Samakal:
2025-11-03@12:20:49 GMT

কানের ফাঙ্গাস: যা জানতে হবে

Published: 13th, January 2025 GMT

কানের ফাঙ্গাস: যা জানতে হবে

চল্লিশোর্ধ্ব এক ভদ্রমহিলা কয়েক দিন আগে চেম্বারে কানের চিকিৎসা নিতে আসেন। সমস্যা কী হয় প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কানে অসহ্য চুলকানি হচ্ছে এবং কান বন্ধ হয়ে আছে। আজ থেকে ডান কানে প্রচণ্ড ব্যথা করছে এবং পানির মতো কালো ময়লা কানের ভেতর থেকে বেরুচ্ছে, যা আগে কোনো দিন বের হয়নি। ভদ্রমহিলা আরও যোগ করলেন, তিনি একজন ডায়াবেটিক রোগী। রোগীর আক্রান্ত কান পরীক্ষা করে দেখা গেল, কানে ছত্রাক সংক্রমণ অটোমাইকোসিস হয়েছে।
অটোমাইকোসিস নামক কানের রোগের পেছনে কোন ধরনের জীবাণু দায়ী?
কানের এ ধরনের চুলকানি হয় ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ থেকে। এদের মধ্যে অ্যাসপারজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, যেখানে কালো ময়লার মতো ফাঙ্গাশের দলা কানে জমা হয় এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ; এ ক্ষেত্রে যেখানে ভেজা পত্রিকার পাতার মতো সাদা দলা কানের ভেতরে দেখা যায়।
কানের ছত্রাক রোগ অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হলে রোগীরা কী কী সমস্যা নিয়ে আসেন?
lঅতিরিক্ত চুলকানির সঙ্গে কানে অস্বস্তি।
l কানে অসহ্য ব্যথা (যদি এর সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যুক্ত হয়)।
l কানের ভেতর কিছু জমা হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এমন অনুভূতি। কান ভারী ভারী লাগতে পারে।
l কান থেকে ধূসর, হলুদ বা সাদা রঙের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে।
lকানে শুনতে সমস্যা হওয়া।
কাদের ক্ষেত্রে কানের এ সমস্যা হয়ে থাকে?
l রোগটি তাদেরই বেশি হয়, যারা কোনো কারণবশত দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। অথবা কান পাকা রোগের কারণে অনেক দিন ধরে স্টেরয়েড-সংবলিত কানের জীবাণুনাশক ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন।
l ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব রয়েছে।
l রোগটি আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। কারণ এখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। এ ধরনের পরিবেশ ছত্রাকের জন্য অনুকূল।
l কান পরিষ্কারের নামে যারা ঘন ঘন পরম আয়েশে কানে কটনবাড দিয়ে কান থেকে যাবতীয় ময়লা বের করে আনার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
l রাস্তায়, ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করেন, তারাও অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
চিকিৎসা
রোগীরা কানের উল্লিখিত সমস্যা নিয়ে এলে নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা কারণ জানতে একটা অটোস্কোপ (কানের ভেতরটা পরীক্ষা করার যন্ত্র) ব্যবহার করে কানের পরীক্ষা করে থাকেন। কানের রোগ নির্ণয়ের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। অটোমাইকোসিস হলে চেম্বারে মাইক্রোইয়ার সাকার মেশিনের সাহায্যে অথবা ড্রাই মপিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে কানের ভেতর থেকে ছত্রাকের দলা বের করে এনে কান শুকনা করেন।
lতারপর বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ পাওয়া যায়; সেগুলো রোগের ধরন দেখে দিয়ে থাকেন। পুরো মাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব।
lকানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
lএ ছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসা করণীয় হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। সঙ্গে প্রয়োজনবোধে ব্যথানাশক দেওয়া হয়ে থাকে।
lএর পাশাপাশি রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
lওষুধ ব্যবহার শেষে শিডিউল অনুযায়ী ফের কান পরীক্ষা করাতে হবে।
জটিলতা প্রতিরোধে চাই সতর্কতা
কান চুলকানির এ সমস্যা খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি যদিও বহিঃকর্ণের; কিন্তু কান পাকা রোগীদের কানেও এই জীবাণু দিয়ে মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে। কানে প্রায়ই কটনবাড, দিয়াশলাইয়ের কাঠি, মুরগির পালক, চুলের ক্লিপ ঢোকানোর কারণে চুলকানোর সমস্যা হতে পারে। ঘন ঘন এ ধরনের বস্তুর সংস্পর্শে আসার কারণে হিতে বিপরীত হয়ে কানে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। তাই সতর্ক হই, সুস্থ থাকি।  তাছাড়া কানে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হলে তখন অবশ্যই নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 
[নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট]

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ