রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হওয়ার এক দিন পরও পুলিশ এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বুধবার রাতে নিহত পোশাকশ্রমিক ছানোয়ার হোসেনের ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে আলম রাসায়নিকের গুদামের মালিক শাহ আলমসহ আটজনের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে রূপনগর থানায় মামলা করেন।

বৃহস্পতিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এজাহারভুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন ‘আলম কেমিক্যাল গোডাউন’ নামের ওই রাসায়নিকের গুদামের ব্যবস্থাপক আকরাম, এভারগ্রিন কালার প্রিন্ট ফ্যাক্টরির মালিক, ব্যবস্থাপক, এনআরএস-ওয়াস ফ্যাক্টরির মালিক, এনআরএস-ওয়াস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক, শাহ আলী ওয়াস ফ্যাক্টরি মালিক, শাহজালী ওয়াস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রূপনগর থানায় হওয়া মামলায় অভিযোগ করা হয়, শাহ আলম আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য শিয়ালবাড়ি আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অনুমোদনহীন ভবনে দাহ্য পদার্থ মজুত করেন। গত মঙ্গলবার এই গুদামে আগুন লাগলে তা দ্রুত আশপাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে পাশের ভবনে থাকা এভারগ্রিন কালার প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, এনআরএস ওয়াস ফ্যাক্টরি ও শাহ আলী ওয়াস ফ্যাক্টরিতেও আগুন লাগে। আগুনের ভয়ে এসব কারখানার শ্রমিকেরা দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করেন।

শ্রমিকেরা ভবনগুলো থেকে নামার কোনো সেফ এক্সিট পাননি। আবার কয়েকটি ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগানো ছিল। শ্রমিকেরা প্রাণ বাঁচাতে ভবনের ছাদে গিয়েও বের হতে পারেননি। সেখানেও তালা লাগানো ছিল। মামলার আসামিরা আবাসিক এলাকার ভবনগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা মাথায় না রেখে কারখানা পরিচালনা করে আসছিলেন। ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ–ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে আগুনে পুড়ে ১৬ জন শ্রমিক নিহত হন।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কারখানার যন্ত্রাংশ, কাঁচামালসহ বিভিন্ন রাসায়নিক এবং ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ৩টি মোটরসাইকেল, ১৫টি গ্যাস সিলিন্ডার, রাস্তায় থাকা পিকআপের সামনের অংশসহ ২টি রিকশা পুড়ে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ৩০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

১৬ মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে নিহত ১৬ জনের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.

মুখলেছুর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার ছয় মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তাঁরা হলেন মাহিরা আক্তার (১৪), নার্গিস আক্তার (১৮), নুরে আলম (২৩), সানোয়ার হোসেন (২২), আবদুল্লাহ আল-মামুন (৩৯) ও রবিউল ইসলাম রবিন (১৯)।

বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়া ১০ মরদেহের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মুনা আক্তার সামিরা (১৪), ফারজানা আক্তার (১৫) ও মুক্তা আক্তার (৩০)। বাকি এক নারী ও ছয় পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ময়ন তদন ত ভবনগ ল শ হ আল

এছাড়াও পড়ুন:

হংকংয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা, নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে হংকংয়ের নেতাদের শোক

বিশাল আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে হংকংয়ের নেতারা আজ শনিবার একটি শোক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। প্রায় ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার কয়েক দিন পরেও ২০০ জন নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসন কমপ্লেক্স সংস্কার কাজে সম্ভাব্য দুর্নীতি ও অনিরাপদ উপকরণ ব্যবহারের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

গত বুধবার বিকেলে ওই আবাসন কমপ্লেক্সে আগুন লাগে এবং দ্রুত ৩২ তলাবিশিষ্ট আটটি ভবনের মধ্যে সাতটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সংস্কারকাজের জন্য ভবনগুলো বাঁশের মাচা ও দাহ্য ফোম ইনসুলেশন দিয়ে মোড়ানো ছিল। আগুন লাগার পর সেখানে ফায়ার অ্যালার্মও ঠিকমতো কাজ করেনি বলে জানা গেছে।

চীনের মূল ভূখণ্ডের সীমান্তের কাছে তাই পো এলাকার ওয়াং ফুক কোর্ট কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিক উদ্ধার অভিযান গতকাল শুক্রবার শেষ হলেও পুলিশ জানিয়েছে, চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে পুড়ে যাওয়া ভবনগুলোতে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। আরও মরদেহ পাওয়া যেতে পারে।

গত বুধবার বিকেলে ওই আবাসন কমপ্লেক্সে আগুন লাগে এবং দ্রুত ৩১ তলাবিশিষ্ট আটটি ভবনের মধ্যে সাতটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সংস্কারকাজের জন্য ভবনগুলো বাঁশের মাচা ও দাহ্য ফোম ইনসুলেশন দিয়ে মোড়ানো ছিল। আগুন লাগার পর সেখানে ফায়ার অ্যালার্মও ঠিকমতো কাজ করেনি বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুনহংকংয়ে আবাসিক কমপ্লেক্সে লাগা আগুন ৪২ ঘণ্টা পর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, মৃতের সংখ্যা ১২৮২২ ঘণ্টা আগে

হংকংয়ের নেতা জন লি ও অন্যান্য কর্মকর্তা আজ সকালে সরকারি অফিসগুলোর বাইরে তিন মিনিট নীরবতা পালন করেন এবং শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এ সময় অফিসগুলোতে হংকং ও চীনের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

আরও পড়ুনহংকংয়ের অগ্নিকাণ্ড ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৪২৮ নভেম্বর ২০২৫

নিরাপত্তাপ্রধান ট্যাং জানিয়েছেন, নিহত ১২৮ জনের মধ্যে মাত্র ৩৯ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। জন লি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩ কোটি ৯ লাখ ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছেন এবং বিভিন্ন কোম্পানি ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুনছবিতে হংকংয়ের ভয়াবহ আগুন২৭ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্র-প্রাইভেট কারসহ ৬ জন গ্রেপ্তার: ডিএমপি
  • হংকংয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা, নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে হংকংয়ের নেতাদের শোক