জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী।

আজ (১১ নভেম্বর) মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ইউনিয়নে অবস্থিত বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সভায় সভাপতির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। 

নিপুন রায় বলেন, “দেশের জনগণ গত ১৬ বছর ধরে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সেই মৌলিক ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারলেই গণতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় হবে।’’

“আমরা চাই, দেশের জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। গণতন্ত্র মানে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা,’’ বলেন তিনি। 

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতান নাসের, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী হোসেন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বাবুল প্রমুখ। 

ঢাকা/শিপন//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র স জনগণ র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নিজেরা বসে দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে সরকারের তরফ থেকে যে আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেটারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগ সফল হয়নি। ছয়দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ৯ দলের যে উদ্যোগ, সেটিও এগোয়নি। সমঝোতার জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া সাত দিনের সময়সীমা আগামীকাল সোমবার শেষ হচ্ছে। ফলে শেষমেশ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারকেই দিতে হবে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কার্যত বিএনপির অনাগ্রহে দলগুলোর মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ এগোয়নি। বিএনপি এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক পক্ষের উদ্যোগে আলোচনায় বসতে রাজি নয়। তবে সরকার উদ্যোগ নিলে তারা আলোচনায় বসবে—গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদের আহ্বান জানান কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, যেকোনো ইস্যুতে, আমরা সব সময় আলোচনায় আগ্রহী, যাব। কিন্তু অন্য কোনো একটি দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে কেন?সালাহউদ্দিন আহমদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতভেদের প্রেক্ষাপটে ৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় সরকার এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। সভা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের উদ্যোগে আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, সরকার আলোচনার আয়োজন করবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

এর দুদিন পর বুধবার জামায়াতে ইসলামী নিজ থেকে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে। দলটির পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিবকে ফোন করে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে বিএনপি এতে সাড়া দেয়নি। উপরন্তু দল দুটির নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য তীব্র হচ্ছে।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ ও নোট অব ডিসেন্টের রাজনীতি০৭ নভেম্বর ২০২৫

জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় বড় সমাবেশ ডেকেছে। দাবি মেনে না নিলে আট দলের নেতারা সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন।

এই হুঁশিয়ারি গত বৃহস্পতিবার যে সমাবেশ থেকে দেওয়া হয়, সেখানে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করব।’

জামায়াতের প্রস্তাব বিএনপির নাকচ করার বিষয়ে গতকাল আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়। সেখানে নেতারা বলেছেন, বিএনপি আহ্বান জানাক, দেশ–জাতি–জনগণের স্বার্থে তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন।

তবে জামায়াতের দিক থেকে আলোচনার আহ্বান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল শনিবার ঢাকায় ছাত্রদলের এক আলোচনা সভায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদের আহ্বান জানায় কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, যেকোনো ইস্যুতে, আমরা সব সময় আলোচনায় আগ্রহী, যাব। কিন্তু অন্য কোনো একটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে কেন?’

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে দল দুটির সঙ্গে পৃথক আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেয় গণতন্ত্র মঞ্চসহ ৯ দল। গতকাল শনিবার পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

বিএনপির মহাসচিবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু উনারা বলেছেন, জামায়াতের আহ্বানে তাঁরা সাড়া দেবেন না। বিএনপি যদি আহ্বান করে জামায়াত যাবে এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করবে।হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াতে ইসলামী

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

যদিও সময় যতই যাচ্ছে, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আগে থেকে বিপরীত অবস্থানে থাকা বিএনপি ও জামায়াত আরও মুখোমুখি এসে দাঁড়াচ্ছে। গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জামায়াতসহ আট দলের রাস্তার কর্মসূচির প্রতি ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় আপনি রাস্তায় যাবেন। এখন অন্য দল যদি তার প্রতিবাদে আবার রাস্তায় যায়, তাহলে কী হবে; সংঘর্ষ হবে না?’

আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে০১ নভেম্বর ২০২৫

একই অনুষ্ঠানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এর জবাব দেন। তিনি বিএনপির এখনকার আচরণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। হামিদুর রহমান আযাদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ওনারা বলেছেন, জামায়াতের আহ্বানে তাঁরা সাড়া দেবেন না। বিগত রেজিম (পতিত শেখ হাসিনা) কিন্তু এ ধরনের সুর সব সময় বাজাত যে ওমুকের সঙ্গে বসবে না। এই কালচার থেকে কি বের হতে পারি না? বিএনপি যদি আহ্বান করে জামায়াত যাবে এবং অন্যদেরও আহ্বানে উদ্বুদ্ধ করবে।’

জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় বড় সমাবেশ ডেকেছে। দাবি মেনে না নিলে আট দলের নেতারা সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন।

বিএনপি ও জামায়াত যার যার অবস্থানে এমন অনড় থাকায় সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে উঠেছে। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই সমঝোতা চায়, কিন্তু সবাই গরম-গরম বক্তৃতা দেয়। কেউ আলোচনাই বসবে না, আবার কেউ আঙুল বাঁকা করবে। এ রকম হলে কীভাবে সমঝোতা হবে?’

সরকারি মধ্যস্থতা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে সমঝোতা হবে—এমনটা দুরাশা মনে করেন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছিল। সে আলোচনায় একটি লম্বা সময় বিরতি দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের পক্ষ থেকে তখন দলগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছিল বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার জন্য। তখনো গণতন্ত্র মঞ্চ এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। তাদের সঙ্গে ছিল এনসিপি, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদ। কয়েকটি দলের সঙ্গে তাদের আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে কোনো ফল আসেনি।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে সরকারের ভূমিকায় আমরা সন্তুষ্ট নই। কিন্তু গণতন্ত্র মঞ্চ দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে এর আগেও আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল, এবারও নিয়েছে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এ ক্ষেত্রে বড় দলগুলোকে ছাড় দিতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার নির্দেশেই কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে: রিজভী
  • বিএনপি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন একটি রাজনৈতিক দল: রিজভী
  • যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য নির্বাচন নাই: জামায়াত আম
  • বিএনপির ৩১ দফা: অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক দর্শনের রূপরেখা
  • নির্বাচন মানে গণতন্ত্র, এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বের হতে হবে: ফরহাদ মজহার
  • জনগণের পার্লামেন্ট না হলে অধিকার ফিরে আসবে না: মির্জা ফখরুল
  • শহীদ নূর হোসেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমান এবং শামসুর রাহমানের কবিতা
  • জুলাই সনদের যে পাতায় সই করেছি, তা বাদ দিয়ে অন্য পাতা ঢোকানো হয়েছে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে