দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 11th, January 2025 GMT
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা হারান। এমন এক পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করে তাঁদের মাঝে আস্থা ফেরাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার রাজধানীর এক হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যখন দেখেন, কেউ তখন সেখানে কিন্তু ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) করতে আসতে চান না সহজে। কাজেই এটা আমাদের জন্য কঠিন কাজ সামনে এবং আমরা আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) এসে যাবে। তখন সহজে আস্থা ফিরে আসবে তাঁদের মাঝে।’
প্রবাসী কিংবা বিদেশি সব বিনিয়োগকারীই তাঁদের লগ্নি করা অর্থের নিশ্চয়তা চান উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারী, অনাবাসী বাংলাদেশি—নিশ্চয়তা না মিললে তাঁরা বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক।...কাজেই আমাদের লক্ষ্য তো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা; যত শিগগিরই সম্ভব...কাজেই এ লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই আপনারাও তাকাবেন যে রাজনৈতিক নিশ্চয়তাটা আসছে কি না। এই অনিশ্চয়তা থেকে শিগগিরই বেরোতে পারব বলে আশা করছি। তখন বিনিয়োগের পরিবেশ আরও উন্নতর হবে এবং বিনিয়োগ আসবে, দেশেও কর্মসংস্থান বাড়বে।’
গত বুধবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নরওয়ের চারজন এবং বাংলাদেশের এক নাগরিক হয়রানির শিকার হন। তাঁদের মধ্যে নরওয়ের এক নাগরিককে মারধর করে রক্তাক্ত করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘হয়রানি মিশনে, এয়ারপোর্টে (বিমানবন্দর), বিশেষ করে এয়ারপোর্টে…এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত, যে অপরাধী, সে শাস্তি পাবে।’
সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগের অনেক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে। গত ছয় মাসে গড়ে প্রবাসী আয় ২৬ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি ২৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তিনি একটি অনুকূল পরিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি আবদুল হাই সরকার প্রবাসীদের মধ্যে ঘন ঘন বিরোধ ও সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি, যা সমাধান করা প্রয়োজন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাবেক কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি উন্নয়নে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটি তাদের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছ রেকর্ডের কারণে সম্ভব হয়েছে।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সঞ্চয়পত্র কেনার পর যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
পাসওয়ার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে একজনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা আরেকজন তুলে নিয়ে গেছে। এ ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে সঞ্চয়পত্র খাতে। তাই সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের আরও সতর্ক থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে গত ২৩ অক্টোবর ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন এক ব্যক্তি। তাঁর ব্যাংক হিসাব অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। ২৭ অক্টোবর এই সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয় এবং টাকা নেওয়া হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য এক ব্যক্তির হিসাবে। ওই টাকা জমা হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়।
একই প্রক্রিয়ায় একই দিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে তা আটকে দেওয়া হয়।
কথা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র কেনার পরই আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল? উত্তর হচ্ছে ‘না’। সঞ্চয়পত্র কিনলেন মানে আপনি বিনিয়োগ করলেন। বিনিয়োগ যেহেতু করলেন, তা সুরক্ষিত ও ঝামেলামুক্ত রাখার দায়িত্বও আপনার ওপর বর্তায়। এ জন্য কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। কী করতে হবে, সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
১. নথিপত্র যত্নে রাখুন
সঞ্চয়পত্র কেনার পর ব্যাংক বা সঞ্চয় অফিস থেকে যে মূল নথি বা ডকুমেন্ট দেওয়া হয়, এতে একটি কিউআর কোড থাকে। কিউআর কোড আছে কি না, তা দেখতে হবে। এ নথি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, যেকোনো প্রয়োজনে তা লাগবে। সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের অর্থ চুরির মতো ঘটনা ঘটলে ওই সব নথি প্রয়োজন হবে।
২. ব্যাংক হিসাব সক্রিয় রাখুন
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকা ব্যাংক হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়। তাই নিশ্চিত করুন যে আপনার দেওয়া ব্যাংক হিসাবটি সব সময় সক্রিয় আছে। যদি ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করে তা আবার চালু করুন। না হলে মুনাফার টাকা পেতে ভোগান্তি বাড়বে। এমনকি আসল টাকা পেতেও ভোগান্তি হতে পারে। কোনো কারণে ব্যাংক হিসাব বদলাতে হলে আবেদন করে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নতুন হিসাব করতে হবে।
৩. মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত মুঠোফোন নম্বর বা ব্যাংক হিসাব নম্বর তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কোনো কারণে মুঠোফোন নম্বর বদলাতে হলেও আবেদন করে জানাতে হবে সঞ্চয় অধিদপ্তরকে। মুঠোফোনেই সঞ্চয়পত্র যে হিসাবে আছে, সেই হিসাবের লেনদেনের বার্তা আসে।
৪. প্রতারণা এড়ানো
যেকোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল টাকা তোলার জন্য আপনাকে অবশ্যই যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, সেখানেই আবেদন করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার মুঠোফোন নম্বরে আসা কোনো ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) বা গোপন তথ্য কাউকে জানাবেন না। যতটা পারা যায় গোপন রাখতে হবে। পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করেই সম্প্রতি অর্থ উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে।
৫. নমিনির তথ্য সঠিক হতে হবে
নিশ্চিত করুন যে নমিনির নাম ও অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রাহক মারা গেলে নমিনি যাতে সহজেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারে বা মুনাফা উত্তোলন করতে পারে, সে জন্য সঠিক তথ্য থাকা জরুরি।
৬. মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন
জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো বা নগদায়ন করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে মুনাফার হার কিছুটা কম হতে পারে বা জরিমানা কাটা হতে পারে। এ বিষয়ে নিয়মকানুন জেনে রাখা গ্রাহকেরই দায়িত্ব। না জানা থাকলে অফিসে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন এবং প্রত্যাশা অনুসারে কম টাকা পেলে হতাশা হতে পারে।