দেশজুড়ে শীতের দাপটে নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করছে ছিন্নমূল, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে বরাবরের মতো এবারও সুহৃদরা শুরু করেছেন শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বগুড়া, ফরিদপুর ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে শীতার্তদের কম্বল দেওয়া হয়
বগুড়া
আসলাম হোসাইন
শীত প্রকৃতির সৌন্দর্য হলেও, নিম্ন আয়ের ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এটি মোকাবিলা করা কঠিন বিষয়। শীত নিবারণের এ কঠিন চ্যালেঞ্জে পাশে দাঁড়িয়েছে সুহৃদ সমাবেশ। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনে বগুড়ার মালতিনগর অন্ধ ইয়াতিম হাফিজিয়া মাদ্রাসার অন্ধ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন বগুড়ার সুহৃদরা। এ উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) ও সুহৃদ উপদেষ্টা ডা.
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বেড়েছে; সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও। এ পরিস্থিতিতে বগুড়ার সুহৃদরা নিজ উদ্যোগে শীতার্তদের জন্য কিছু করা চেষ্টা করেছেন।’
সাধারণ সম্পাদক সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, বগুড়া
ফরিদপুর
আবরাব নাদিম ইতু
কনকনে ঠান্ডা কেড়ে নিয়েছে তাঁর ঘুম, জীবনকে করে তুলেছে অভিশপ্ত। কখনও দিনভর ঘন কুয়াশা, কখনও সকালের হিম বাতাস– এর মধ্যেই বর্ণনাহীন কষ্টে এবার শীত পার করছে রাস্তার ধারে অনেক অসহায় মানুষ। অর্থাভাবে নেই শীত নিবারণের কাপড়, বিছানা। রাত কাটে বসে, জেগে থেকে। আয়শার মতো এমন অসংখ্য বাস্তুভিটাহীন লোকের বাস দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এমন অসহায় কিছু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফরিদপুরের সুহৃদরা। এর মধ্য দিয়ে ফরিদপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি শুরু হলো।
সম্প্রতি ফরিদপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন এবং আদালত চত্বর এলাকায় শীতার্ত মানুষের কাছে শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে যান সুহৃদরা। এ কার্যক্রমে যুক্ত হন ফরিদপুর সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি জয়ন্ত ভট্টাচার্য, সহসভাপতি মিরান ফকির, অনিক, লাফিম ও দীপ্ত। শহরের অনেক অঞ্চলের শীতার্ত মানুষেরা অসহায় থাকলেও, এ দুটি স্থানে নিম্ন আয়ের মানুষ রাতে ঘুমায়। তাই তাদের কথা বিবেচনা করে এ শীতবস্ত্র দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হলো। কর্মসূচির আলোকে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে দ্রুতই একটি সভা করার বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সুহৃদরা কার্যক্রম শেষ করেন।
সাধারণ সম্পাদক সুহৃদ সমাবেশ, ফরিদপুর
রায়গঞ্জ
মামুনর রশিদ
উত্তরের জেলা সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। এই শীতে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মানবেতর জীবনে একটু উষ্ণতা দিতে অর্ধশত মানুষের পাশে দাঁড়ান সুহৃদরা। সম্প্রতি উপজেলা প্রেস ক্লাবে কম্বল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক রাম সরকার বিপ্লব, আল আমিন, সুহৃদ যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর অনিক, সুহৃদ অনিক রায়সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। v
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ)
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।