই কৌতূহল থেকেই শুরু হয় শপিংয়ের পরিকল্পনা। নিজের বা প্রিয়জনের জন্য অথবা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু না কিছু কিনতেই চান সবাই। তবে এই শপিংয়ের আনন্দ যেন ঝামেলা বা বিড়ম্বনায় পরিণত না হয়, সে জন্য বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
বাজেট ও পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি করুন
বিদেশে ঘুরতে গিয়ে শপিংয়ের মোহে পড়ে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কী কিনতে চান—পোশাক, কসমেটিকস, গিফট নাকি স্যুভেনির? এগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে রাখুন। শপিংয়ের সময় তালিকা অনুসরণ করলে বাড়তি খরচের ঝুঁকি কমবে। এ ছাড়া কোথাও যাওয়ার আগে কোন মার্কেটে বা শপিং মলে কোন জিনিস সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়, তা আগে থেকেই খোঁজ নিয়ে রাখলে সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হবে। ট্রাভেল ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও বা স্থানীয়দের পরামর্শ এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হতে পারে।
কার্ড ও পেমেন্টে সচেতন থাকুন
বিদেশে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ড দিয়ে লেনদেন করা সুবিধাজনক হলেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির হেড অব কার্ডস তাসনিম হোসেন বলেন, বিদেশে শপিং করার সময় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করলে। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ডগুলো সবচেয়ে উপযোগী। যেমন ইবিএলের ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে গ্রাহকেরা বিদেশি লেনদেনে বোনাস রিওয়ার্ড পয়েন্ট পান এবং আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক পার্টনারদের কাছ থেকে এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট ও ভ্রমণসুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
তাসনিম হোসেন আরও বলেন, দেশের বাইরে এসব কার্ড ব্যবহার করার সময় গ্রাহকদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রথমত, দেশের বাইরে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে কার্ডে আন্তর্জাতিক লেনদেন সক্রিয় আছে কি না এবং লেনদেনের সীমা সম্পর্কেও জেনে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া পেমেন্টের সময় সম্ভব হলে নিজেই পিওএস মেশিন ব্যবহার করা উচিত এবং কার্ড নম্বর, সিভিভি, ওটিপি বা মেয়াদের তারিখ কাউকে জানানো যাবে না। কেনাকাটার আগে পেমেন্টের পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে লেনদেন এবং বিদেশে কার্ড ব্যবহারে প্রযোজ্য চার্জ ও ফি সম্পর্কে আগেই জেনে নেওয়া ভালো।
তাসনিম হোসেন জানান, বিদেশে কার্ড ব্যবহার করলে কিছু অতিরিক্ত চার্জ ও ফি প্রযোজ্য হয়। সাধারণত মুদ্রা রূপান্তর ও লেনদেন প্রক্রিয়াজনিত ফি হিসেবে এসব চার্জ কাটা হয়। এই চার্জগুলো লেনদেনের মোট খরচে কিছুটা প্রভাব ফেললেও সাধারণত এটি খুব বড় অঙ্কের হয় না।
স্থানীয় বাজারগুলো থেকে কেনাকাটা করুন
বড় শপিং মল বা ব্র্যান্ডেড স্টোরে আপনি মানসম্পন্ন জিনিস পাবেন ঠিকই, কিন্তু স্থানীয় বাজারে ঘুরলে পাবেন প্রকৃত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া। হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক বা স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি পণ্য সাধারণত কম দামে এবং অনন্য ডিজাইনে পাওয়া যায় স্থানীয় বাজারগুলোতেই। সেই সঙ্গে দর-কষাকষি করতে মোটেও সংকোচ করবেন না। বেশির ভাগ স্থানীয় দোকানে দাম কিছুটা হলেও কমানো যায়। তবে কেনাকাটার সময় মান যাচাই করে নিন এবং পণ্যের উৎপত্তি বা ব্যবহৃত উপকরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন, জিনিসটি আসল না নকল।
কাস্টমস ও লাগেজের সীমা জেনে নিন
বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় অনেকেই কাস্টমসে বিপাকে পড়েন। তাই আগে থেকেই জেনে নিন কোন পণ্য কতটুকু পরিমাণে আনতে পারবেন, কোনো আইটেমে শুল্ক প্রযোজ্য কি না। বিশেষ করে দামি গয়না, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি কেনার ক্ষেত্রে রসিদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করে রাখুন। এ ছাড়া লাগেজের ওজনসীমা মেনে চলাও জরুরি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে। তাই ভারী বা বড় আকারের জিনিস কেনার আগে ভেবে দেখুন লাগেজে জায়গা আছে কি না।
গুণমান, রিফান্ড ও ট্যাক্সের সুবিধা যাচাই করুন
ভ্রমণকালে কেনাকাটায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পণ্যের গুণমান ও সত্যতা। পর্যটন এলাকাগুলোয় অনেক সময় নকল বা নিম্নমানের পণ্য বিক্রি হয়। তাই ব্র্যান্ড, লেবেল ও ওয়ারেন্টি ভালোভাবে দেখে নিন। যদি দাম খুব কম মনে হয়, তাহলেও যাচাই করে নিন। অনেক সময় নকল জিনিস খুব কম দামে বিক্রি করে পর্যটকদের বোকা বানানো হয়। এ ছাড়া ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ট্যাক্স রিফান্ডের সুবিধা রয়েছে। কেনাকাটার সময় দোকান থেকে ‘ট্যাক্স রিফান্ড ফরম’ সংগ্রহ করে রাখলে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তা জমা দিয়ে কিছু অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। এটি অনেক বড় সাশ্রয়ের উপায় হতে পারে।
ভ্রমণে শপিং মানে শুধু নতুন কিছু কেনা নয়, বরং সেই দেশের সংস্কৃতি, রুচি ও মানুষের সঙ্গে এক আত্মিক সংযোগ তৈরি করা। তাই সচেতনভাবে কেনাকাটা করুন, কিছুটা গবেষণা করুন এবং মনে রাখুন, ভালো পরিকল্পনা মানেই ঝামেলামুক্ত শপিং ও আনন্দময় ভ্রমণ।