জন্মবিরতিকরণ বড়ির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
Published: 14th, October 2025 GMT
বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে প্রচলিত ও কার্যকর পদ্ধতিগুলোর একটি জন্মবিরতিকরণ পিল বা বড়ি। নিয়মিত সঠিকভাবে খেলে গর্ভধারণ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর। তবে অন্যান্য ওষুধের মতো এটিরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। বিশেষত এর নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়বিক ঝুঁকির বিষয়ে জানা থাকা ভালো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড়ি সম্পূর্ণ নিরাপদ হলেও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কিছু বিরল ক্ষেত্রে নিউরোলজিক্যাল জটিলতা বাড়াতে পারে।
মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা
যেসব নারীর মাইগ্রেনের প্রবণতা আছে, বড়ি খাওয়া শুরু করলে তাঁদের মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। হরমোনের মাত্রা ওঠা-নামার কারণে এমনটি হয়ে থাকে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মবিরতিকরণ বড়ির প্রভাবে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা সামান্য বাড়াতে পারে। এ কারণে অল্পসংখ্যক নারীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ধমনিতে ক্লট বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যাঁদের আগে থেকেই মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপানের অভ্যাস বা রক্ত জমাট বাঁধার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা তুলনামূলক বেশি। তবে সাধারণত সুস্থ নারীদের জন্য এই ঝুঁকি খুবই কম।
সঠিকভাবে খেলে গর্ভধারণ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর। তবে অন্যান্য ওষুধের মতো এটিরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।কখন বুঝবেন আপনি ঝুঁকিতে
অধিকাংশ নারীই তাঁদের প্রজনন বয়সের (১৫-৪৮ বছর বয়স) দীর্ঘ সময় ধরে নিরাপদে জন্মবিরতিকরণ বড়ি সেবন করতে পারেন। তবে একটানা কত দিন বড়ি খাওয়া নিরাপদ, তা নির্ভর করে বয়স, স্বাস্থ্যগত ইতিহাস কিংবা সমস্যা আর পিলের ধরনের ওপর। তবে মাঝপথে গর্ভধারণ বা ডোজ পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। জন্মবিরতিকরণ বড়ি সেবন শুরুর পর যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
তীব্র ও অস্বাভাবিক মাথাব্যথা, যা আগে কখনো হয়নি বা মাইগ্রেনের পরিচিত ধরন নয়।
কথা বলতে অসুবিধা বা হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া কিংবা দৃষ্টিশক্তি হারানো।
হঠাৎ শরীরের এক পাশে অথবা নিম্নাংশে দুর্বলতা বা অসাড়তা।
পেটে, বুকে বা পায়ে তীব্র ব্যথা, যা রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ হতে পারে।
যদি এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত বড়ি খাওয়া বন্ধ করে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত।
ডা.
হিমেল বিশ্বাস: ক্লিনিক্যাল স্টাফ, স্কয়ার নিউরোসায়েন্স সেন্টার, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র পদ
এছাড়াও পড়ুন:
ইতিহাসের অভিনব পাঠ
বাংলাদেশের ইতিহাস–পাঠের ক্ষেত্রে হরহামেশা যে গলদ চোখে পড়ে, তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোর নিরিখে চিহ্নিত করা সম্ভব। ইতিহাসকে সাংস্কৃতিক রাজনীতির নিরিখে না দেখে কেবলই তা রাষ্ট্রীয় কিংবা নির্ধারিত ক্ষমতাকাঠামোর বিবেচনায় দেখার ঐতিহাসিক প্রবণতার কারণে অনেক সময় বৃহৎ জনসমাজ বিবেচনার বাইরে রয়ে যায়। সাংস্কৃতিক রাজনীতি যেসব বিষয় নিয়ে তার আলোচনা জারি রাখে তার মধ্যে অন্যতম সংস্কৃতি ও ক্ষমতা-সম্পর্ক। বাংলাদেশ-পাঠের ক্ষেত্রে রাফাত আলম এই দুই বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।
এই গ্রন্থে ইতিহাসের যে ধারণা বা তত্ত্ব ব্যবহৃত হয়েছে, তা প্রথাগত কাঠামোবাদী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে আলাদা তা বলা যায়। এখানে লেখক ঐতিহাসিক সমালোচনামূলক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই পদ্ধতি রাফাত আলম এই গ্রন্থে কীভাবে কার্যকর রেখেছেন? শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে লেখা প্রবন্ধটির দিকে নজর দিলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে নির্দলীয় ইতিহাস-নির্মাণ বিবেচনায় না রেখে প্রায়ই তাঁকে দলীয় বিচার-বিবেচনায় বিচার করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের ভেতর দিয়ে, তা অনেকেই চেপে যেতে চান। কিন্তু এই যে পাকিস্তান-আন্দোলন এবং তার সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক চেপে যাওয়া—একার্থে তা তাঁর সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাসকে এড়িয়ে একটি স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ইতিহাস নির্মাণ করা, যা সুবিধাবাদী ধারণার ভেতরেই প্রোথিত থাকে। এই গ্রন্থের “শেখ মুজিবের ‘পাকিস্তান-আন্দোলন’ পাঠ: আত্মজীবনীর দর্পণে” শীর্ষক প্রথম প্রবন্ধে জীবনী-সাহিত্যের পটভূমিকায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক কর্মতত্পরতার বিষয়টি বিশেষভাবে স্পষ্ট করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
দ্বিতীয় প্রবন্ধের শিরোনাম: ‘মুনীর চৌধুরীর গল্পসাহিত্য: নবোদ্ভিন্ন বাঙালির জীবনভাষ্য’। প্রবন্ধটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মুনীর চৌধুরীর গল্প নিয়ে। কিন্তু এই প্রবন্ধের বিষয় কেবল গল্প নয়, বরং গল্পের সীমানা পেরিয়ে ঢাকায় নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ-সময় আর সেই সময়ে যাপিত মানুষজনের কাছে নিয়ে যায়।
এই প্রবন্ধগ্রন্থের সর্বশেষ প্রবন্ধ অ্যাকাডেমিক সংগঠক মুহম্মদ আবদুল হাই: ‘পাকিস্তান’ থেকে ‘বাংলাদেশ’। যে কেউ আবদুল হাই সম্পর্কে জানতে গেলে এই সত্য খুঁজে পাবেন যে তিনি তাঁর জীবনের প্রথম দিকে তীব্রভাবে পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। রাফাত আলম প্রবন্ধটিতে আবদুল হাইয়ের এই চিন্তা-ধারণা আর কর্মপরিসরের সক্রিয়তা বিষয়েই আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
গ্রন্থটির প্রতিটি প্রবন্ধে লেখকের এই দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয় থেকেছে। ইতিহাসের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াশীলতার বিবেচনায় ‘বাংলাদেশ-পাঠ’ বিষয়টি তাই ভিন্ন মাত্রা অর্জনে সমর্থ হয়েছে। পাঠক গ্রন্থ পাঠের পর এই সত্য নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারবেন।
বাংলাদেশ পাঠ: সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াশীলতার অনুষঙ্গে
রাফাত আলম
প্রকাশক: ইউপিএল
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদ: আল নোমান;
পৃষ্ঠা: ১৫৪; মূল্য: ৬০০ টাকা