মোদি সরকারের তালেবান তোষামোদ দেখে ‘লজ্জায় মাথা কাটা’ যাচ্ছে জাভেদ আখতারের
Published: 14th, October 2025 GMT
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তালেবান তোষামোদিতে ক্ষুব্ধ কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতার। বলেছেন, লজ্জায় তাঁর মাথা কাটা যাচ্ছে।
ভারত সফররত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে মোদি সরকারের রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়ার নিন্দা করে প্রবীণ এই কবি বলেছেন, যারা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড়াই করে তাদের এই স্খলন দেখে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে মুত্তাকি বর্তমানে এ দেশে রয়েছেন। তাঁকে ঘিরে প্রবল বিতর্ক দেখা দেয় গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায়। সমালোচনার মুখে পড়ে পর দিন মুত্তাকি অবশ্য নারী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান।
তবে তা সত্ত্বেও মোদি সরকারকে এই নতুন তালেবান প্রেম নিয়ে কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। কবি ও হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় গীতিকার জাভেদ আখতারের সমালোচনা তারই পরিচয়।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে ভারত এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। আসলে রাশিয়া ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।
রাশিয়া ও ভারত সফরের জন্য সেই নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘ সাময়িকভাবে শিথিল করেছে। ফলে রাশিয়া হয়ে মুত্তাকি ভারতে আসেন। হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন। যদিও সেই বৈঠকে ভারত ও আফগানিস্তানের পতাকা ছিল না।
পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কহানি ও সে দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির দরুন ভূকৌশলগত কারণে ভারত ও তালেবান নেতৃত্ব কাছাকাছি এসেছে। তালেবান সরকার পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের নিন্দাও জানিয়েছিল। ২০২১ সালে আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর এই প্রথম তালেবান সরকারের কোনো প্রতিনিধি সরকারি সফরে ভারতে এলেন।
হায়দরাবাদ হাউসে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর মুত্তাকি নয়াদিল্লির আফগান দূতাবাসে ১১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে নারী সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সেটা ছিল পুরোপুরি পুরুষ সংবাদকর্মীদের জন্য। নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন করা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নানা মহল সরব হয়। সমালোচনা ও প্রতিবাদের বন্যা বইতে থাকে।
তা থেকে বাঁচতে পরদিন ১২ অক্টোবর মুত্তাকি নারী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান। সেখানে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। আমন্ত্রিতদের তালিকা সংক্ষিত রাখা হয়েছিল। টেকনিক্যাল কারণে নারী সাংবাদিকদের ডাকা যায়নি। নেপথ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
ওই যুক্তি বা অজুহাত জাভেদ আখতারকে সন্তুষ্ট করেনি। ‘এক্স’ মারফত নিজের অখুশি প্রকাশ করে তালেবান নেতৃত্বের পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি সরকারকেও একহাত নিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে নিয়ে ভারত সরকার যে আদিখ্যেতা দেখিয়েছে, তাতে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে গেছে। ওই বাড়াবাড়ি করেছে সেই সরকার (ভারত) যারা সব ধরনের মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে চলেছে।
জাভেদ আখতারের সমালোচনার হাত থেকে বাঁচেনি উত্তর প্রদেশের ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দও। নারীবর্জিত সংবাদ সম্মেলনের পর মুত্তাকি দেওবন্দে গিয়েছিলেন।
দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ মুত্তাকিকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়ায় জাভেদ লেখেন, দেওবন্দ তাদের ইসলামি হিরোকে মাথায় তুলে নেচেছে। অথচ তারাই নিজেদের দেশে নারীশিক্ষা শিকেয় তুলেছে। আমাদের কী যে হয়েছে কে জানে!
নারী বর্জনের খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ায় মুত্তাকির পাশাপাশি ভারত সরকারও পড়ে প্রবল সমালোচনার মুখে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফাই দিতে গিয়ে জানায়, সংবাদ সম্মেলনে তাদের কোনো হাত ছিল না।
সরকারের যুক্তি, সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছিল আফগান সরকার। তা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আফগানিস্তান দূতাবাসে যা ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক রক্ষাকবচের আওতাভুক্ত।
এই যুক্তি সত্ত্বেও বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ উঠতে থাকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র, পি চিদম্বরমের মতো নেতারা সমালোচনায় মুখর হন।
স্ত্রী শাবানা আজমির সঙ্গে জাভেদ আখতার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল ব ন সরক র আফগ ন স ত ন র জ ভ দ আখত র পরর ষ ট র আমন ত র সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
রামগঞ্জে অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের ২ আরোহী নিহত
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের ২ আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার খলিফার দরজা ও কাটাখালি এলাকায় রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের উদনপাড়া গ্রামের আটিয়া বাড়ির মো. শাহজাহানের ছেলে হৃদয় হোসেন (২৫) ও একই এলাকার মো. শফিকের ছেলে নাজমুল হাসান (২৪)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হৃদয় ও নাজমুল মোটরসাইকেলে কাটাখালি থেকে রামগঞ্জ উপজেলা শহরে যাচ্ছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে হৃদয় ও নাজমুল সড়কে ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মারা যান হৃদয়। নাজমুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় রেফার করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে নাজমুলও মারা যান।
রামগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় একজনকে আহত ও একজনকে নিহত অবস্থায় হাসপাতাল আনা হয়। আহতদের ঢাকায় পাঠানোর পথে মারা গেছেন।’’
রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই অটোরিকশাচালক পালিয়ে গেছেন। নিহতদের পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/লিটন/রাজীব