সুপারিশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সময় বেঁধে দেওয়ার চিন্তা
Published: 13th, October 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে—সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে নিজেদের সুপারিশে এটি রাখার বিষয়টি কমিশনের বিবেচনায় আছে। আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনে এই সময় আরও বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে বলে কমিশন–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও ভোটের সময় এবং পথ–পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কমিশন এখনো তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেনি। তারা এটি নিয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য দল তিনটির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে কমিশন।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে কিছু প্রস্তাবে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত আছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য হলেও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো একমত হতে পারেনি।গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দলগুলো একমত। এখন কিসের ভিত্তিতে গণভোট হবে, গণভোটে কী কী বিষয় থাকবে এবং গণভোট কখন হবে—মোটাদাগে এই তিন বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে নিজেরা সুপারিশ দেবে। তবে এটি সনদের অংশ হবে না। আগামী ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগে আগামী বুধ বা বৃহস্পতিবার কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারকে দেবে।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ স্বাক্ষরে প্রস্তুত বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি, আছে ভাবনাও ১১ অক্টোবর ২০২৫ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে কিছু প্রস্তাবে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত আছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য হলেও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো একমত হতে পারেনি। গণভোটের সময় (জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে নাকি আগে হবে), কিসের ভিত্তিতে গণভোট হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার কত দিনের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন করা হবে—এসব বিষয়ে রাজনৈতিক মতভিন্নতা আছে।
কিসের ভিত্তিতে গণভোট হবে, গণভোটে কী কী বিষয় থাকবে এবং গণভোট কখন হবে—মোটাদাগে এই তিন বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে।গণভোটের আগে ‘বিশেষ আদেশ’জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, কমিশন মনে করছে, গণভোট করতে হলে আগে একটি বিশেষ আদেশ জারি করতে হবে। এটি হবে গণভোটের ভিত্তি। গণভোট কবে হবে—সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে চায় কমিশন। বিষয়টি ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকেও অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়টি দলগুলো মেনে নেবে বলে আশা করছে কমিশন।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামতে সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এই দাবি আছে। যেমন জামায়াতে ইসলামী বলেছে, আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে; প্রথম অধিবেশন হবে সংবিধান সভা।
সংসদ গঠিত হওয়ার বা আগামী সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করার সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে কমিশন। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে এ সময় আরও বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।যে কারণে সময় বেঁধে দেওয়ার চিন্তাঐকমত্য কমিশনের দুটি সূত্র থেকে জানা গেছে, কমিশন মনে করে আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার পর কত দিনের মধ্যে জুলাই সনদ বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার করবে; তার একটি সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। তা না হলে আগামী সংসদ প্রায় পুরো পাঁচ বছরই সময় নিয়ে নিতে পারে। এতে সংস্কার ঝুলে যাবে।
তবে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে প্রস্তাব করেছে—আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে, সেটা পুরোপুরি বাস্তবসম্মত বলে মনে করছে না ঐকমত্য কমিশন। কারণ, আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে অনেকগুলো কাজ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে অনেকগুলো অধ্যাদেশ জারি করেছে, সেগুলো অনুমোদনের জন্য তুলতে হবে প্রথম অধিবেশনে। এ ছাড়া আগামী সংসদে অন্তর্বর্তী সরকারের কমকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার বিষয়টিও আসতে পারে। সেটিও প্রথম অধিবেশনে করতে হবে।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান দুই দিন পেছাল১১ অক্টোবর ২০২৫তাই ঐকমত্য কমিশন মনে করে প্রথম অধিবেশনে সংবিধান–সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো পাস করা বাস্তবসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে সংসদ গঠিত হওয়ার বা আগামী সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করার সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে কমিশন। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে এ সময় আরও বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।
গণভোটে প্রশ্ন একটি রাখার চিন্তাযেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে গণভোটে সেগুলো কীভাবে উপস্থাপন করা হবে, তা নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশন প্রথমে চিন্তা করেছিল, এ ক্ষেত্রে দুটি প্যাকেজ করা। একটিতে থাকবে যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো। আরেকটিতে থাকবে ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো। দুটি আলাদা প্রশ্নে জানতে চাওয়া হবে এগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না। তবে এখন কমিশন একটি প্রশ্ন রাখার চিন্তা করছে। সেটি হলো পুরো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চান কি না। সেখানে ভিন্নমতসহ যেসব সিদ্ধান্ত আছে সেগুলোও থাকবে। যদি ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হয় তাহলে ৮৪টি প্রস্তাবে যেভাবে ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। সে ক্ষেত্রে ভিন্নমত গুরুত্ব পাবে না। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সনদ বাস্তবায়নের জন্য আগামী সংসদকে সময় বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করে বিএনপি। যদিও দলটি দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথাও বলেছিল।দলগুলোর অবস্থানবিএনপি চায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে আলাদা ব্যালটে গণভোট হোক। জুলাই সনদ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি ও তার ভিত্তিতে একটি অধ্যাদেশ করে গণভোট হতে পারে। সনদের অঙ্গীকারনামায় একটি অঙ্গীকার এভাবে যুক্ত করা—দলগুলো ভিন্নমতের বিষয় যার যার নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। যাতে নির্বাচিত হলে তারা সেই অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে। তবে সনদ বাস্তবায়নের জন্য আগামী সংসদকে সময় বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করে বিএনপি। যদিও দলটি দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথাও বলেছিল।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করার কাজ করছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কমিশনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। আগামী ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হবে। এর আগেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন।জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজএসব প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অবস্থান কাছাকাছি। তারা চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। গণভোট হতে হবে রাষ্ট্রপতির একটি বিশেষ আদেশের ভিত্তিতে। ভিন্নমত থাকা সিদ্ধান্তগুলো সনদে ও গণভোটে থাকবে। আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দিতে হবে।
এসব প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অবস্থান কাছাকাছি। তারা চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। গণভোট হতে হবে রাষ্ট্রপতির একটি বিশেষ আদেশের ভিত্তিতে। ভিন্নমত থাকা সিদ্ধান্তগুলো সনদে ও গণভোটে থাকবে।অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছেসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব বিষয়ে মতবিরোধ কমিয়ে আনতে ঐকমত্য কমিশন এই তিনটি দলের সঙ্গে আলাদাভাবে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে কমিশন। বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো.
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করার কাজ করছে কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কমিশনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। আগামী ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হবে। এর আগেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ক র প রস ত ব ন য় জ ল ই জ ত য় সনদ ভ ন নমত থ ক র অবস থ ন সরক র র ক গণভ ট ক গণভ ট হ গণভ ট র র জন য ক জ কর ন র জন সময় ব র সময় ব ষয়ট ইসল ম ব এনপ এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটের ব্যালট পেপার হবে রঙিন
এর আগে গতকাল দুপুরে গণভোট অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণভোট অধ্যাদেশের বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব আখতার আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এর আগে ১৩ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর ওই ভাষণের আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ আদেশ জারি করেন। তাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একই দিনে করার কথা জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ আইনি ভিত্তি পায়।
এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনায় ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয় জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে ৪৮টি প্রস্তাব সংবিধান-সংক্রান্ত। তবে বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ভিন্নমত আছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু সনদ ও গণভোটের আইনি ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থেকে যায়। গত ২৮ অক্টোবর সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প সুপারিশ সরকারকে দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
এখন গণভোট আয়োজনের লক্ষ্যে এ–সংক্রান্ত নতুন অধ্যাদেশ জারি করল সরকার।
গণভোটে প্রশ্ন কী হবে
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাদেশের বিষয়বস্তু তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, চার বিষয়ে গণভোটে প্রশ্ন থাকবে একটি। প্রশ্নটি হলো ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার–সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’ যাঁরা সম্মতি জানাবেন তাঁরা ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবেন এবং যাঁরা সম্মতি জানাবেন না তাঁরা ‘না’ ভোট দেবেন।
যে চারটি বিষয়ের ওপর গণভোট হবে সেগুলো হলো:
ক. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
গ. সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেসব বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
অধ্যাদেশে জুলাই সনদ অনুসারে যে ৩০টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো তফসিল আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে যত মেয়াদ বা যতবারই হোক, সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন, এ জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। এ রকম ঐকমত্য হওয়া অন্যান্য প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।
আরও যেসব বিধান আছে
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে, সেগুলোতেই গণভোট হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি করা ভোটার তালিকাই হবে গণভোটের ভোটার তালিকা। সংসদ নির্বাচনের সময়ই হবে গণভোটের সময়। তবে গণভোটের ব্যালট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট থেকে পৃথক হবে। গণভোটের ব্যালট হবে ভিন্ন রঙের; যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয়।
আসিফ নজরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বা পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে, তাঁরা গণভোটেও দায়িত্ব পালন করবেন।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যদি কোনো কারণে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মনে করেন ভোট নেওয়া যাচ্ছে না, তাহলে তিনি তা স্থগিত করতে পারবেন। এ–সংক্রান্ত অন্যান্য নিয়মকানুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই থাকবে।
গণভোট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল একই দিনে হবে বলে জানান উপদেষ্টা। আর গণভোট নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।
ভোটের মহড়া শনিবার
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের প্রস্তুতির তথ্য তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, এখন ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাঁর ধারণা, সব ঠিকমতো চললে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা সম্পন্ন হয়ে যাবে। সেই তালিকা অনুযায়ী তাঁরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন তিনি।
ইসি সচিব বলেন, দুই ধরনের ব্যালট পেপার থাকবে, দুই রঙের ব্যালট পেপার হবে। প্রথাগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার হয় সাদা-কালো। এ ক্ষেত্রে গণভোটের জন্য একটা রঙিন কাগজ ব্যবহার করা হবে।
যে চার শ্রেণির নাগরিকেরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তাঁরা হলেন প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী যাঁরা কর্মসূত্রে নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরে দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করেন, যাঁরা আইনি হেফাজতে আছেন এবং যাঁরা নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করেন।
গণভোটের কারণে ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ২৯ নভেম্বর শনিবার একটা রিহার্সাল (মহড়া) করবেন। তারপর সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে কি না।
প্রসঙ্গত, ইসি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সারা দেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ (বুথ) নির্ধারণ করেছে। ইসি এবার গড়ে ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং ৫০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি করে ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করেছে।
ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের হিসাব করা হয়েছিল শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করতে ভোটকেন্দ্র না হলেও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যা বাড়াতে হতে পারে। কারণ, দুটি ভোট দিতে সময় বেশি লাগবে। ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষ বাড়ানো হলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে।