’৭০–এর সাইক্লোনের ভয়াবহতা কেন আমরা ভুলে গেলাম
Published: 11th, November 2025 GMT
‘মেঘ থম থম করে কেউ নেই নেই; জল থই থই তীরে কিছু নেই নেই; ভাঙনের যে নেই পারাপার; তুমি আমি সব একাকার; মেঘ থম থম করে কেউ নেই নেই।’
১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সীমানা পেরিয়ে’ নামক বাংলাদেশি একটি চলচ্চিত্রে গাওয়া ভূপেন হাজারিকার গানের অংশবিশেষ। চলচ্চিত্রটি একই বছরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতাসহ মোট চারটি বিভাগে এবং দুটি বিভাগে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেছিল। এ ছাড়া ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থানও লাভ করেছিল ছবিটি।
১৯৭০-এর ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের ধ্বংসলীলার প্রায় তিন মাস পর একজোড়া মানব-মানবীকে বরিশালের দক্ষিণের একটি সামুদ্রিক চরে আদিম পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে দেখা গিয়েছিল; তৎকালীন ঢাকার সংবাদপত্রে এমন খবর প্রকাশিত হয়।
চরে একজোড়া নারী-পুরুষের বেঁচে থাকা ও বসবাসের বিষয়টি পরিচালক আলমগীর কবিরের দৃষ্টিতে সবার থেকে আলাদা মনে হয়। সেই থেকে তিনি এ ঘটনাটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কথা ভাবেন এবং ১৯৭৫ সালে তিনি এটির নির্মাণকাজ শুরু করেন।
আরও পড়ুনঘূর্ণিঝড় আসে ঘূর্ণিঝড় যায়, থেকে যায় যেসব ক্ষত০১ জুন ২০২৪আজ চলচ্চিত্রটি একটি ইতিহাস। এই ইতিহাসের পেছনে রয়েছে নির্মম আরেক ইতিহাস। সেটি ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর, শুক্রবার। উপকূলের জীবন ইতিহাসের এক ভয়াবহ কালরাত। এদিন প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সাগর, নদী, খাল-বিলে ভেসে ছিল অসংখ্য লাশ আর এক কোটি মৃত গবাদিপশু। ঘরবাড়ি, স্বজন হারিয়ে পথে বসেন উপকূলের লাখো মানুষ। উপকূলীয় দ্বীপচরসহ বহু এলাকার ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে বিরান জনপদে পরিণত হয়।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত মনপুরা ঘুরে ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক প্রভাবকে ২৮ ফুট লম্বা ‘মনপুরা ৭০’ নামে একটি শিল্পকর্ম চিত্রিত করেন। জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘মনপুরায় আমরা যখন থার্ড ডেতে নামলাম, সি-প্লেনে আমি আর আমার বন্ধু একা ঘুরতাছি সারা দিন। কয়টা লোক বাঁইচা আছে দেখলাম। দৌড়ায় আসল। দেখলাম জখমওয়ালা। তারা কানতে আরম্ভ করল। আমরাও কানতে আরম্ভ করলাম। আপনারা বিশ্বাস করেন, আমার পেছনে.
সাগর-নদী-খাল-বিলে ভেসে ছিল অসংখ্য মৃতদেহ। এসব মৃতদেহের সৎকার করাও সম্ভব হয়নি। ঘরবাড়ি, স্বজন হারিয়ে পথে বসেন উপকূলের লাখো মানুষ। এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার কথা শুনলে আজও অনেকে শিউরে ওঠেন। প্রবীণেরা বর্ণনা দিতে গিয়ে জয়নুল আবেদিনের মতো হু হু করে কেঁদে ওঠেন। এ রকম হাজারো মর্মস্পর্শী ইতিহাস রয়েছে উপকূলের এ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ঘিরে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এই ঘূর্ণিঝড়কে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছে।
উপকূলে যে ভয়াবহতা হয়েছে, তা এই প্রজন্মের মানুষ জানে না। এই দিন দিবস হিসেবে পালন করলে হয়তো এ প্রজন্মের মানুষ মনে রাখত। প্রাথমিকভাবে উপকূল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’-এর দাবি ওঠে। আমরা চাই একটি দিবস, যার নাম হবে ‘উপকূল দিবস’। বাংলাদেশে ‘উপকূল দিবস’ শুরু হলে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি দিবস পালন করা হবে। বর্তমান সময়; আগামী দিনের ইতিহাস। আর বিশেষ কোনো ‘দিবস’ মানেই যার মাধ্যমে প্রতিবছর আগের ইতিহাসকে স্মরণ করা। তেমনি একটি দিবস হোক ‘উপকূল দিবস’।
পত্রিকার পাতায় ভোলা সাইক্লোনে ক্ষয়ক্ষতির খবরউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র ঘ র ণ ঝড় এই ঘ র ণ উপক ল র ঘরব ড
এছাড়াও পড়ুন:
শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন হত্যায় ‘দুই শুটার’সহ ৫ জন আটক
পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাইফ মামুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে মামুনকে গুলি করা দুই ‘শুটার’ রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল ও কয়েকটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক ও রবিন ১০টি গুলি চালিয়ে মামুনকে হত্যা করেছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সন্ত্রাসীদের কয়েকজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের মধ্যে রনি ওরফে ভাইগ্না রনি, ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক, কামাল, জসিম, ইসহাক, রয়েল, ইব্রাহীম ও রুবেল অন্যতম। এঁদের কেউ সরাসরি গুলি করেছেন, আবার কেউ সহযোগী হিসেবে ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এসব পেশাদার সন্ত্রাসী মোহাম্মদপুর, বছিলা, হাজারীবাগ ও পুরান ঢাকার বাসিন্দা। বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীর হয়ে ভাড়ায় অপরাধমূলক কাজে অংশ নেন। এর মধ্যে হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হিসেবে সন্দেহভাজন যেসব ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁরা মোহাম্মদপুর এলাকার আলোচিত সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের হয়ে কাজ করে বলে অপরাধ জগতে আলোচনা আছে। যদিও নিহত মামুনের পরিবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ হত্যাকাণ্ডে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে সন্দেহ করে বলে গণমাধ্যমকে বলেছিল।
গত সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ফটকের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় তারিক সাইফ মামুনকে। তিনি আদালতে মামলার হাজিরা দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন। নিকটস্থ সিসিটিভির এক ফুটেজে দেখা যায়, মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তখন দুই ব্যক্তি খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করছেন।
আরও পড়ুনপুরান ঢাকায় মামুন হত্যায় সন্দেহভাজন দুজন আটক৩ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনখুনের মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে খুন হন মামুন১০ নভেম্বর ২০২৫