ঢাকা দক্ষিণ সিটির শীর্ষ সাত পদ খালি
Published: 13th, January 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) শীর্ষ সাতটি পদ এখন ফাঁকা। করপোরেশনের নিজস্ব জনবল দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে নিলেও ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়নমূলক কাজ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, শূন্য পদে পদায়নের কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ পদায়ন হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এসব সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সরকারের দুজন অতিরিক্ত সচিব প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ছয় দিন ধরে এই পদ খালি আছে।
গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে গিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হচ্ছে। তাই কিছুটা সময় লাগছে। মো.নিজাম উদ্দিন, সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ
দায়িত্ব পালন করা প্রশাসকের মধ্যে একজন এক মাস দায়িত্ব পালনের পর অবসরে গেছেন। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে এই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এর পর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির শীর্ষ এই পদে আর কাউকে পদায়ন করা হয়নি।
করপোরেশনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা প্রধান নির্বাহী পদেও কেউ নেই তিন সপ্তাহ ধরে। সর্বশেষ এই পদে অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি শেষ দিনের মতো অফিস করেছেন। এর পর থেকে এই পদ খালি। পরে সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঞাকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই পদে কর্মকর্তা না থাকার কারণে প্রশাসনিক ও মাঠপর্যায়ের প্রায় সব কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসক না থাকার কারণে উন্নয়নকাজের নথি অনুমোদন নেওয়া যাচ্ছে না। সেবামূলক সংস্থা হিসেবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়। এসব কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ভিন্ন পরিস্থিতিতে একেক দিন একেক রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেক কাজের চাহিদা আছে, সুপারিশ থাকে—এসব বাস্তবায়ন করার কেউ নেই।
বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা, নিরীক্ষা কর্মকর্তা ও জনসংযোগ কর্মকর্তার পদে কেউ নেই। সংস্থাটির সূত্রগুলো বলছে, এসব পদে সরকার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে থাকে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তুলনামূলক নিচের কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
শীর্ষ পর্যায়ের সাত কর্মকর্তার পদ খালি থাকায় কীভাবে করপোরেশন পরিচালনা করা হচ্ছে—এমন প্রশ্নে বশিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ কর্মকর্তার রুটিন বদলি হয়েছে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্য কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, হিসাব বিভাগে টাকা ছাড় করতে গিয়ে আইনের নানা দিক দেখতে হয়। কিন্তু অভিজ্ঞ কেউ না থাকায় চরম ভোগান্তি হচ্ছে। আবার ৫ আগস্টের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রবণতা বাড়ছে। এসবের সমাধানে আইন কর্মকর্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এই পদেও লোক নেই।
সব মিলিয়ে সংস্থাটির সেবামূলক নানা কাজ গতিশীলভাবে চালিয়ে নিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে গিয়ে যাচাই–বাছাই করতে হচ্ছে। তাই কিছুটা সময় লাগছে। তবে দ্রুত যাতে এসব পদে পদায়ন করা হয়, সেই চেষ্টা তাঁরা করছেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫