মৌসুমের অন্তত দুই মাস আগে জয়পুরহাটের মাঠে মাঠে আলু তুলছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার ফলন বেশি হলেও দাম কম হওয়ায় চিন্তিত চাষি। অনেকে আলু তোলা বন্ধ রেখেছেন। কারণ, লাভ দূরের কথা, খরচের টাকাই উঠছে না। লোকসানে পড়ে কৃষকের চোখেমুখে কষ্ট। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আগাম জাতের আলুর চাষ কমে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
চাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষে অনেক বেশি খরচ পড়েছে। চাষাবাদ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ, শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিভিন্ন জাতের আলু প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই আলু গত শনিবার বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আগামী সপ্তাহে যেসব কৃষক আলু তোলার পরিকল্পনা করছেন, তারাও লোকসানে পড়ার ভয়ে আছেন।

সরেজমিন মাঠে শুক্র ও শনিবার দেখা যায়, পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম রামচন্দ্রপুর, ক্ষেতলালের গোপীনাথপুর, কালাইয়ের হারুঞ্জা ও বেগুনগ্রাম মাঠে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত চাষি। এসব মাঠে সাদা সেভেন, বার-তের, ক্যারেজ, রোমানা পাকরি, লাল পাকরি ও কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ হয়েছে। পাইকাররা দরদাম করে আলু ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। লোকসানে বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি নেই।
৩৩ শতক জমিতে আগাম জাতের ক্যারেজ আলু চাষ করেছেন পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘রোপণের ৬৫ দিনে আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৭০ মণ। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ৭১০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৪৯ হাজার ৭০০ টাকা। নিজের শ্রম তো আছেই। লোকসান হয়েছে ১০ হাজার ৩০০ টাকা। মাঠে আরও আলু আছে। ভয়ে তুলছি না।’

পুনট পশ্চিমপাড়ার কৃষক সামছুল আলম বলেন, ১২০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু ও বেশি দামে সার কিনে আলু চাষ করেছি, অথচ ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচই পড়েছে ১৯-২০ টাকা কেজি। আরেক কৃষক দুলাল মিয়া 
বলেন, ‘আমার ১৮ বিঘা কার্ডিনাল আলু তোলার সময় হয়েছে। প্রতিদিন দাম কমে যাওয়ার ভয়ে তুলছি না।’
বটতলী বাজারে কথা হয় ইকরগাড়া গ্রামের বেলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাটে এক কেজি ক্যারেজ আলু কিনেছি ৬০ টাকায়। আজ সেই আলু কিনলাম ২২ টাকায়। আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, আগাম জাতের আলু বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমদানির ওপর দাম ওঠানামা করে। পাইকারি বাজারে ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে কিনে প্রতি কেজি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভে বিক্রি করছি।

কৃষি বিভাগ জানায়, এবার জয়পুরহাটে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা আগাম জাতের আলু রোপণ করে। ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব আলুর ৩০ শতাংশ জয়পুরহাটের ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ হবে। এতে প্রায় ২ লাখ টনেরও বেশি আলু সংরক্ষণ হবে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, আগাম জাতের আলু যে দামে বিক্রি হচ্ছে, এই দাম বেড়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশের আলু নেওয়ার জন্য বিদেশিরা যোগাযোগ করছেন। কৃষকের হতাশ হওয়ার কিছুই নেই।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’

অন্তবর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে বিচার প্রক্রিয়া, সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সারাদেশ এখন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জাহাঙ্গীরনগর বিবিদ্যালয়ে নির্মিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, অদম্য ২৪ উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মিত জুলাইয়ের ভিডিও ও ফটো ডকুমেন্টারি উপভোগ করেন।

আরো পড়ুন:

জবির পরিত্যক্ত ডাস্টবিনগুলো সংস্কার করল ছাত্রদল

রাকসু থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে যারা

আদিলুর রহমান খান বলেন, “১ বছর আগে বাংলাদেশে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যই পারে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে। বিচার প্রশ্নে বলতে চাই কোনো অবস্থাতেই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সরকার বিচারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা স্কোপ রাখবে না। খুব দ্রুতই বেশ কয়েকটি বিচারের কাজ দৃশ্যমান হবে।”

তিনি আরো বলেন, “তরুণ ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি এবং দেশকে বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।” এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য-২৪’ বিভাজন ভুলে একাত্ম হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সমাপনী বক্তব্যে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “সংঘবদ্ধ আন্দোলনে ৫ আগস্ট আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এর মানে এই নয় যে, অন্য যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আর স্বর আপনারা শুনবেন না। আপনারা দেখবেন, জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা সচেতন এবং কথা বলার ব্যাপারে উন্মুক্ত।”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আবার স্মরণ করিয়ে দিলাম, আমরা যদি বাংলাদেশে কোনো অশান্তি দেখি, বৈষম্য দেখি, পরাজয়ের কালো মেঘ দেখি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য সংগ্রামীরা আবারো তাদের সেই কার্যক্রম শুরু করবে। গোটা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে, আবার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ -উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলমসহ জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ