রূপগঞ্জে এক হাজার গাছের চারা বিতরণ না করে খালে ফেলে দিলেন অধ্যক্ষ
Published: 1st, August 2025 GMT
রূপগঞ্জে প্রায় এক হাজার বিভিন্ন প্রকার সরকারি ফলজ গাছের চারা বিতরণ না করে খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভুল ষতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারিভাবে বন্ধ থাকার সুযোগে শুক্রবার সকালে অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের নির্দেশে গাছের চারা গুলো খালের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।
গাছের চারা বিতরণ না করে খালের পানিতে ফেলে দেওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাধা দেন এবং প্রতিবাদ করেন। চারা গুলো বিতরণ না করে ফেলে দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসনের গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির আওতায় চলমান বৃক্ষরোপণের অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের কৃষি প্রণোদনায় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিনামূল্যে এ চারা বিতরণ করা হয়।
জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার গাছের চারা দিয়ে বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া।
নারায়ণগঞ্জ হবে সবুজে ঘেরা প্রান্ডের ড্যান্ডি হবে বিশ্বে সেরা এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রূপগঞ্জ উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া, শিমুল সুপারি, নারিকেল, তাল, সাজিনা, অর্জুন, নিম, কাঁঠাল, আম, বকুল ও সোনালু প্রজাতির গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বৃক্ষরোপণের কার্যক্রম শুরু করেন।
বৃক্ষরোপণের অংশ হিসেবে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে গত ১৫ জুলাই প্রায় ১২'শ গাছের চারা ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে ১৬ জুলাই ১২০ টি গাছের চারা রোপণ করা হয়।
বাকি প্রায় এক হাজার গাছের চারা রোপণ বা বিতরণ না করে নষ্ট করে ফেলা হয়। সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগে গাছের চারা গুলো আটি করে অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের নির্দেশক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান মোস্তফা মিয়া ও সুইপার জুবায়ের হোসেন সামনে থাকা খালের পানিতে ফেলতে শুরু করে।
গাছের চারা বিতরণ না করে খালের পানিতে ফেলে দেওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাধা দেন এবং প্রতিবাদ করেন।
এ সময় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান মোস্তফা মিয়া ও সুইপার জুবায়ের হোসেন বলেন, আমাদের অধ্যক্ষ সূরাইয়া পারবিন ম্যাডাম বলেছেন গাছের চারা গুলো নষ্ট হয়ে গেছে এগুলো ফেলে দিতে, তাই ফেলে দিয়েছি। চারা গুলো বিতরণ না করে ফেলে দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের কম্পিউটার অপারেটর শামীমা সুলতানা উমা বলেন, স্কুলের পাশেই আমার টেইলার্সের দোকান রয়েছে। গাছের চারা খালের মধ্যে আটি করে ফেলে দেওয়ার সময় স্থানীয়রা আমাকে খবর দিলে আমি দারোয়ান ও সুইপারকে জিজ্ঞেস করি। তারা বলে অধ্যক্ষ ম্যাডামের নির্দেশে তারা এগুলো ফেলে দিচ্ছে।
ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিযুক্ত সুরাইয়া পারবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফারিয়া আক্তার রুবি বলেন, সরকারি গাছের চারা বিতরণ না করে নষ্ট করে ফেলে দেয়ার অধিকার কারো নেই। বৃক্ষরোপণ বা বিতরণ না করতে পারলে সেগুলো আমাদের কৃষি অফিসে জমা দিবে। কিন্তু ফেলে দিয়ে অন্যায় করেছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে সরকারি বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
বই বিক্রির সময় স্থানীয়দের হাতে অধ্যক্ষ, পিকআক চালক ও চোরাই বই ক্রেতাকে আটক করা হলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর আগে, অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, কাজ না করিয়ে বিল তোলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বই বিক্রির ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র পগঞ জ উপজ ল ব তরণ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।