তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের মশাল প্রজ্জ্বালনের কর্মসূচি পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে লালমনিরহাটে ট্রাকের ধাক্কায় আব্দুল মান্নান সরকার সাবু (৫০) নামের এক কলেজ শিক্ষক নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তার সহকর্মী প্রভাষক সামসুল ইসলাম। 

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের মশাল প্রজ্জ্বালনের কর্মসূচি পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের মন্ডলেরহাট এলাকায় তারা দুর্ঘটনায় পড়েন।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ২

বরিশালে বাসচাপায় স্কুলছাত্র নিহত

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত আব্দুল মান্নান সরকার সাবু লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও জিয়া পরিষদের সদস্য ছিলেন। আহত প্রভাষক সামসুল ইসলাম একই কলেজের প্রভাষক এবং জিয়া পরিষদের পৌর শাখার সভাপতি।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, লালমনিরহাট থেকে রংপুর অভিমুখে যাওয়া একটি দ্রুতগামী ট্রাক মন্ডলেরহাট নামক স্থানে লালমনিরহাট অভিমুখে আসা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রভাষক আব্দুল মান্নান সরকার সাবু মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান এবং প্রভাষক সামসুল ইসলাম গুরুতর আহত হন।

স্থানীয়রা আহত সামসুল ইসলামকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুর্ঘটনার পরই ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যান চালক।

আব্দুল মান্নান সাবুর মৃত্যুর খবরে লালমনিরহাট শহরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ডা.

গোলাম আতাহার সাদিক সোয়াদ মৃত্যুর এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে সাবুর মৃত্যু হয়।

লালমনিরহাট সদর থানার ওসি নুরুন্নবী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। ট্রাকটিকে ধরা সম্ভব হয়নি।

তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে আবারো উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চল। 'জাগো বাহে তিস্তা বাঁচই’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা- এই পাঁচ জেলায় একযোগে ১১টি স্থানে মশাল প্রজ্জালন করা হয়, সেই আলোর আহ্বান ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একই সময়ে ১১টি স্থানে হাজার হাজার মশাল জ্বালিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে সব অন্ধকার দূর করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে, ‘জাগো বাহে, কুন্ঠে সবাই’; ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’। 

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু আলোর মশাল প্রজ্জ্বালন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তে লাখো হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরে মশাল। এই কর্মসূচির লালমনিরহাট জেলায় অংশ নিয়েছিলেন কলেজ শিক্ষক সাবু।

ঢাকা/সিপন/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

১১ মাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে ৭৩টি ঘটনার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়: এইচআরসিবিএম

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সংঘটিত ৭৩টি ঘটনার শিকার হয়েছে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (এইচআরসিবিএম)।

সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে এইচআরসিবিএম এই তথ্য তুলে ধরে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ করেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক আইনজীবী লাকী বাছাড়। ভুক্তভোগীদের আবেদন এবং প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এইচআরসিবিএম এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

ধর্ম অবমাননার নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভুক্তভোগী করার ঘটনাকে ‘গভীর সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এইচআরসিবিএম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে তারা ৭৩টি ধর্ম অবমাননার অভিযোগভিত্তিক ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৪০টি ঘটনায়। পাঁচটি ঘটনায় মামলা হয়নি। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ২৩টি ঘটনার তথ্য বিস্তারিতভাবে সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।

প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি ধর্ম অবমাননার ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভুক্তভোগী হওয়ার বিস্তারিত উল্লেখ করেছে এইচআরসিবিএম। এর মধ্যে একটি ঘটনা ব্যাখ্যা করে এইচআরসিবিএম বলেছে, গত ২৩ অক্টোবর খুলনার দাকোপ থানার পূর্বায়ন মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এইচআরসিবিএমের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, প্রকৃতপক্ষে সনাতন ধর্মের ‘দেবী কালী’কে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করেছিলেন আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। আবদুর রহমানের সেই মন্তব্যের জবাব দেন পূর্বায়ন মণ্ডল। পূর্বায়ন এখনো কারাগারে থাকলেও আবদুর রহমান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ধর্ম অবমাননার অপব্যবহার বন্ধের জন্য আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এইচআরসিবিএম। আইনজীবী লাকী বাছাড় প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ম অবমাননার নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভুক্তভোগী করার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তাঁরা শুধু ভুক্তভোগীদের সরাসরি অভিযোগ এবং তাঁদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে তথ্য পেয়েছেন, সেসবই উল্লেখ করেছেন প্রতিবেদনে।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি যশোরের অভয়নগর উপজেলার বনগ্রামের বাসিন্দা শান্তি রানী ভদ্রের জমি থেকে জোরপূর্বক গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে এইচআরসিবিএম বলেছে, শান্তি রানী একজন বয়স্ক বিধবা। তিনি অভয়নগর থানায় অভিযোগ করলেও থানা বিষয়টি এখনো এজাহারভুক্ত করেনি। বিষয়টিকে সংখ্যালঘুরা নিজের জমি নিয়ে নিরাপদ থাকতে পারছে না বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

ঠাকুরগাঁওয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পরীক্ষার পর বাড়ি ফেরার পথে গত ২৭ নভেম্বর কালো মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগও করেছে এইচআরসিবিএম। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছে, এখনো সেই ছাত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঘটনাটিকে দেশে সংখ্যালঘু মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ