Samakal:
2025-05-01@09:53:56 GMT

কানের ফাঙ্গাস: যা জানতে হবে

Published: 13th, January 2025 GMT

কানের ফাঙ্গাস: যা জানতে হবে

চল্লিশোর্ধ্ব এক ভদ্রমহিলা কয়েক দিন আগে চেম্বারে কানের চিকিৎসা নিতে আসেন। সমস্যা কী হয় প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কানে অসহ্য চুলকানি হচ্ছে এবং কান বন্ধ হয়ে আছে। আজ থেকে ডান কানে প্রচণ্ড ব্যথা করছে এবং পানির মতো কালো ময়লা কানের ভেতর থেকে বেরুচ্ছে, যা আগে কোনো দিন বের হয়নি। ভদ্রমহিলা আরও যোগ করলেন, তিনি একজন ডায়াবেটিক রোগী। রোগীর আক্রান্ত কান পরীক্ষা করে দেখা গেল, কানে ছত্রাক সংক্রমণ অটোমাইকোসিস হয়েছে।
অটোমাইকোসিস নামক কানের রোগের পেছনে কোন ধরনের জীবাণু দায়ী?
কানের এ ধরনের চুলকানি হয় ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ থেকে। এদের মধ্যে অ্যাসপারজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, যেখানে কালো ময়লার মতো ফাঙ্গাশের দলা কানে জমা হয় এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ; এ ক্ষেত্রে যেখানে ভেজা পত্রিকার পাতার মতো সাদা দলা কানের ভেতরে দেখা যায়।
কানের ছত্রাক রোগ অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হলে রোগীরা কী কী সমস্যা নিয়ে আসেন?
lঅতিরিক্ত চুলকানির সঙ্গে কানে অস্বস্তি।
l কানে অসহ্য ব্যথা (যদি এর সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যুক্ত হয়)।
l কানের ভেতর কিছু জমা হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এমন অনুভূতি। কান ভারী ভারী লাগতে পারে।
l কান থেকে ধূসর, হলুদ বা সাদা রঙের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে।
lকানে শুনতে সমস্যা হওয়া।
কাদের ক্ষেত্রে কানের এ সমস্যা হয়ে থাকে?
l রোগটি তাদেরই বেশি হয়, যারা কোনো কারণবশত দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। অথবা কান পাকা রোগের কারণে অনেক দিন ধরে স্টেরয়েড-সংবলিত কানের জীবাণুনাশক ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন।
l ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব রয়েছে।
l রোগটি আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। কারণ এখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। এ ধরনের পরিবেশ ছত্রাকের জন্য অনুকূল।
l কান পরিষ্কারের নামে যারা ঘন ঘন পরম আয়েশে কানে কটনবাড দিয়ে কান থেকে যাবতীয় ময়লা বের করে আনার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
l রাস্তায়, ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করেন, তারাও অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
চিকিৎসা
রোগীরা কানের উল্লিখিত সমস্যা নিয়ে এলে নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা কারণ জানতে একটা অটোস্কোপ (কানের ভেতরটা পরীক্ষা করার যন্ত্র) ব্যবহার করে কানের পরীক্ষা করে থাকেন। কানের রোগ নির্ণয়ের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। অটোমাইকোসিস হলে চেম্বারে মাইক্রোইয়ার সাকার মেশিনের সাহায্যে অথবা ড্রাই মপিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে কানের ভেতর থেকে ছত্রাকের দলা বের করে এনে কান শুকনা করেন।
lতারপর বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ পাওয়া যায়; সেগুলো রোগের ধরন দেখে দিয়ে থাকেন। পুরো মাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব।
lকানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
lএ ছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসা করণীয় হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। সঙ্গে প্রয়োজনবোধে ব্যথানাশক দেওয়া হয়ে থাকে।
lএর পাশাপাশি রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
lওষুধ ব্যবহার শেষে শিডিউল অনুযায়ী ফের কান পরীক্ষা করাতে হবে।
জটিলতা প্রতিরোধে চাই সতর্কতা
কান চুলকানির এ সমস্যা খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি যদিও বহিঃকর্ণের; কিন্তু কান পাকা রোগীদের কানেও এই জীবাণু দিয়ে মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে। কানে প্রায়ই কটনবাড, দিয়াশলাইয়ের কাঠি, মুরগির পালক, চুলের ক্লিপ ঢোকানোর কারণে চুলকানোর সমস্যা হতে পারে। ঘন ঘন এ ধরনের বস্তুর সংস্পর্শে আসার কারণে হিতে বিপরীত হয়ে কানে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। তাই সতর্ক হই, সুস্থ থাকি।  তাছাড়া কানে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হলে তখন অবশ্যই নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 
[নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট]

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ