Prothomalo:
2025-05-01@13:56:26 GMT

বিপন্ন প্রাণীর বন্ধু তিনি

Published: 13th, January 2025 GMT

পাশাপাশি বসে খাচ্ছে তিনটি লক্ষ্মীপ্যাঁচা। একবার চোখ মেলে তাকায়, আবার ঘুম ঘুম ভাব। মুখে তুলে না দিলে যেন খাবে না! ঠিক আদরের সন্তানের মতো প্যাঁচাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন। বিপন্ন অবস্থায় প্যাঁচাগুলোকে উদ্ধার করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই তাদের মুক্ত করে দেবেন।

এর আগেও ১২টি বিপন্ন প্যাঁচা উদ্ধার করে সালাহ উদ্দিন প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু প্যাঁচা নয়, প্রায় ৫০টি বিপন্ন পাখি, ২০০টি কুকুর, ২৫০টি বিড়াল, ১৫০টি সাপ উদ্ধারের পরে শুশ্রূষা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

সালাহ উদ্দিনের ডাকনাম নীল। বয়স ৩৭। চাকরি করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে। বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার সমসাদীপুর এলাকায়। ভয়াবহ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। এর আগে চাকরি করেছেন ঢাকায় আইসিডিডিআরবি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৭ সালে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় মধুর যন্ত্রণায় পড়তে হয়েছে সালাহ উদ্দিনকে। যেদিন বিয়ে করতে যাবেন, সেদিন তাঁর বাড়িতে ছিল ২৪টি বিড়াল ও ২০০টি সুইচ অ্যালবিনো জাতের ইঁদুর। স্ত্রী এসব দেখে মন খারাপ করতে পারে, তাই বিড়ালগুলো মানুষকে দিয়ে দেন। ইঁদুরগুলো লুকিয়ে রাখেন একজনের বাড়িতে।

কুড়িয়ে পাওয়া এই জাতের ইঁদুর পুষতে গিয়ে সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের ছোট্ট একটা খামার দাঁড়িয়ে যায়। এ থেকে কিছু আয়ও হয়। স্ত্রী এসে সব শুনে বললেন, ‘খারাপ কী? ইঁদুরগুলো বাড়িতে নিয়ে আসা হোক।’ এরপর ইঁদুরগুলো আবার বাড়িতে এল। ইঁদুরের সুবাদে বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার কাজও চলতে থাকল তাঁর। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ নিলেন সাপ উদ্ধারের জন্যও।

সালাহ উদ্দিন সবচেয়ে বিপত্তির মুখে পড়েন প্যাঁচা নিয়ে। প্রথম উদ্ধার করেছিলেন হুতুম প্যাঁচা। এই প্যাঁচা বাড়িতে আনার পরে তাঁর বাবা ভীষণ চটে যান। মানুষ মনে করে, প্যাঁচা অলক্ষুনে বা অপয়া। এই প্যাঁচার কারণে বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। সালাহ উদ্দিন বোঝাতে সক্ষম হন, এটা ভুল ধারণা। বরং প্যাঁচা উপকারী প্রাণী। শুধু ইঁদুর খেয়েই একটা প্যাঁচা তার জীবনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে।

একবার এক ঘটনা ঘটল। একটি প্যাঁচাকে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলেও সে যায় না। তিনবার ফিরে আসে প্যাঁচাটি। সালাহ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে, প্যাঁচাও তাঁর সঙ্গে গিয়ে গবেষণাগারে বসে থাকে। ফেরার সময় আবার তাঁর সঙ্গে বাড়ি ফেরে। সব শুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সালেহ রেজা প্যাঁচাটি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পরামর্শ দেন। এ জন্য প্যাঁচাটিকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। খাবার বন্ধ করে দিলে প্যাঁচাটি চলে যায়।

সালাহ উদ্দিনের বাড়ির বুকশেলফের ফাঁকা জায়গায় বসবাস করে লক্ষ্মীপ্যাঁচা তিনটি।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানের সময় অগ্নিসংযোগ, পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ জিপ

বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ অর্থাৎ জিপ গাড়ি কেনা হবে। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র ডাকা হবে না। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে এসব গাড়ি কেনা হবে। প্রতিটি পিকআপের দাম ধরা হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে ২০০ পিকআপ কেনায় ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের ব্যবহৃত প্রচুর গাড়ি অগ্নিসংযোগে নষ্ট হয়। তাই নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আজ মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে গাড়িগুলো কিনতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

নীতিগত অনুমোদনের প্রস্তাবে জননিরাপত্তা বিভাগ বলেছে, দেশে মোট ৬৩৯টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১ জুন থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও এর জেরে উদ্ভূত ঘটনায় ৪৬০টি থানার পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগ হয়। এ কারণে পুলিশের বিপুলসংখ্যক যানবাহন পুড়ে যায়। সে জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে গাড়ি কেনা দরকার।

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন টাঙ্গাইল কটন মিলসের ১ দশমিক ৩৬ একর জমি বিক্রির প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়। ১৯৬১ সালে ২৭ দশমিক ২৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় কারখানাটি।

২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জমি বিক্রির প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। তখন কারখানাটির অব্যবহৃত জমি বিক্রির পরিবর্তে সরকারের উন্নয়নমূলক বা জনহিতকর কাজে ওই জমি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এ দুটির পাশাপাশি কমিটি ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ, ২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের লট-২ এর আওতায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন মুদ্রণের কাজ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। এটি নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব।

এর আগে প্রকল্পটির লট-১–এর আওতায় মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন করে মাঠপর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানায় নির্বাচন কমিশন। আরেক প্রস্তাবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত লেখা মুদ্রণকাজেরও নীতিগত অনুমোদন দেয় কমিটি।

বৈঠকে হরিপুরে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বার্জ মাউন্টেড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রকল্পের উদ্যোক্তা কোম্পানি স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রা. লি. এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) সঙ্গে বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য দুই কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।

আসছে তিন কার্গো এলএনজি

এদিকে আজ মঙ্গলবার ক্রয় কমিটিতে আগামী মে, জুন ও জুলাই মাসের জন্য তিন কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ)। এক কার্গোর কাজ পেয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড। তাদের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ কিনতে ব্যয় হবে ১১ দশমিক ১৫ মার্কিন ডলার। এ জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

আরেক প্রস্তাবে গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়বে ১১ দশমিক ২৭ ডলার। ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড আরেক কার্গো সরবরাহের কাজ পেয়েছে। এখানে প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ধরা হয় ১১ দশমিক ৩৫ ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণ-অভ্যুত্থানের সময় অগ্নিসংযোগ, পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ জিপ
  • পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ
  • পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ পিকআপ