ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বাইয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন পূজনীয় ও সম্মানীয়। মুম্বাইয়ের ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের কাছে আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জ্যোতি। রফিক নগর এবং গোভান্ডির মতো এলাকায় ২০ টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। একসময় ‘গুরু মা’ উপাধিও দেওয়া হয় তাকে। তবে শেষ পর্যন্ত জানা গেলো, এই ‘গুরু মা’ ভারতীয় নন, বরং বাংলাদেশের নাগরিক। গত তিন দশক ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন।

মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে,  অভিযুক্ত জ্যোতির আসল নাম বাবু আয়ান খান। তিনি প্রায় ৩০ বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি ভুয়া ভারতীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং জন্মের সনদ। সম্প্রতি নথি যাচাই প্রক্রিয়া চলাকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তারা যখন তার নথিতে অসঙ্গতি লক্ষ্য করেন তখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্য ঘটনা সামনে আসে। 

সম্প্রতি মুম্বাইয়ের শিবাজি নগরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে যখন ধরপাকড় শুরু হয় তখনই বাবু আয়ান খানকে আটক করে মুম্বাই পুলিশ। এসময় তার কাছে ভারতে বসবাসের বৈধ নথি এবং একজন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের প্রমাণ পত্র চাওয়া হয়। পরে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডসহ ভুয়া ভারতীয় নথি পেশ করে কার্যত তদন্তকারীদের নজর এড়িয়ে ছাড়া পেয়ে যান তিনি। তবে প্রাথমিকভাবে সেসময় পুলিশের সন্দেহ দানা বাঁধে এবং তারপর থেকেই তার গতিবিধির উপরে বিশেষ নজর রাখা হয়, এমনকি তার কাছ থেকে প্রাপ্ত ওই ভারতীয় নথির সত্যতা সম্পর্কে যাচাই বাছাই করতে থাকেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অবশেষে সেই নথি ভুয়া প্রমাণিত হলে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। 

ওই ভুয়া নথি কিভাবে এবং কার সহায়তায় জ্যোতি ওরফে আয়ান তৈরি করেছিল তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পাশাপাশি এর সাথে বড় কোন চক্র জড়িত রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
 

সুচরিতা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে

এ দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ–সম্পর্কিত পরিসংখ্যান একটি ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরছে—অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জীবন-মৃত্যু নির্ধারণ করছে মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা। অপরাধ প্রমাণের তো প্রশ্নই নেই, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়েরও প্রয়োজন দেখা হচ্ছে না; শুধু সন্দেহবশত মব তৈরি করে কিংবা গণপিটুনি দিয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

মাগুরার মহম্মদপুরে মো. ইসরাফিলকে মুঠোফোন ও টাকা চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার ভাই মামলা করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনা ‘জটিল’ ও ‘স্পর্শকাতর’। প্রশ্ন হলো, একজন মানুষ হত্যার পর জটিলতার অজুহাত কেন? অপরাধী শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘নীরব’ থাকা কি আদৌ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ?

প্রথম আলোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৩ মাসে গণপিটুনিতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। ৪৬টি ঘটনায় মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ১.২৭ শতাংশ আসামি। অর্থাৎ প্রায় ৯৯ শতাংশ হত্যাকারী নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থা যখন এমনভাবে ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, রাষ্ট্র কোথায়?

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর মব বা গণপিটুনির মতো সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়েছে। মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিশোধের রাজনীতি যেখানে বিচার-বিবেচনাকে গ্রাস করে, সেখানে গণপিটুনি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মব সহিংসতার শিকারদের মধ্যে শিশুও যেমন আছে, তেমনি মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষও রয়েছে। আরও ভয়ংকর হলো, কেউ কেউ এসব ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ বলে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, অপরাধীও আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাও ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত হিসেবে আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার কথা বলেছে। তাহলে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কীভাবে রাস্তায় ‘বিচার’ চালানোর অধিকার পেল?

পুলিশ কর্মকর্তাদের যুক্তি হলো, গুজব বা তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় ঘটনাগুলো ঘটে এবং জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যখন ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমের নজরে পড়ে, তখনই কেন গ্রেপ্তার হয়? রংপুরের একটি ঘটনায় দলিত সম্প্রদায়ের দুজনকে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে ঘটনাগুলো আলোচিত নয়, সেখানে তদন্ত ও গ্রেপ্তার শূন্যের কোঠায়। এর মানে স্পষ্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘সিলেকটিভ’ তৎপরতা চালায়। কিছু ঘটনায় মামলা শেষ পর্যন্ত হয়ই না। পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে ভয় পান—শত্রু তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করেন। 

গণপিটুনি শুধু আইন ভাঙা নয়, এটি বর্বরতার চূড়ান্ত। একটি সমাজ তখনই বর্বর হয়, যখন অভিযোগ প্রমাণের আগেই শাস্তি দেওয়া হয়। এ রকম অবস্থায় রাষ্ট্রকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে: কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন হাতে তুলে নিলে শাস্তি হবেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত প্রতিটি গণপিটুনি মামলার অগ্রগতি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্তে প্রযুক্তির ব্যবহার করা।

অন্যায়ের বিচার না হলে সেই অন্যায় চলতেই থাকে। শুধু মামলা নেওয়া বা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা নয়; রাষ্ট্রের কর্তব্য ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন করাও। এর পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মনস্তাত্ত্বিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। সমাজেরও উপলব্ধি জরুরি—গণপিটুনি ন্যায়বিচার নয়; এটি হত্যাকাণ্ড। ন্যায়বিচার আদালতে হয়, রাস্তায় নয়।

অন্যায় থামাতে হলে একটা মাত্র উদাহরণ দরকার—প্রতিটি মামলায় দ্রুত ও যথাযথ শাস্তি। যখন মনে হবে অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না, তখনই থামবে এই উন্মাদনা। বিচারহীনতার সংস্কৃতির এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের মাঈনুল নিজে নিজে কোডিং শিখে এখন চাকরি করছেন পর্তুগালে
  • বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে