ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট এই বন্যার পানি যত কমছে; ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সরেজমিন বন্যাকবলিত জেলার পাঁচটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, স্রোতে ভেঙে গেছে বিভিন্ন সড়ক। অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে। এখনো কিছু বাড়িঘরে পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে একের পর এক জনপদ প্লাবিত হয়।

আরো পড়ুন:

দুই জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া এলাকার বাসিন্দা মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘‘সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঘর বানিয়েছিলাম। কিন্তু, একদিনও থাকতে পারিনি। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলাম। তবে তার আগেই পানি ঢুকে ঘরটি চোখের সামনে ভেসে যায়।’’

ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, ‘‘নদীর পাড়ে থাকি বলে প্রতি বছরই এই দুঃখ সইতে হয়। কিন্তু, বারবার সব তছনছ হয়ে গেলে আমরা কীভাবে বাঁচব?’’

দৌলতপুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ পর আজ সূর্যের দেখা মিলেছে। এখনো বাড়িতে হাঁটুপানি। আশা করছি, আর বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নামবে।’’

পশ্চিম অলকার বাসিন্দা মহসিন বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে, তবে ঘরটা ভেঙে একাকার। প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়।’’

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এবার বন্যায় পাঁচ উপজেলার ১০৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৯ হাজার ৫০০ মানুষ।

জেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, এবারের বন্যায় ১ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। 

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বস্তির খবর।’’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “পরশুরাম ও ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, ছাগলনাইয়া ও সদর এলাকায় পানি এখনো বাড়তি। পানি কমার পর বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।”

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে। জনগণের নিরাপত্তায় কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ঢাকা/সাহাব/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন য প ন বন দ র বন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে নামছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট এই বন্যার পানি যত কমছে; ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সরেজমিন বন্যাকবলিত জেলার পাঁচটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, স্রোতে ভেঙে গেছে বিভিন্ন সড়ক। অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে। এখনো কিছু বাড়িঘরে পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে একের পর এক জনপদ প্লাবিত হয়।

আরো পড়ুন:

দুই জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া এলাকার বাসিন্দা মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘‘সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঘর বানিয়েছিলাম। কিন্তু, একদিনও থাকতে পারিনি। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলাম। তবে তার আগেই পানি ঢুকে ঘরটি চোখের সামনে ভেসে যায়।’’

ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, ‘‘নদীর পাড়ে থাকি বলে প্রতি বছরই এই দুঃখ সইতে হয়। কিন্তু, বারবার সব তছনছ হয়ে গেলে আমরা কীভাবে বাঁচব?’’

দৌলতপুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ পর আজ সূর্যের দেখা মিলেছে। এখনো বাড়িতে হাঁটুপানি। আশা করছি, আর বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নামবে।’’

পশ্চিম অলকার বাসিন্দা মহসিন বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে, তবে ঘরটা ভেঙে একাকার। প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়।’’

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এবার বন্যায় পাঁচ উপজেলার ১০৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৯ হাজার ৫০০ মানুষ।

জেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, এবারের বন্যায় ১ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। 

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বস্তির খবর।’’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “পরশুরাম ও ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, ছাগলনাইয়া ও সদর এলাকায় পানি এখনো বাড়তি। পানি কমার পর বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।”

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে। জনগণের নিরাপত্তায় কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ঢাকা/সাহাব/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ