শাহিন শাহ আফ্রিদির সঙ্গে ফরচুন বরিশালের চুক্তির খবর আলোড়ন তুলেছিল দেশে। পাকিস্তানি এ ফাস্ট বোলারকে একনজর দেখতে ভিড় পড়ে গিয়েছিল ঢাকা ও সিলেটে। সাংবাদিকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিলেন তিনি। কারণ, একাদশ বিপিএলের সবচেয়ে বড় বিদেশি তারকা ছিলেন তিনি। আরও নির্দিষ্ট করা হলে শাহিন শাহ-ই ছিলেন একমাত্র তারকা। কাইল মায়ার্স, অ্যালেক্স হেলস বা জেসন রয়রা হলেন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া তারকা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষের বাঁশি শোনার অপেক্ষায় থাকা এই ক্রিকেটাররাও বিপিএলে এসেছিলেন খ্যাপ খেলতে। শাহিন, হেলস, জেসনরা চলে যাওয়ায় বিদেশি তারকা শূন্য বলা যায় বিপিএলকে। শূন্যতার মাঝেও কিছুটা দ্যুতি ছড়াচ্ছেন ডেভিড মালান, মোহাম্মদ নবি, ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।
বিপিএলের কেন এই হাল– প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ঢাকার মেন্টর সাঈদ আজমল সমকালকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটি এভাবে মান হারালে টিকে থাকার সংকটে পড়বে। তাঁর মতে, ‘আমরা যখন খেলেছি, তখন একঝাঁক বিশ্ব তারকা খেলে গেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে খেলতে এসেছে। পাকিস্তানের জাতীয় দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার খেলেছে। সেখানে এখন সেই মানের কাউকেই দেখি না।
বিপিএলকে টিকিয়ে রাখতে হলে মান বাড়াতে হবে। বিদেশি তারকা ক্রিকেটার আনতে হবে।’ ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরে ছিল বৈশ্বিক তারকাদের ছড়াছড়ি। ভারত ছাড়া ক্রিকেট খেলুড়ে সব বড় দেশের তারকারা খেলে গেছেন। ব্র্যাড হজ, লেন্ডল সিমন্স, ডোয়াইন ব্রাভো, জেসন রয়, নাসির জামশেদ, শহীদ আফ্রিদি, কাইরন পোলার্ড, ড্যারেন স্টিভেনস, সাঈদ আজমল, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, নাভিদুল হাসান, ইমরান তাহির, জশ বাটলার, হার্শেল গিবস, সনাৎ জয়াসুরিয়া, ডোয়াইন স্মিথ, কামরান আকমল, পিটার ট্রেগো, ড্যারেন স্যামি, সোহাইল তানভীররা খেলেছেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, লাসিথ মালিঙ্গা, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারও খেলে গেছেন বিপিএলে। বৈশ্বিক মানে আইপিএল ও বিগ ব্যাশের পরেই স্থান পেয়েছিল বাংলাদেশের লিগটি।
জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বিপিএল ছিল আইপিএলের পরে। এক যুগের ব্যবধানে বিপিএল এখন মানহীন বিদেশি ক্রিকেটারের লিগ। যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবুয়ে দলের ক্রিকেটাররাই তারকা। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটার খেলছেন বাংলাদেশে। কারণ, বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না বিপিএল।
আরব আমিরাতের আইএল টি২০, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০তে বিদেশি ক্রিকেটার খেলেন বেশি। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ মাতান দেশিরা। দেশটিতে প্রতিভাবান ক্রিকেটার এত বেশি যে, বিদেশি ক্রিকেটার খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। সে কারণে কোয়ালিটি ক্রিকেট খেলা হলেও বিগ ব্যাশ সেভাবে বৈশ্বিক বাজার পায়নি। নিউজিল্যান্ডের টি২০ লিগে খেলছেন মাত্র পাঁচজন বিদেশি ক্রিকেটার। একসঙ্গে এত টি২০ লিগ চলায় পুরোনো লিগ হওয়া সত্ত্বেও নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়েছে বিপিএলে। আইসিসি তো আইএলকে আন্তর্জাতিক টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজির লিগের মর্যাদা দিয়েছে। আমিরাদের খেলোয়াড় কম থাকায় একাদশে ৯ জন বিদেশি নিয়ে খেলে তারা। এই লিগে ভারতীয় বিনিয়োগ থাকায় সম্মানী বেশি। হেলস, মায়ার্সরা তাই বিপিএল ছেড়ে খেলছেন আইএল টি২০তে। এ ছাড়া প্রতিটি দলে ৯ জন করে বিদেশি খেলার নিয়ম থাকায় বিরাট সংখ্যক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার অন্তর্ভুক্ত থাকছে এক লিগে।
এসএ২০ লিগের মালিকও ভারতীয়রা। এ মুহূর্তে বৈশ্বিক তারকা ক্রিকেটার বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার লিগটিতে। বিপিএলের মতো এসএ২০তেও চারজন করে বিদেশি খেলানোর নিয়ম। দেশের কোচরা মনে করেন, এই প্রতিযোগিতার মার্কেও মাঝারি বিনিয়োগে ভালো মানের ক্রিকেটার আনা সম্ভব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলে। তবে বিপিএলের তুলনায় আইপিএল, পিএসএল ও সিপিএলের উইন্ডো অন্য সময় হওয়ায় দিন দিন ভালো করছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে কারখানায় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় মঞ্জু টেক্সটাইলে এন্ড ডাইং কারখানায় গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে কারখানার দুই নিরাপত্তাকর্মীসহ তিন জন দগ্ধ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার তারাবো পৌরসভার কাজীপাড়া এলাকায় কারখানায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলেন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুল হান্নান, গার্ড কবির হোসেন ও সিনিয়র অফিসার সাইফুল ইসলাম।
কারখানার সুপারভাইজার মিজানুর জানান, নাইট ডিউটি শেষে সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা চলে যাওয়ার ঠিক পরপরই তিতাস গ্যাস সংযোগের আরএমএস রুমে গ্যাসের অতিরিক্ত চাপে বিকট শব্দে একটি দেয়াল ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীসহ তিনজন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণ ও আগুনের তীব্রতায় আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ, সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক
মাইক্রোবাসে বিস্ফোরণ, অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন ৫ ছাত্রনেতা
তিনি জানান, কারখানায় দায়িত্বে থাকা টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত গ্যাসের চাবি বন্ধ করে নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দগ্ধ তিনজনকে দ্রুত রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। আগুনে কারখানার কিছু কাপড় ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ইউনিট সেখানে যায়। তবে তার আগেই কারখানার লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। বিস্ফোরণ ও আগুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি তিনজন দগ্ধ হয়েছেন এবং তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/অনিক/বকুল