শীতে ফুলকপির কদরের কথা মাথায় রেখে এবার ৫০ শতাংশ জমিতে এই সবজির আবাদ করেছিলেন কৃষক সমিরুল ইসলাম। ফড়িয়ারা এসে তাঁর খেত থেকে ফুলকপি কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা আসেননি। ক্রেতা না থাকায় খেতেই নষ্ট হচ্ছে তাঁর ফুলকপি। কষ্টে ফলানো ফুলকপি খাচ্ছে গরু-ছাগলে।

সমিরুল ইসলামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার টেংরিয়া গ্রামে। গ্রামটি ফুলকপির জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া পাশের রানীশংকৈলের উত্তরগাঁও, রাউৎনগর, ভবানীডাঙ্গী, বিরাশী ও উমরাডাঙ্গী গ্রামেও ব্যাপক ফুলকপি হয়। ব্যবসায়ীরা এসব এলাকা থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করে অন্য জেলায় সরবরাহ করেন।

সমিরুল বলেন, ফুলকপি খেত থেকে তুলে বাজারে নিয়ে গেলে বিক্রির নিশ্চয়তা নেই। কোনোভাবে বিক্রি হলেও যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, এতে ফুলকপি তোলার মজুরি ও পরিবহন খরচই উঠছে না। তাই নতুন ফসলের জমি প্রস্তুত করতে গ্রামবাসীকে ফুলকপি বিলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তাঁরা সেসব ফুলকপি নিয়ে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন। সার-সেচ, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরির পেছনে খরচ শেষে যখন বিক্রির সময়ে ফুলকপির দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় এবার ফুলকপির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকেরা বাজারে একসঙ্গে তোলায় ফুলকপির দাম কমে গেছে। বিক্রি করতে না পেরে অনেকের ফুলকপি খেতেই নষ্ট হচ্ছে। কোনোভাবে বিক্রি হলেও প্রতিটির দাম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক থেকে দেড় টাকা। এতে লাভ তো দূরের কথা, মজুরি ও পরিবহন খরচই উঠছে না কৃষকের। যাঁরা বিক্রি করতে পারেননি, নতুন ফসল আবাদের জন্য তাঁদের কেউ কেউ খেতে ফুলকপি রেখেই হালচাষ দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ গ্রামবাসীর মধ্যে খেতের ফুলকপি বিলিয়ে দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত এগুলো গরু-ছাগলের খাবার হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতের সবজি আবাদ হয়েছে। আর ফুলকপি আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন।

রোববার সকালে মাথায় ফুলকপির বস্তা নিয়ে হেঁটে হেঁটে রানীশংকৈলের কুলিক নদ পাড় হচ্ছিলেন মোশারফ হোসেন। তাঁর বাড়ি পাশের ভবনিডাঙ্গী গ্রামে। তিনি বললেন, গরুকে খাওয়ানোর জন্য এক বস্তা ফুলকপি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। এ জন্য জমির মালিককে কোনো টাকা দিতে হয়নি।

ওই খেতের মালিক সাইফুল ইসলামে বললেন, সময় পেরিয়ে গেলে ফুলকপি ফুটে যায়। সেই অবস্থা হওয়ার আগেই তা তুলে বাজারে নিতে হয়। ক্রেতা না থাকায় এবার এলাকার অনেক কৃষকের খেতের ফুলকপি বিক্রি হয়নি। এখন সেসব ফুলকপি ফুটে যাচ্ছে। এসব ফুলকপি আর বিক্রি হবে না। নতুন ফসলের জন্য জমি তৈরি করতে হবে। তাই সবাইকে তিনি বলে দিয়েছেন, খেত থেকে যার যা খুশি ফুলকপি তুলে নিয়ে যেতে পারেন।

রানীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর গ্রামের কৃষক আনারুল ইসলাম তিন বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছেন। তাঁর খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় খেতের একটি ফুলকপিও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। বাজারে ফুলকপির যে দর, তাতে শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ উঠছে না, এ কারণে তিনি খেতেই ফেলে রেখেছেন ফুলকপি। ১০০টি ধরে, এমন একটি বস্তাভর্তি ফুলকপির দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। তিনি হতাশ কণ্ঠে বললেন, ‘গরুর খাবার হিসেবে ফুলকপি বিক্রি করলে কত টাকাই–বা উঠবে?’

রানীশংকৈলের উত্তরগাঁও গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম স্ত্রী আজিমা বেগম বলেন, একটি ফুলকপির চারা দুই টাকা করে কিনতে হয়েছে। সেই চারা জমিতে লাগানোর পর সার, কীটনাশক খরচ হয়েছে। এখন এক পাইকারের কাছে প্রতিটি এক টাকা করে ২০০টি ফুলকপি বিক্রি করেছেন তাঁরা। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ফুলকপির পেছনে খরচ করেছেন। কিন্তু বিরাট আর্থিক ক্ষতি হলো তাদের।

ভবানিডাঙ্গী গ্রামের মো.

জাকারিয়া বাড়ির পাশে গরুকে ফুলকপি খাওয়াচ্ছিলেন। তিনি বললেন, অনেক কৃষক ফুলকপি চাষ করে একটিও বিক্রি করতে পারেননি। সেসব ফুলকপি তুলে এনে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন। এখন গরুও ফুলকপি খেতে চায় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় ফুলকপির দাম পড়ে গেছে। সবজি একবারে বাজারে না তুলে ধাপে ধাপে তুলতে হবে। এতে ন্যায্যমূল্য না পেলেও খুব একটা লোকসান হবে বলে তিনি মনে করেন না।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এক বছ‌রে আইন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার, যা বল‌লেন আসিফ নজরুল

দেখতে দেখতে প্রায় এক বছর হয়ে গেল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। এ সরকা‌রের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা হি‌সে‌বে দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন শিক্ষা‌বিদ ড. আসিফ নজরুল। এই এক বছরে আইন মন্ত্রণাল‌য়ের সংস্কার কার্যক্রম নি‌য়ে বৃহস্প‌তিবার (৩১ জুলাই) স‌চিবাল‌য়ে সংবাদ সম্মেলন ক‌রেন তি‌নি।

এক বছর দা‌য়িত্ব পাল‌নে মন্ত্রণাল‌য়ের আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্প‌র্কে তু‌লে ধ‌রে আসিফ নজরুল ব‌লেন, “আইন সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হি‌সে‌বে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন: আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩, সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এই আইনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তের অধিকার সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষী নিরাপত্তা এবং ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও প্রবর্তিত হয়েছে।”

“সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫: এই অধ্যাদেশ জারি করে স্বতন্ত্র জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে মেধা, সুযোগের সমতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে,” ব‌লেও জানান তি‌নি।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে আসিফ নজরুল: জাস্ট ওয়েট করুন, কিছু দিনের মধ্যে ঘোষণা

দাসত্বের সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি: শিক্ষা উপদেষ্টা

তিনি বলেন, “তাছাড়া দেওয়ানি কার্যবিধিতে সংশোধন: এই সংশোধন করে দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী সংস্কার আনা হয়েছে। মৌখিক সাক্ষ্যগ্রহণের পরিবর্তে এফিডেভিটের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ, অনলাইনে সমনজারি এবং মূল মামলার অধীনেই রায় কার্যকর করার সুযোগ রাখা হয়েছে।”

ফৌজদারি আইন সংস্কার করা হ‌য়ে‌ছে জা‌নিয়ে উপ‌দেষ্টা ব‌লেন, “ফৌজদারি আইন সংশোধনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। সেই সাথে অভিযুক্তের অধিকারের নিশ্চয়তা, জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দ পরিহার, তদন্ত প্রক্রিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনা, মিথ্যা মামলার হয়রারি রোধ করাসহ বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছে।”

মামলা-পূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান সংযোজন করা হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, “আইন সংশোধন করে নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের মামলার ক্ষেত্রে মামলা-পূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার এবং প্রতি জেলায় একজন স্থলে ৩ জন বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসে পদায়নের বিধান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আদালতের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বাইরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিরোধের আপস নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।”

আই‌ন সংস্কা‌রের ম‌ধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন করা হ‌য়ে‌ছে উল্লেখ ক‌রে আসিফ নজরুল ব‌লেন, “এই সংশোধনীর মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তদন্ত সম্পন্নে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার জবাবদিহির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া, সাক্ষীদের সুরক্ষা, শিশু ধর্ষণ মামলার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং পুরুষ শিশু নিপীড়নকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন যুগোপযোগী বিধান যুক্ত করা হয়েছে।”

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধনী আনা হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, “সংশোধিত বিধিমালার আলোকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ স্টিকার থাকলে বা জন্ম সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।”

“সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে পূর্বের সাইবার নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো এবং এসবের অধীনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে,” ব‌লেও জানান উপ‌দেষ্টা।

বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করা হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে উপ‌দেষ্টা ব‌লেন, “বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করে জেন্ডার বৈষম্যমূলক বিধান বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া, অনলাইনে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।”

আসিফ নজরুল জানান, আইন মন্ত্রণাল‌য়ের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশনের ম‌ধ্যে জুডিসিয়াল সার্ভিসের স্বাধীনতা, বি‌শেষ ক‌রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের পদসৃজনের ক্ষমতা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ এবং জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সরকারের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, “বিচারপ্রার্থী জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণে দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মামলার সর্বশেষ অবস্থা, শুনানির তারিখ এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি কমেছে।”

কেন্দ্রীয়ভাবে আদালতের কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে উপ‌দেষ্টা ব‌লেন, “একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে।”

“তাছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রমের জন‌্য অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ এবং সংগৃহীত হিসাবের নথিসমূহ পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাব রেজিস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী তৈরি করা হয়েছে,” ব‌লেও জানান তি‌নি।

আসিফ নজরুল ব‌লেন, “জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের প্রসিকিউশন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। বিচার কার্যক্রম দ্রুততর করার লক্ষ্যে ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পত্রের আলোকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট Practice Directions জারি করেছে।বিদ্যমান আদালত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুইটি পারিবারিক আদালতকে ই-ফ্যমেলি কোর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

আইন মন্ত্রণালয়ে ডিজিটালাইজেশন করা হ‌য়ে‌ছে জা‌নি‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, “আইন ও বিচার বিভাগের ৫০% নথি ডি-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের Attestation সেবাকে শতভাগ অনলাইন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া বিচারপ্রার্থী জনগণের জামিনপ্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে বেইলবন্ড জমা দেওয়ার নিমিত্ত প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। শিঘ্রই পরীক্ষামূলকভাবে সফটওয়্যারটি ব্যবহার শুরু হবে।”

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার আইন মন্ত্রণাল‌য়ের এই এক বছ‌রের বড় কাজ উল্লেখ ক‌রে আসিফ নজরুল ব‌লেন, “রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বিষয়ে জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক এজাহার, চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর ১৫,০০০টিরও বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সূচারুভাবে সব ভুক্তভোগীকে এই সুযোগ চলমান রাখার লক্ষে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।”

“এছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত মামলা, এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছে।”

তি‌নি ব‌লেন, “বর্তমান সরকারের কার্যকালে আইন মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে লক্ষণীয় গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন: গত এক বছরে মন্ত্রীপর্যায়ে নিষ্পত্তিকৃত নথির সংখ্যা ১২৮৩টি, বিগত সরকারের  একই সময়ে ৮৩৪ টি নথি নিষ্পত্তি হয়েছিল। গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরে ৩৯১টি বিষয়ে আইনি মতামত প্রদান করেছে (গত সরকারের আমলে ১৮০টি)। এ সময়ে সনদ, এফিডেভিট, দলিলসহ ৩৬ ধরনের মোট ১,৫৯,৫৪৪টি ডকুমেন্ট সত্যায়ন হয়েছে যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ। আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে রেকর্ড ১২টি অংশীজন মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছে।”

“নতুন দায়িত্ব হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, গুম সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো বিধিমালা ও প্রবিধানগুলোকে কোডিফাই করার কাজ শুরু হয়েছে।”

“এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যসিষ্ট আমলে নিয়োগকৃত সব আইন কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ার কারণে গত এক বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক আইন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করতে হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সারা দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ৪৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৭৪ জন অ্যাটর্নিকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে,” ব‌লেও জানান তি‌নি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ