আগাম আলুতে বিপাকে কৃষক, উঠছে না খরচ
Published: 12th, January 2025 GMT
মৌসুমের অন্তত দুই মাস আগে জয়পুরহাটের মাঠে মাঠে আলু তুলছেন কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার ফলন বেশি হলেও দাম কম হওয়ায় চিন্তিত চাষি। অনেকে আলু তোলা বন্ধ রেখেছেন। কারণ, লাভ দূরের কথা, খরচের টাকাই উঠছে না। লোকসানে পড়ে কৃষকের চোখেমুখে কষ্ট। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আগাম জাতের আলুর চাষ কমে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
চাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষে অনেক বেশি খরচ পড়েছে। চাষাবাদ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ, শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিভিন্ন জাতের আলু প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই আলু গত শনিবার বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আগামী সপ্তাহে যেসব কৃষক আলু তোলার পরিকল্পনা করছেন, তারাও লোকসানে পড়ার ভয়ে আছেন।
সরেজমিন মাঠে শুক্র ও শনিবার দেখা যায়, পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম রামচন্দ্রপুর, ক্ষেতলালের গোপীনাথপুর, কালাইয়ের হারুঞ্জা ও বেগুনগ্রাম মাঠে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত চাষি। এসব মাঠে সাদা সেভেন, বার-তের, ক্যারেজ, রোমানা পাকরি, লাল পাকরি ও কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ হয়েছে। পাইকাররা দরদাম করে আলু ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন। লোকসানে বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি নেই।
৩৩ শতক জমিতে আগাম জাতের ক্যারেজ আলু চাষ করেছেন পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘রোপণের ৬৫ দিনে আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৭০ মণ। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ৭১০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৪৯ হাজার ৭০০ টাকা। নিজের শ্রম তো আছেই। লোকসান হয়েছে ১০ হাজার ৩০০ টাকা। মাঠে আরও আলু আছে। ভয়ে তুলছি না।’
পুনট পশ্চিমপাড়ার কৃষক সামছুল আলম বলেন, ১২০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু ও বেশি দামে সার কিনে আলু চাষ করেছি, অথচ ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচই পড়েছে ১৯-২০ টাকা কেজি। আরেক কৃষক দুলাল মিয়া
বলেন, ‘আমার ১৮ বিঘা কার্ডিনাল আলু তোলার সময় হয়েছে। প্রতিদিন দাম কমে যাওয়ার ভয়ে তুলছি না।’
বটতলী বাজারে কথা হয় ইকরগাড়া গ্রামের বেলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাটে এক কেজি ক্যারেজ আলু কিনেছি ৬০ টাকায়। আজ সেই আলু কিনলাম ২২ টাকায়। আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, আগাম জাতের আলু বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমদানির ওপর দাম ওঠানামা করে। পাইকারি বাজারে ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে কিনে প্রতি কেজি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভে বিক্রি করছি।
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার জয়পুরহাটে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা আগাম জাতের আলু রোপণ করে। ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব আলুর ৩০ শতাংশ জয়পুরহাটের ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ হবে। এতে প্রায় ২ লাখ টনেরও বেশি আলু সংরক্ষণ হবে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, আগাম জাতের আলু যে দামে বিক্রি হচ্ছে, এই দাম বেড়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশের আলু নেওয়ার জন্য বিদেশিরা যোগাযোগ করছেন। কৃষকের হতাশ হওয়ার কিছুই নেই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিএসএফ
বাংলায় কথা বললেই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিএসএফ ও দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার। আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে সীমান্ত সুরক্ষা ও পুশ ব্যাক বিষয়ে বিধায়কদের আনা প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বাসিন্দা মেহবুব শেখকে (৩৬) ঠেলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বিএসএফের উত্তরবঙ্গের শাখা। ওই ব্যক্তি মহারাষ্ট্রের ঠাণেতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গত ১১ জুন তাকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
মেহবুবের ভাই মুজিবুর রহমান জানান, তার বড় ভাইকে গত শুক্রবার ভোর রাতে শিলিগুড়ির বিএসএফ বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করেছে। তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্যদের সভাপতি সামিরুল ইসলাম ওই শ্রমিকের দুর্দশার বিষয়টি জানার পর মহারাষ্ট্র পুলিশের যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠান। তার মধ্যে মেহবুবের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত বিবরণ ও পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট রয়েছে। তবে মহারাষ্ট্র পুলিশ ওই সব নথিপত্রকে গুরুত্ব দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষেও মহারাষ্ট্র পুলিশকে মেহবুবের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল ঠাণেতে। তাতেও কাজ হয়নি।
মেহবুবের ভাই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা মুম্বাইয়ের ঠাণেতে গেলে মহারাষ্ট্র পুলিশ বলেছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে আটক মেহবুবসহ আরও কয়েকজনকে তারা শিলগুড়িতে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। শিলিগুড়ির বিএসএফের ইউনিটে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে তারা জানতে পারেন, গত শুক্রবার ভোরে মেহবুবসহ আটক সবাইকে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে বিএসএফ এবং মহারাষ্ট্র পুলিশ এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। গত এক দেড় মাস ধরে বিএসএফের পুশ ব্যাক চললেও এই বাহিনী সরকারিভাবে কিছু জানাচ্ছে না। অন্যদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে, বিএসএফ এমন অনেককে ঠেলে পাঠাচ্ছে যাদের কাছে ভারতীয় হিসেবে নথিপত্র আছে।