পাশাপাশি বসে খাচ্ছে তিনটি লক্ষ্মীপ্যাঁচা। একবার চোখ মেলে তাকায়, আবার ঘুম ঘুম ভাব। মুখে তুলে না দিলে যেন খাবে না! ঠিক আদরের সন্তানের মতো প্যাঁচাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন। বিপন্ন অবস্থায় প্যাঁচাগুলোকে উদ্ধার করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই তাদের মুক্ত করে দেবেন।
এর আগেও ১২টি বিপন্ন প্যাঁচা উদ্ধার করে সালাহ উদ্দিন প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু প্যাঁচা নয়, প্রায় ৫০টি বিপন্ন পাখি, ২০০টি কুকুর, ২৫০টি বিড়াল, ১৫০টি সাপ উদ্ধারের পরে শুশ্রূষা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
সালাহ উদ্দিনের ডাকনাম নীল। বয়স ৩৭। চাকরি করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে। বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার সমসাদীপুর এলাকায়। ভয়াবহ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। এর আগে চাকরি করেছেন ঢাকায় আইসিডিডিআরবি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৭ সালে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় মধুর যন্ত্রণায় পড়তে হয়েছে সালাহ উদ্দিনকে। যেদিন বিয়ে করতে যাবেন, সেদিন তাঁর বাড়িতে ছিল ২৪টি বিড়াল ও ২০০টি সুইচ অ্যালবিনো জাতের ইঁদুর। স্ত্রী এসব দেখে মন খারাপ করতে পারে, তাই বিড়ালগুলো মানুষকে দিয়ে দেন। ইঁদুরগুলো লুকিয়ে রাখেন একজনের বাড়িতে।
কুড়িয়ে পাওয়া এই জাতের ইঁদুর পুষতে গিয়ে সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের ছোট্ট একটা খামার দাঁড়িয়ে যায়। এ থেকে কিছু আয়ও হয়। স্ত্রী এসে সব শুনে বললেন, ‘খারাপ কী? ইঁদুরগুলো বাড়িতে নিয়ে আসা হোক।’ এরপর ইঁদুরগুলো আবার বাড়িতে এল। ইঁদুরের সুবাদে বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার কাজও চলতে থাকল তাঁর। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ নিলেন সাপ উদ্ধারের জন্যও।
সালাহ উদ্দিন সবচেয়ে বিপত্তির মুখে পড়েন প্যাঁচা নিয়ে। প্রথম উদ্ধার করেছিলেন হুতুম প্যাঁচা। এই প্যাঁচা বাড়িতে আনার পরে তাঁর বাবা ভীষণ চটে যান। মানুষ মনে করে, প্যাঁচা অলক্ষুনে বা অপয়া। এই প্যাঁচার কারণে বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। সালাহ উদ্দিন বোঝাতে সক্ষম হন, এটা ভুল ধারণা। বরং প্যাঁচা উপকারী প্রাণী। শুধু ইঁদুর খেয়েই একটা প্যাঁচা তার জীবনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে।
একবার এক ঘটনা ঘটল। একটি প্যাঁচাকে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলেও সে যায় না। তিনবার ফিরে আসে প্যাঁচাটি। সালাহ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে, প্যাঁচাও তাঁর সঙ্গে গিয়ে গবেষণাগারে বসে থাকে। ফেরার সময় আবার তাঁর সঙ্গে বাড়ি ফেরে। সব শুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সালেহ রেজা প্যাঁচাটি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পরামর্শ দেন। এ জন্য প্যাঁচাটিকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। খাবার বন্ধ করে দিলে প্যাঁচাটি চলে যায়।
সালাহ উদ্দিনের বাড়ির বুকশেলফের ফাঁকা জায়গায় বসবাস করে লক্ষ্মীপ্যাঁচা তিনটি।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইঞ্জিনসংকটে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথে ট্রেন বন্ধ, চালুর দাবিতে আলটিমেটাম
ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে জারিয়া রেলপথে চলাচল করা লোকাল ট্রেনটি ইঞ্জিনসংকটে ২১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির যাত্রীরা। বন্ধ ট্রেনটি চালুর দাবিতে ময়মনসিংহ জংশন স্টেশনে আজ সোমবার বেলা পৌনে দুইটায় মানববন্ধনের আয়োজন করেন যাত্রীরা। আগামীকালকের মধ্যে বন্ধ ট্রেন চালু না করলে কঠোর কর্মসূচির আলটিমেটামও দেওয়া হয়।
আজ বেলা পৌনে দুইটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলা মানববন্ধনে দাঁড়ানো যাত্রীদের হাতে ‘ব্রিটিশ গেল, পাকিস্তান গেল, বাংলা এল এখন কেন বন্ধ হলো?’, ‘জারিয়া লোকাল ট্রেন চলতে হবে’, ‘জারিয়া লোকাল ট্রেন পুনরায় চালু করতে হবে’, ‘ট্রেন নিয়ে তালবাহানা চলবে না’, ‘ইঞ্জিন নিয়ে প্রতারণা মানি না মানব না’, ‘জাগো জাগো জারিয়া লোকাল ট্রেনযাত্রী, ট্রেনটি চালু করুন, করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান–সংবলিত ফেস্টুন ছিল।
রেলওয়ে ও যাত্রী সূত্রে জানা যায়, জারিয়া লোকাল ট্রেনটি প্রতিদিন কোনো প্রকার সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া ময়মনসিংহ-জারিয়া রুটে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথে চারবার করে আপডাউন হিসেবে মোট আটটি ট্রিপে চলে। এই রুটে অন্য কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল না করায় শম্ভুগঞ্জ, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, পূর্বধলাসহ আটটি স্টেশনে চলাচলকারী যাত্রীদের লোকাল ট্রেনটিই অন্যতম ভরসা। প্রতিদিনই ট্রেনটিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এ ট্রেনে করে ময়মনসিংহ মহানগরীসহ গৌরীপুর, ধোবাউড়া এবং নেত্রকোনার পূর্বধলা, দূর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। ট্রেন বন্ধ থাকায় অফিসগামী যাত্রী এবং শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চার-পাঁচ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাঁদের। এ ছাড়া ট্রেনটি বন্ধ থাকায় চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের ভোগান্তি ও ব্যবসায়ীদের ময়মনসিংহ শহরে আসা–যাওয়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া গৌরীপুরের ব্যবসায়ী মনোয়ার হাসিব বলেন, ‘ট্রেনটিতে জারিয়া থেকে অনেক শিক্ষার্থী আনন্দের সঙ্গে ময়মনসিংহ ও গৌরীপুর এসে ক্লাস করে আবার চলে যেত। ট্রেন বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়েছে। কাদের মদদে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। আমরা দ্রুত ট্রেনটি নিয়িমত চালুর দাবি জানাই।’
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. লিমন জারিয়া থেকে গৌরীপুর এসে প্রতিদিন ক্লাস করে বাড়ি যেতেন। প্রতিদিন সকাল আটটায় জারিয়া থেকে ছেড়ে আসত এবং বিকেল পাঁচটায় গৌরীপুর থেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু ট্রেনটি বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ২৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অথচ ট্রেন চলাচল করলে মাত্র ৪০ টাকা খরচ হতো। লিমন বলেন, ‘পরিবারের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো না যে প্রতিদিন ২৪০ টাকা খরচ করে কলেজে যাওয়া আসা করব। ট্রেন চলাচল করলে কলেজে নিয়মিত ক্লাস করতে যেতে পারতাম।’
ময়মনসিংহ শহরে ব্যবসা করেন পূর্বধলার বিজন সম্মানিত। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় যাতায়াতের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা আগামীকাল থেকেই বন্ধ ট্রেন চালু চাই। তা না হলে এ অঞ্চলের ছাত্র ও কর্মজীবীরা আগামীকাল থেকে কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’
ইঞ্জিনসংকটের কারণে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে জারিয়া লোকাল ট্রেনটি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে ময়মনসিংহ স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘আমাদের লোকাল ট্রেনের মিটারগেজের ইঞ্জিনসংকট চলছে। আমাদের যে ইঞ্জিনটি সমস্যা হয়েছিল, সেটি মেরামতের জন্য ঢাকায় পাঠানো হলেও আর ফেরত আসেনি। ইঞ্জিন পেলে পুনরায় লোকাল ট্রেনগুলো চালু করতে পারব।’