বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে তিনি হয়েছিলেন ‘গুরু মা’
Published: 17th, October 2025 GMT
ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বাইয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন পূজনীয় ও সম্মানীয়। মুম্বাইয়ের ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের কাছে আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জ্যোতি। রফিক নগর এবং গোভান্ডির মতো এলাকায় ২০ টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। একসময় ‘গুরু মা’ উপাধিও দেওয়া হয় তাকে। তবে শেষ পর্যন্ত জানা গেলো, এই ‘গুরু মা’ ভারতীয় নন, বরং বাংলাদেশের নাগরিক। গত তিন দশক ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন।
মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত জ্যোতির আসল নাম বাবু আয়ান খান। তিনি প্রায় ৩০ বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি ভুয়া ভারতীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং জন্মের সনদ। সম্প্রতি নথি যাচাই প্রক্রিয়া চলাকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তারা যখন তার নথিতে অসঙ্গতি লক্ষ্য করেন তখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্য ঘটনা সামনে আসে।
সম্প্রতি মুম্বাইয়ের শিবাজি নগরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে যখন ধরপাকড় শুরু হয় তখনই বাবু আয়ান খানকে আটক করে মুম্বাই পুলিশ। এসময় তার কাছে ভারতে বসবাসের বৈধ নথি এবং একজন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের প্রমাণ পত্র চাওয়া হয়। পরে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডসহ ভুয়া ভারতীয় নথি পেশ করে কার্যত তদন্তকারীদের নজর এড়িয়ে ছাড়া পেয়ে যান তিনি। তবে প্রাথমিকভাবে সেসময় পুলিশের সন্দেহ দানা বাঁধে এবং তারপর থেকেই তার গতিবিধির উপরে বিশেষ নজর রাখা হয়, এমনকি তার কাছ থেকে প্রাপ্ত ওই ভারতীয় নথির সত্যতা সম্পর্কে যাচাই বাছাই করতে থাকেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অবশেষে সেই নথি ভুয়া প্রমাণিত হলে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ।
ওই ভুয়া নথি কিভাবে এবং কার সহায়তায় জ্যোতি ওরফে আয়ান তৈরি করেছিল তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পাশাপাশি এর সাথে বড় কোন চক্র জড়িত রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সুচরিতা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১১ মাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে ৭৩টি ঘটনার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়: এইচআরসিবিএম
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সংঘটিত ৭৩টি ঘটনার শিকার হয়েছে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (এইচআরসিবিএম)।
সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে এইচআরসিবিএম এই তথ্য তুলে ধরে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ করেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক আইনজীবী লাকী বাছাড়। ভুক্তভোগীদের আবেদন এবং প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এইচআরসিবিএম এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
ধর্ম অবমাননার নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভুক্তভোগী করার ঘটনাকে ‘গভীর সংকট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এইচআরসিবিএম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে তারা ৭৩টি ধর্ম অবমাননার অভিযোগভিত্তিক ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৪০টি ঘটনায়। পাঁচটি ঘটনায় মামলা হয়নি। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ২৩টি ঘটনার তথ্য বিস্তারিতভাবে সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি ধর্ম অবমাননার ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভুক্তভোগী হওয়ার বিস্তারিত উল্লেখ করেছে এইচআরসিবিএম। এর মধ্যে একটি ঘটনা ব্যাখ্যা করে এইচআরসিবিএম বলেছে, গত ২৩ অক্টোবর খুলনার দাকোপ থানার পূর্বায়ন মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এইচআরসিবিএমের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, প্রকৃতপক্ষে সনাতন ধর্মের ‘দেবী কালী’কে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করেছিলেন আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। আবদুর রহমানের সেই মন্তব্যের জবাব দেন পূর্বায়ন মণ্ডল। পূর্বায়ন এখনো কারাগারে থাকলেও আবদুর রহমান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ধর্ম অবমাননার অপব্যবহার বন্ধের জন্য আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এইচআরসিবিএম। আইনজীবী লাকী বাছাড় প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ম অবমাননার নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভুক্তভোগী করার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তাঁরা শুধু ভুক্তভোগীদের সরাসরি অভিযোগ এবং তাঁদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে তথ্য পেয়েছেন, সেসবই উল্লেখ করেছেন প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি যশোরের অভয়নগর উপজেলার বনগ্রামের বাসিন্দা শান্তি রানী ভদ্রের জমি থেকে জোরপূর্বক গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে এইচআরসিবিএম বলেছে, শান্তি রানী একজন বয়স্ক বিধবা। তিনি অভয়নগর থানায় অভিযোগ করলেও থানা বিষয়টি এখনো এজাহারভুক্ত করেনি। বিষয়টিকে সংখ্যালঘুরা নিজের জমি নিয়ে নিরাপদ থাকতে পারছে না বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
ঠাকুরগাঁওয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পরীক্ষার পর বাড়ি ফেরার পথে গত ২৭ নভেম্বর কালো মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগও করেছে এইচআরসিবিএম। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছে, এখনো সেই ছাত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঘটনাটিকে দেশে সংখ্যালঘু মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।