যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ দাবানলে ইতোমধ্যে নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকাটি। ধনাঢ্যের শহর হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেসের অনেক এলাকা এখন বিরান; ছাই হয়ে গেছে ১০ হাজারের বেশি বাড়িঘর, স্থাপনা। আগুনে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ২৪-এ পৌঁছেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কয়েক ডজন মানুষ নিখোঁজ আছেন। আরও এক লাখের বেশি বাসিন্দাকে অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৮৭ হাজার মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। 

এ পরিস্থিতিতে মার্কিন আবহাওয়া বিভাগ আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির বার্তা দিয়েছে। যে বাতাসের কারণে এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে, সে-ই ‘সান্তা আনা’র তীব্রতা আবারও বাড়তে পারে। এতে দাবানল আরও বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে। আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, রোববার থেকে শুষ্ক বাতাস আবার বেড়ে বুধবার পর্যন্ত থাকবে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
দাবানলে তেল ও গ্যাসের লাইন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বাতাসের মান অনেকটাই খারাপ হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিচে দাউদাউ আগুন জ্বলছে, ওপরে উড়ছে অগ্নিনির্বাপণ কাজের হেলিকপ্টার। ফেলা হচ্ছে পানি, যা মরুতে শিশিরবিন্দুর মতো লেলিহান শিখায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রাণ বাজি রেখে কাজ করছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। কিন্তু আগুনের দাপটে অনেক স্থানে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। 

গতকাল সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে দায়িত্বরত মার্কিন অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ডেভিড অ্যাকুনা বলেন, জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা অনুযায়ী, ‘চরম জটিল’ আবহাওয়া আগুন আরও ছড়িয়ে দিতে পারে। পুরো অঞ্চলের মানুষকে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দাবানলের জেরে পিছিয়ে যেতে পারে লস অ্যাঞ্জেলেসে ৬৭তম বার্ষিক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসের আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ক্রিপ্টো ডটকম অ্যারেনায় এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। 

গত মঙ্গলবার শুরু হয়ে গতকাল পর্যন্ত তিনটি দাবানল সক্রিয় ছিল। এর মধ্যে ইটন ও প্যালিসেডস ফায়ার অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে এগুলো ৬০ বর্গমাইলের বেশি এলাকায় ছড়িয়েছে, যা আকারে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের চেয়েও বিস্তৃত। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসন এনবিসি নিউজকে বলেন, এটি মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ। পুরো দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ক্যালিফোর্নিয়ার অন্তত ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, লস অ্যাঞ্জেলেসে উপকূলের প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকার বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হলিউডসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক চলচ্চিত্র তারকার বাড়িঘর পুড়েছে। তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক তারকাকে সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনে কান্না করতেও দেখা যায়। শিল্পী বিয়ন্সি দুর্গতদের জন্য আড়াই মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন। 

বিবিসি জানায়, আগুনের কারণে নাসার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। রোববার নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি ও মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরিতে আগুনের ধোঁয়া ঢুকে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে নাসার দেড়শ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মীর বাড়িঘর পুড়ে গেছে। তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। 

স্থানীয় দমকলকর্মীদের সঙ্গে আগুন নেভাতে কাজ করছেন আরও আটটি রাজ্য এবং কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা কর্মীরা। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে প্যালিসেডস ও ইটন এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য প্রশাসন ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট নেতা ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ট্রাম্প মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম এ বিপর্যয়ের জন্য অযোগ্য রাজনীতিকদের দায়ী করেন।
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কখন থামবে এ দাবানল? মূলত শুষ্ক-উষ্ণ শান্ত আনার ঝোড়ো বাতাসের কারণে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এ দাবানল। এ বাতাস থামলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে। প্রধান দুই দাবানল– প্যালিসেডস ও ইটন ফায়ারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের। এ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আগে বাতাসের গতি থামতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের উপপ্রধান ব্রাইস বেনেট বলেন, ‘আমরা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছি; প্রকৃতি যদি কোনো সুযোগ করে দেয়।’ 

 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ