আপনি হয়তো সারা দিন ঘরে–বাইরে কাজ করে ক্লান্ত। রাতে খাওয়ার পর একটু বিশ্রামের জন্য তর সইছে না। এ অবস্থায় খাওয়ার পর বাসনকোসন, হাড়িপাতিল সব মেজে ফেলার কথা চিন্তাও করতে পারছেন না। কিন্তু এই কষ্টটুকু রাতে করে ফেলাই আখেরে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। অণুজীববিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা এমনটিই বলছেন।

নোংরা থালাবাসন সিঙ্কে জমিয়ে রাখলে সমস্যা কী

আপনার কিচেন সিঙ্কটি দেখতে কত নিরীহ, তাই না? কিন্তু না, ওই সিঙ্ক আসলে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে যদি আপনি মাছ-মাংস ধোয়ার কাজটি সিঙ্কে করে থাকেন।

একজন অণুজীববিজ্ঞানী হিসেবে রান্নাঘরের সিঙ্ককে আমি রোগজীবাণুর জন্য স্বর্গরাজ্য মনে করি। এই স্বর্গরাজ্যে তারা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, রান্নাঘরের সিঙ্কে বিভিন্ন ধরনের অবাঞ্ছিত ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। যেমন ফেকাল কোলিফর্ম, খাদ্যবাহিত রোগজীবাণু, এমনকি ত্বকের ব্যাকটেরিয়া।জেসন টেট্রো, কানাডীয় অণুজীববিজ্ঞানী ও লেখক

‘দ্য জার্ম কোড’ ও ‘দ্য জার্ম ফাইল’ বই দুটির লেখক জেসন টেট্রো আরও জানিয়েছেন, সিঙ্কের জীবাণুগুলোর মধ্যে ই কোলাই, স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস ইত্যাদি বেশি দেখা যায়। ধরুন, আপনি কোনো একটি পাত্রে কাঁচা মুরগি রেখেছিলেন। তারপর সেই পাত্র সিঙ্কে ধুয়ে ফেললেন। এ অবস্থায় সালমোনেলার মতো জীবাণুও আপনার সিঙ্কে থাকতে পারে।

সিঙ্ক এমন বিপজ্জনক হয়ে ওঠার মূল কারণ কী

আমরা যেসব খাবার খাই, সেসবের অধিকাংশে ব্যাকটেরিয়া থাকে। ফলে ধোয়ার সময় সিঙ্কেও ঠাঁই পায়। আর ব্যাকটেরিয়া থাকে বলেই খাবারগুলো রান্না করে খেতে হয়। কিন্তু সিঙ্ক বাসার সবচেয়ে জীবাণুপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠার আরেকটি কারণ আছে।

সেটি হলো, এঁটো থালাবাসন সেখানে ফেলে রাখা। ব্যাকটেরিয়া উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় দ্রুত বংশবিস্তার করে। এঁটো থালাবাসনের কারণে আপনার সিঙ্ক হয়ে ওঠে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর একটি আদর্শ স্থান।

এঁটো বাসন শুকনা নাকি ভেজা

এঁটো বাসন শুকনা রেখে দেওয়ার চেয়ে উষ্ণ, জীবাণুতে পরিপূর্ণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা একটু বেশিই ক্ষতিকর। মোটের ওপর, উষ্ণ ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বেশি জন্মায়। তবে এর মানে এই নয় যে শুকনা সিঙ্ক নিরাপদ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুকনা পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করতে পারে না। কিন্তু বেঁচে ঠিকই থাকতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে বংশবিস্তার করতে পারে। আর এঁটো বাসনে যেহেতু খাবার লেগে থাকে, পোকামাকড় সহজেই সেসবের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ব্যাকটেরিয়া রান্নাঘরের অন্যান্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ে।

রাতে খাওয়ার পর বাসনকোসন, হাড়িপাতিল সব মেজে ফেললে আখেরে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: থ ল ব সন আপন র স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে: গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “ইসলাম প্রতিষ্ঠায় পুরুষের পাশাপাশি নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। হজরত সুমাইয়া (রা.) ছিলেন মহিলা সাহাবিদের মধ্যে প্রথম শহীদ। আম্মাজান আয়েশাও (রা.) যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তাই ন্যায়, ইনসাফ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।” 

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা-৫ আসনের আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মিছিল

নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা দরকার: প্রধান উপদেষ্টা

দলের নারী কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, প্রতিদিন সকাল-বিকেল গ্রুপ করে করে নারী অঙ্গনে দাঁড়িপাল্লা মার্কার দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। পুরুষরা পুরুষদের কাছে, নারীরা নারীদের কাছে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে দাঁড়িপাল্লা মার্কার দাওয়াত দেবেন। তাহলে, আমরা সবাই মিলে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে পারব, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও জীবনকে শান্তিময় করতে ইসলামী অনুশাসন প্রয়োজন। রাষ্ট্রে ইসলামী আইন চালু হলে সকল ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। ন্যায় ও ইনসাফের সাথে দেশ পরিচালিত হবে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব থাকবে না। একমাত্র ইসলামই সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। তাই, আগামী নির্বাচনে সারা দেশে ইসলামপন্থী আলেম-ওলামা ও আল্লাহভীরু লোকদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে রাষ্ট্রে সকল মানুষের সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা। সেক্রেটারি মো. কামরুল গাজীর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানার আমির ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, জামায়াত নেতা মো. সুলতান মাহমুদ, মো. মোশারফ হোসেন, নূর ইসলাম গাজী, মো. রানা আকুঞ্জী প্রমুখ।

জান্নাতের টিকিট বিক্রি করা নিয়ে বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জামায়াত কখনো মানুষের কাছে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করে না। তবে, মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য গাইডলাইন পবিত্র কুরআনুল কারিম পাঠিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন, কোন কাজগুলো করা উচিত আর কোনগুলো বর্জন করতে হবে। আমরা মানুষের কাছে সেই কথাগুলো তুলে ধরি। বিরোধীরা কুরআন না বোঝার কারণে কুরআন না পড়ার কারণে তারা এই কথাগুলো বলে থাকে। 

এ সময় তিনি বিরোধীদের এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন স্থানে তালিম প্রোগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধার কথা তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলছে। আওয়ামী লীগ ইসলামী গণজাগরণ ঠেকাতে যেমন বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবিরকে কখনো রাজাকার, কখনো জঙ্গি ট্যাগ দিত, ঠিক তেমনই বিএনপি এখন সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা বর্তমানে মাহফিলে বাধা দেয়, মা-বোনদের তালিম প্রোগ্রামে বাধা দেয়। এটি করে তারা জামায়াতকে নয়, মূলত ইসলামকে বাধাগ্রস্ত করছে। এগুলো করে মূলত তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

এর আগে সকালে সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার শিরোমণির ডাকাতিয়া গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খানজাহান আলী থানার আমির ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোসহ স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতে সাজিয়াড়া শামসুল উলুম মাদ্রাসার ১০৫তম বার্ষিক মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তিনি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এবার সুযোগ এসেছে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন। যেখানে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী আছে, সেখানে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থীকে; আর যেখানে ইসলামী জোটের প্রার্থী আছে, সেখানে জোটের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।”

একটি দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “ওই দলের মহাসচিব বলেছেন, ইসলামী শরিয়া আইন তারা কায়েম করবে না। তারা বলে, কুরআনে রাজনীতির কথা নেই। কিন্তু, কুরআনের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ছাড়া তা বোঝা সম্ভব নয়।” 

তিনি আরো বলেন, “তারা বলে, মদিনার ইসলাম; কিন্তু মদিনার ইসলাম কি দাড়ি কেটে বা গান-বাজনার ইসলাম? যারা শরিয়া মানে না, তারা কীভাবে মদিনার ইসলামের অনুসারী দাবি করে?”

মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, ইসলামী জোটের লক্ষ্য হলো— কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্য জনগণের সমর্থন প্রয়োজন।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ