কয়েকটি অসুখের ক্ষেত্রে শীতকালে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। যাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য তো বটেই; হৃদ্‌রোগ, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ, সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস বা রেনড সিনড্রমের রোগীদের জন্যও কিছু সতর্কতা অবশ্যই প্রয়োজন।

পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ

ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কোলেস্টেরলের মাত্রা যাঁদের বেশি থাকে, তাঁদের পায়ে রক্ত চলাচল কম হয়। অনেকে পায়ে অবশ ভাব অথবা হাঁটাচলার পর পায়ে ব্যথা অনুভব করেন। সহজে পায়ের ক্ষত শুকাতে চায় না। ঠান্ডায় পায়ের রং পরিবর্তন হয় ও ব্যথা হয়।

রেনড ডিজিজ

কম বয়সী মেয়েদের প্রাথমিক পর্যায়ের রেনড ডিজিজ থাকতে পারে। শীতে বা ফ্রিজ ব্যবহার করলে হাত ব্যথা হয় ও রঙের পরিবর্তন হয়। মুখে জন্মনিরোধক ওষুধ খেলেও জটিলতা বাড়তে পারে। যাঁদের অস্থিসন্ধির ব্যথা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হাতে ঠিক এ রকম সমস্যা হলে তাঁকে সেকেন্ডারি রেনড সিনড্রম বলা হয়। হাত বা পায়ের এই ব্যথা যাঁদের হয়, তাঁদের উচিত বিটা ব্লকার ব্যবহার না করা। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার/ এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর/ এনজিওটেনসিন রিসেপ্টর ব্লকার/ আলফা এডরেনার্জিক ব্লকার ব্যবহার করা ভালো।
সতর্কতার জন্য এসব কথা লেখা হলেও আপনার জন্য কোনটি ভালো হবে, তা ঠিক করবেন আপনার চিকিৎসক। অনেক সময় অ্যাসপিরিন বা ক্লপিডোগ্রেল ওষুধ দেওয়া দরকার হতে পারে। তীব্র শীতে ‘কোল্ড অ্যালার্জির’রোগীদের হতে পারে নিউমোনিয়া। আপনি যদি সেপ্টেম্বরে ফ্লুয়ের টিকা, নিউমোনিয়ার টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
শীতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, বিশেষ করে যাঁদের করোনারি আর্টারি ডিজিজ আছে। এ সময় শীত এড়াতে সম্ভব হলে ঘরে থাকার চেষ্টা করুন। হাত, পা, নাক, কান যেন ঠান্ডায় জমে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। হাত মোজা, পা মোজা, উলের কান–ঢাকা টুপি ব্যবহার করুন। যাঁদের হাতে বা পায়ে রক্ত সঞ্চালন কম হয়, এই শীতে তাঁদের রক্ত সঞ্চালন আরও কমে গিয়ে হাত বা পায়ের আঙুল সাদা বা নীল হয়ে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

ঠান্ডার বিভিন্ন ধরন

প্রথম ডিগ্রি ‘ফ্রস্ট বাইট’: ত্বকে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়।
দ্বিতীয় ডিগ্রি: ত্বকে ফোসকা পড়ে।
তৃতীয় ডিগ্রি: ত্বকের সব স্তর আক্রান্ত হয় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চতুর্থ ডিগ্রি: যখন হাড় ও টেন্ডন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়।
কী করণীয়: ঠান্ডা থেকে রোগীকে দ্রুত সরাতে হবে। ঠান্ডা বা ভেজা কাপড় সরিয়ে গরম কাপড় পরান ও কম্বলের মধ্যে জড়িয়ে রাখুন। আস্তে আস্তে গরম করার জন্য রুম হিটার ব্যবহার করুন। আশপাশের পরিবেশ উষ্ণ করার ব্যবস্থা করুন। গরম পানীয় পান করান। হাত–পায়ে ব্যথা থাকলে, রক্ত সঞ্চালন কম হওয়ার মতো আঁটসাঁট কাপড় পরা থাকলে বা হাতে ঘড়ি, ব্রেসলেট, আংটি পরা থাকলে, তা পরিহার করুন। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে যান ও সেবা গ্রহণ করুন। এই ঠান্ডায় সুস্থ থাকতে গরম পানীয় পান করান, ভিটামিন সি–যুক্ত ফল খাওয়ান। গরম পোশাক পরাতে হবে। ধূমপান পরিহার করতে হবে। হাত–পায়ের সমস্যা হচ্ছে কি না, লক্ষ করুন।

লেখক: ডা.

রোজানা রউফ, কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, ইউনিকো হসপিটাল, গ্রিনরোড, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকায় লারিজ ফ্যাশনের পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে রিনা আক্তার (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে তারা মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রিনা আক্তার অসুস্থ অবস্থায় কারখানায় কাজ করছিলেন। রোববার তিনি বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। তবে, কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকের আবেদনে সাড়া না দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। রিনা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তিনি। 

লারিজ ফ্যাশনের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লারিজ ফ্যাশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিমুল বলেছেন, আমাদের একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেছেন, সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী, এমন অভিযোগ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও আছে। শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেছেন। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকা/অনিক/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ