চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ফিলিপাইনে সাবেক মেয়রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
Published: 20th, November 2025 GMT
ফিলিপাইনের সাবেক এক মেয়র মানব পাচারের অভিযোগে দেশটির আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। একটি প্রতারণা কেন্দ্র পরিচালনায় তাঁর ভূমিকা রয়েছে, এমন অপরাধে এই রায় দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত সাবেক এই মেয়রের নাম এলিস গুও। ৩৫ বছর বয়সী এই নারীর বিরুদ্ধে গত বছর চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির উঠেছিল। অভিযোগ ওঠার পর কয়েক সপ্তাহ তিনি পালিয়ে ছিলেন। পরে ইন্দোনেশিয়ায় ধরা পড়েন।
আজ বৃহস্পতিবার ফিলিপাইনের আদালত এলিস গুওসহ চারজনকে একই অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন এবং ২০ লাখ পেসো (৩৩ হাজার ৮৩২ ডলার) জরিমানা করেন।
এলিস গুওর মামলাটি ফিলিপাইনে এক বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর নিজের শহর বামবানে দেশটির সবচেয়ে বড় প্রতারণা কেন্দ্র উন্মোচিত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এক অভিযানে ওই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিপাইনি নাগরিক ও বিদেশিকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার এসব নাগরিকের বেশির ভাগই বলেছেন, অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজ করতে তাঁদের বাধ্য করা হয়েছে।
এলিস গুও তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি আপিল করবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এলিসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ আরও পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে।
২০২২ সালে এলিস ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার উত্তরে বামবান শহরের মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি স্থানীয়দের কাছে সহানুভূতিশীল ও যত্নশীল নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
তবে ২০২৪ সালে এই শান্ত শহরটি হঠাৎ জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। কর্তৃপক্ষ অনলাইন ক্যাসিনোর আড়ালে একটি বিশাল প্রতারণা কেন্দ্রের খোঁজ পায়। স্থানীয়ভাবে এই ক্যাসিনোগুলোকে ফিলিপাইন অনলাইন গেমিং অপারেশনস (পোগো) বলা হয়।
চীনের মূল ভূখণ্ডে জুয়া আইনত নিষিদ্ধ। সেখানকার গ্রাহকদের জন্য কাজ করে এসব পোগো ক্যাসিনো।
প্রাথমিকভাবে এলিস দাবি করেন, তিনি এ ধরনের কোনো প্রতারণা কেন্দ্র সম্পর্কে জানতেন না। কিন্তু পরে এক তদন্তে দেখা যায়, তাঁর কার্যালয়ের খুব কাছেই আট হেক্টর জমিতে কেন্দ্রটি অবস্থিত। এত কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও এটি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার দাবি জনমনে প্রশ্নের জন্ম দেয়। পরে জানা যায়, ৩৬টি ভবনের ওই কম্পাউন্ডটি এলিসের মালিকানাধীন জমিতে নির্মিত হয়েছিল।
অভিযোগ ওঠার পর এলিসকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করা হয়। মামলার আরও তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করলে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ইন্দোনেশিয়ায় আটক হওয়ার পর তাঁকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আরও পড়ুনফিলিপাইনের ‘চীনা গুপ্তচর’ মেয়র ইন্দোনেশিয়ায় গ্রেপ্তার০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল প ইন র এল স গ ও
এছাড়াও পড়ুন:
৬৭৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডির বিরুদ্ধে মামলা
চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরা সংগ্রহ করে অর্জিত ৬৭৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার গুলশান থানায় এই মামলা করা হয়েছে বলে আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সিআইডি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সিআইডি ঢাকার ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের আর্থিক লেনদেন, নথিপত্র ও ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরা সংগ্রহ করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণে চোরাচালান ও উৎসহীন অর্থ উপার্জনের সত্যতা পেয়ে মামলা করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দেশে-বিদেশে সোনা ও হীরা ব্যবসা পরিচালনার আড়ালে অর্থ পাচার ও চোরাকারবারি করে আসছিলেন।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের বিষয়ে সিআইডি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে মোট ৩৮৪৭ লাখ টাকার সোনার বার, অলংকার, লুজ ডায়মন্ড ও অন্যান্য দ্রব্য বৈধভাবে আমদানি করে। একই সময়ে স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়, বিনিময় ও পরিবর্তন পদ্ধতিতে ৬৭৮ কোটি টাকার সোনা ও হীরা সংগ্রহ করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সিআইডিকে এসবের উৎস বা সরবরাহকারী সংক্রান্তে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। বৈধ নথি না থাকায় এসব বিপুল পরিমাণ সোনা ও হীরা অবৈধ চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তাঁকে আদালতে তোলা হয়। এরপর তাঁকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই দিন তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় নিম্ন ও উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর ১ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।