পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মধ্যে কোন ইস্যু সংঘাতকে উসকে দিচ্ছে, অস্ত্রবিরতির পরও শঙ্কায় দুই দেশের মানুষ
Published: 14th, October 2025 GMT
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দের বাহরামচা জেলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তানি সেনার হাতে ৭ তরুণ নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁরা ঠিকা শ্রমিক হিসেবে সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করছিলেন। তবে গত দুই দিনের মধ্যে ঠিক কোন সময় এই ৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।
মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে নিহত সামরিক–বেসামরিক নাগরিকদের মরদেহ বিনিময় নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হয়েছে। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিচয়ও জানা গেছে। তালেবান বাহিনীর সদস্যও সংঘাতে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে একধরনের অনানুষ্ঠানিক অস্ত্রবিরতির বিষয়ে মোটামুটি দুই দেশ একমত হয়েছে। আপাতত পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পরস্পরকে আক্রমণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এ কথা জানিয়ে বলেছেন, কাতার ও সৌদি আরবের অনুরোধে লড়াই বন্ধ করা হয়েছে। তবে তিনি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘কাতার ও সৌদি আরব উভয় দেশই যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরাত তা মেনে নিয়েছে। তবে আমরা খবর পেয়েছি, পাকিস্তান হামলা চালাচ্ছে। এ হামলা অব্যাহত থাকলে আফগানিস্তান তার ভূখণ্ড রক্ষার অধিকার বজায় রেখে ব্যবস্থা নেবে।’
কাতার ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে বিবৃতি দিয়ে স্বল্পকালীন এই সংঘাতের বিরতি চেয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, উভয় পক্ষেরই সংলাপ, কূটনীতি ও সংযমকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত, যাতে উত্তেজনা কমানো ও সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যায়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই বার্তা দিয়ে বলেছে, উত্তেজনা কমাতে ইরান যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই আপাতত এই আবেদন মেনে লড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে একই সঙ্গে দুই দেশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা আবার লড়াইয়ে ফিরতে পারে, যদি তাদের মনে হয় যে তাদের ভূখণ্ডে অন্য দেশ প্রবেশ করছে।
দ্বিতীয় ‘গ্রেট গেম’এই যুদ্ধবিরতি কত দিন বজায় রাখা যাবে, তা নিয়ে দুই দেশের মানুষেরই একটা আশঙ্কা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, দুই দেশের তরফেই বেসামরিক নাগরিকেরা পরস্পরকে আক্রমণ করে পোস্ট দিচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার সকালেই বেশ কিছু পোস্ট এই প্রতিবেদকের চোখে পড়েছে।
আফগানিস্তানের নাগরিকদের বড় অংশ মনে করে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল পর্যন্ত তাদের, অর্থাৎ পাঠানদের ‘হোমল্যান্ড’ বা বাসভূমি। এর কারণ, ওই অঞ্চলে হাজার হাজার বছর ধরে পাঠানরা বসবাস করেছেন এবং করছেন। কিন্তু ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশরা সেখানে একটি সীমানা তৈরি করে পাঠানদের দুই ভাগ করে দেয়—ভারতের পাঠান ও আফগানিস্তানের পাঠান। অনেকটা বাঙালিদের মতোই।
উপমহাদেশের স্বাধীনতার পরে যখন দেশভাগ হয়, ভারতের পাঠানরা চলে যান পাকিস্তান অংশে। তাই পাঠানদের একটা ‘গ্রেটার’ বা বৃহত্তর আফগানিস্তানের দাবি দীর্ঘদিনের, যেটা পাকিস্তানের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়কেই উল্লেখ করে আজ মঙ্গলবার একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা; অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের এ অংশকে পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ে আসার কথাও বলা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব লেখা পাকিস্তান থেকেই প্রকাশ করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের সংকীর্ণ করিডর ওয়াখান।
করিডরটি পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়ে আফগানিস্তানকে চীনের জিনজিয়াংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। অঞ্চলটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চল। পাকিস্তানের মানুষের একাংশ মনে করে, আফগানিস্তান যদি বৃহত্তর ‘পাঠান হোমল্যান্ডের’ দাবি এগোতে ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেয়, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানেরও উচিত আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে বাদাখশান প্রদেশের প্রবল গুরুত্বপূর্ণ এই করিডরের দখল নেওয়া।
অর্থাৎ আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে একধরনের নতুন সমীকরণ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় তৈরি হচ্ছে। যেহেতু আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়াকে মধ্য এশিয়া এবং অন্যদিকে পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করছে, তাই তাদের বড় ধরনের ভূকৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।
উনিশ শতকেও ব্রিটিশ ও রুশদের মধ্যে আফগানিস্তানকে নিয়ে বড় ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যাকে সে সময় ‘গ্রেট গেম’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
বর্তমানে একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে ভারত এবং তার সঙ্গে একদিকে চীন ও অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থাকার কারণে কোনো দ্বিতীয় ‘গ্রেট গেম’–এর পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুফতি আবদুল মতিন কোয়ানি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আফগানিস্তান সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে আগ্রহী। কারও পাতা ফাঁদে সে পা দেবে না। তবে নিজের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড সুরক্ষিত রাখতে যা করা প্রয়োজন, তা করবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ও আফগ ন স ত ন আফগ ন স ত ন র
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মধ্যে কোন ইস্যু সংঘাতকে উসকে দিচ্ছে, অস্ত্রবিরতির পরও শঙ্কায় দুই দেশের মানুষ
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দের বাহরামচা জেলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তানি সেনার হাতে ৭ তরুণ নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁরা ঠিকা শ্রমিক হিসেবে সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করছিলেন। তবে গত দুই দিনের মধ্যে ঠিক কোন সময় এই ৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।
মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে নিহত সামরিক–বেসামরিক নাগরিকদের মরদেহ বিনিময় নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হয়েছে। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিচয়ও জানা গেছে। তালেবান বাহিনীর সদস্যও সংঘাতে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে একধরনের অনানুষ্ঠানিক অস্ত্রবিরতির বিষয়ে মোটামুটি দুই দেশ একমত হয়েছে। আপাতত পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পরস্পরকে আক্রমণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এ কথা জানিয়ে বলেছেন, কাতার ও সৌদি আরবের অনুরোধে লড়াই বন্ধ করা হয়েছে। তবে তিনি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘কাতার ও সৌদি আরব উভয় দেশই যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরাত তা মেনে নিয়েছে। তবে আমরা খবর পেয়েছি, পাকিস্তান হামলা চালাচ্ছে। এ হামলা অব্যাহত থাকলে আফগানিস্তান তার ভূখণ্ড রক্ষার অধিকার বজায় রেখে ব্যবস্থা নেবে।’
কাতার ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে বিবৃতি দিয়ে স্বল্পকালীন এই সংঘাতের বিরতি চেয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, উভয় পক্ষেরই সংলাপ, কূটনীতি ও সংযমকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত, যাতে উত্তেজনা কমানো ও সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যায়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই বার্তা দিয়ে বলেছে, উত্তেজনা কমাতে ইরান যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই আপাতত এই আবেদন মেনে লড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে একই সঙ্গে দুই দেশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা আবার লড়াইয়ে ফিরতে পারে, যদি তাদের মনে হয় যে তাদের ভূখণ্ডে অন্য দেশ প্রবেশ করছে।
দ্বিতীয় ‘গ্রেট গেম’এই যুদ্ধবিরতি কত দিন বজায় রাখা যাবে, তা নিয়ে দুই দেশের মানুষেরই একটা আশঙ্কা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, দুই দেশের তরফেই বেসামরিক নাগরিকেরা পরস্পরকে আক্রমণ করে পোস্ট দিচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার সকালেই বেশ কিছু পোস্ট এই প্রতিবেদকের চোখে পড়েছে।
আফগানিস্তানের নাগরিকদের বড় অংশ মনে করে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল পর্যন্ত তাদের, অর্থাৎ পাঠানদের ‘হোমল্যান্ড’ বা বাসভূমি। এর কারণ, ওই অঞ্চলে হাজার হাজার বছর ধরে পাঠানরা বসবাস করেছেন এবং করছেন। কিন্তু ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশরা সেখানে একটি সীমানা তৈরি করে পাঠানদের দুই ভাগ করে দেয়—ভারতের পাঠান ও আফগানিস্তানের পাঠান। অনেকটা বাঙালিদের মতোই।
উপমহাদেশের স্বাধীনতার পরে যখন দেশভাগ হয়, ভারতের পাঠানরা চলে যান পাকিস্তান অংশে। তাই পাঠানদের একটা ‘গ্রেটার’ বা বৃহত্তর আফগানিস্তানের দাবি দীর্ঘদিনের, যেটা পাকিস্তানের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়কেই উল্লেখ করে আজ মঙ্গলবার একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা; অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের এ অংশকে পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ে আসার কথাও বলা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব লেখা পাকিস্তান থেকেই প্রকাশ করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের সংকীর্ণ করিডর ওয়াখান।
করিডরটি পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়ে আফগানিস্তানকে চীনের জিনজিয়াংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। অঞ্চলটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চল। পাকিস্তানের মানুষের একাংশ মনে করে, আফগানিস্তান যদি বৃহত্তর ‘পাঠান হোমল্যান্ডের’ দাবি এগোতে ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেয়, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানেরও উচিত আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে বাদাখশান প্রদেশের প্রবল গুরুত্বপূর্ণ এই করিডরের দখল নেওয়া।
অর্থাৎ আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে একধরনের নতুন সমীকরণ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় তৈরি হচ্ছে। যেহেতু আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়াকে মধ্য এশিয়া এবং অন্যদিকে পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করছে, তাই তাদের বড় ধরনের ভূকৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।
উনিশ শতকেও ব্রিটিশ ও রুশদের মধ্যে আফগানিস্তানকে নিয়ে বড় ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যাকে সে সময় ‘গ্রেট গেম’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
বর্তমানে একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে ভারত এবং তার সঙ্গে একদিকে চীন ও অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থাকার কারণে কোনো দ্বিতীয় ‘গ্রেট গেম’–এর পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুফতি আবদুল মতিন কোয়ানি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আফগানিস্তান সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে আগ্রহী। কারও পাতা ফাঁদে সে পা দেবে না। তবে নিজের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড সুরক্ষিত রাখতে যা করা প্রয়োজন, তা করবে।’