বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা ১ হাজার ৪০০ শিশু–কিশোর, তরুণ হত্যা করে এখন ভারত বসে অডিও বার্তা পাঠিয়ে নাশকতা করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশেই কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমনকি একজন পুড়ে মারাও গেছেন। কোনো একটা চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্নে বিভোর রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

আওয়ামী লীগের হাতে প্রচুর টাকা রয়েছে উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের টাকা তাদের হাতে আছে। সেই টাকা খরচ করে তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে।

ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদ যেখানে জন্ম ও বিকাশ লাভ করে, সেখানে কোথাও ন্যূনতম গণতন্ত্রের জায়গা থাকে না। ফ্যাসিবাদের ছোবলে যখন নির্বাচন কমিশন, গণতন্ত্র ও তার প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আক্রান্ত হয়, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আক্রান্ত হয়। তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। এ সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিল না। আমাদের ছাত্রদলের ছেলেরা চায়ের দোকান বা শ্রেণিকক্ষ কোথাও বসতে পারেনি। গত ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলকে বিষয়টি ভুগিয়েছে।’

জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের আত্মপরিচয় নিশ্চিত করেছেন দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাহাত্তরের পর থেকেই আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সবাইকে বাঙালি হয়ে যেতে বলেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন আসে আমরা কোন দেশের বাঙালি, আমাদের চাকমা, মারমা কীভাবে বাঙালি হবে। এর পরিবর্তে জিয়াউর রহমান আনলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এর মধ্যে আমার পাহাড়ি, সমতল, নদী সব চলে আসে। আমাদের এই আত্মপরিচয়ের সংকট নিরসন করলেন জিয়াউর রহমান। এটাকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুছে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেটা পারেননি।’

বিএনপির এই নেতা রুহুল কবির রিজভী বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে রাজনীতি ও মতপ্রকাশ করার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটাই ৭ নভেম্বরের কৃতিত্ব ও মহত্ব, আপনি এটাকে কখনো অস্বীকার করতে পারবেন না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল ছাত্রদলের ইতিহাসের স্মৃতিচারণা করে সাবেক ছাত্রদল নেতা রুহুল কবির রিজভী। জ্ঞান ও শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনাই ছাত্রসংগঠনের কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির মূল কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। যাঁরা নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন, তাঁদেরই সেই দায়িত্ব থাকবে। তাঁরা সে দায়িত্ব পালন না করলে শিক্ষাবহির্ভূত কার্যক্রম শুরু হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন। সম্প্রতি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠাতি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল ন্যায় ও গণতন্ত্রের পথে কোনো সময় আপস করেনি। তারা প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এই চার নির্বাচনে হয়তো ছাত্রদল পরাজিত হয়েছে। তবে এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি বিগত পাঁচ দশকের ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছাত্রদলের ন্যায়ের লড়াই প্রকাশ্যে চলমান থাকবে।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী)। শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুল হকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ইউট্যাবের রাবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজ, দখলকারী বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না: রিজভী২৯ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ য় উর রহম ন ব শ বব দ য ল ছ ত রদল র ব এনপ র র রহম ন প রক শ র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ নূর হোসেনের পিতার মৃত্যুর পর কিছু কথা

গত ৫ মার্চ, শনিবার গভীর রাতে, শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা আর বুকের মধ্যে গভীর বেদনা নিয়ে নির্বাক মজিবুর রহমানের মৃত্যু হলো। ১৯৮৭ সালের গণআন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনের পিতা হলেন মজিবুর রহমান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

বিগত বছরে ১ আগস্ট (২০০৪ সালে) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। একাধিক হাসপাতালে চিকিত্সার পর গত ৩ নভেম্বর মিরপুরের বাসায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

আমরা গত বছরের ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেনকে স্মরণ করে তাঁর গুরুতর অসুস্থতার খবর ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোতে একটি নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। তারপর তাঁর মৃত্যুবরণের সংবাদ ছাপলাম ৭ মার্চ। আমরা জানতাম, তাঁর জীবন আর দীর্ঘ হবে না। তাঁর মৃত্যু প্রায় আসন্ন। তারপরও মজিবুর রহমানের মৃত্যুসংবাদ আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে।

আরও পড়ুনশহীদ নূর হোসেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমান এবং শামসুর রাহমানের কবিতা ১০ নভেম্বর ২০১৭

বৃদ্ধ মজিবুর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ কোনো গুরুত্ব পায়নি টেলিভিশন বা দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে। অথচ একসময় সেই গত শতাব্দীর আশির দশকে শহীদ নূর হোসেন আর তার পিতাকে নিয়ে কত না হৈচৈ আর মাতামাতি হয়েছিল। কত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে সভা-সমাবেশে।

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বরে আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ২৪ বছরের যুবক নূর হোসেন। দেশের প্রায় সব সংবাদপত্রে তার ছবি ছাপা হলো। সারা দুনিয়ার সংবাদ হলেন নূর হোসেন। নূর হোসেনকে নিয়ে কবিতাও লেখা হলো অনেক। গল্প আর নাটক হলো। পোস্টারের বিষয় হয়ে উঠলেন নূর হোসেন। আশির দশকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নূর হোসেন নতুন এক সাহস, এক প্রেরণা হয়ে উঠেছিল।

১০ নভেম্বর নূর হোসেনের আত্মদানের মধ্য দিয়ে তার পরিবারও সংবাদ হয়ে উঠেছিল। দৈনিক, সাপ্তাহিক আর মাসিক পত্রিকায় তাদের নিয়ে অসংখ্য খবর বের হলো। নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমানের অনেক সাক্ষাত্কার নেওয়া হলো। ছোট-বড় নানা রকম সভা-সমাবেশ, আলোচনা, এমনকি শহীদ মিনারে বুদ্ধিজীবীদের মস্ত বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রধান অতিথি করা হলো। প্রচুর সম্মান দেওয়া হলো তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে। মজিবুর রহমান যারপরনাই খুশি ছিলেন সে দিনগুলোতে। নূর হোসেনের পিতা বৃদ্ধ মজিবুর রহমান গর্বিত হৃদয়ে পুত্রশোকের সান্ত্বনা খুঁজলেন।

কোনো কোনো পত্রিকায় খবর বের হয়েছিল, জুরাইনের গোরস্থানে তার কবর হয়েছে। এ খবর শুনে নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমান ১৩ নভেম্বর দৌড়ে গিয়েছিলেন সে জায়গায়। জুরাইনের কবরখোদকরা তাকে জানায়, ১২ নভেম্বর শেষরাতে, সময় রাত ৩টা হবে, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের গাড়িতে করে তিনটি লাশ আনা হয়েছিল। পুলিশ ছিল সঙ্গে।

সে সময় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সহযোগীরা নূর হোসেনের পিতা মজিবুর রহমানের বনগ্রামের এক ঘরের গেরস্থালিতে গেলেন। শুধু যাননি জাতীয় পার্টি আর জামায়াতে ইসলামীর কেউ। সে ঘরে নেতাদের বসতে দেওয়ার মতো জায়গা ছিল না। তবু এমন সব ব্যক্তির আগমনে শহীদের পিতা-মাতা উচ্ছ্বাসে তাদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি তাদের বারবার বলেছেন, আমরা কিছু চাই না। আমাদের ছেলেকে আর কোনো দিন ফিরে পাব না। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এবং ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ আমার ছেলের এ স্লোগান যদি পূরণ হয়, তাহলেই আমরা খুশি।

ঢাকার রাজপথে নূর হোসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না: এ জেড এম জাহিদ
  • জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল লক্ষ্য: নিপুন রায় 
  • বিএনপি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন একটি রাজনৈতিক দল: রিজভী
  • যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য নির্বাচন নাই: জামায়াত আম
  • পাকিস্তান আরও স্বৈরশাসনের পথে
  • বিএনপির ৩১ দফা: অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক দর্শনের রূপরেখা
  • শহীদ নূর হোসেনের পিতার মৃত্যুর পর কিছু কথা
  • শহীদ নূর হোসেন, বৃদ্ধ মজিবুর রহমান এবং শামসুর রাহমানের কবিতা
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে