দাবানলে ঘরছাড়া বাসিন্দা বললেন, ‘জানি সব শেষ, তবু নিজে গিয়ে দেখতে চাই’
Published: 14th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের কারণে লাখো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হন। এখন তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে উদ্গ্রীব। কিন্তু গত রোববার কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছে, এখনই ফেরা যাবে না। ফেরার জন্য অন্ততপক্ষে চার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত প্যালিসেইডস ও ইটন এলাকায় ফিরতে উন্মুখ হয়ে আছেন অনেক বাসিন্দা। তাঁরা বিভিন্ন তল্লাশিকেন্দ্রে (চেকপয়েন্ট) ভিড় করছেন।
দাবানল এগিয়ে আসার জরুরি সতর্কতা পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে নিজ নিজ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে। এ জন্য তাঁরা সঙ্গে করে কাপড়চোপড় বা ওষুধ নেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত পাননি। তাই তাঁরা এখন বাড়ি ফিরতে মরিয়া।
আবার এমন লোকজনও আছেন, যাঁরা এলাকায় ফিরে দেখতে চাইছেন, তাঁদের বাড়িঘর টিকে আছে কি না।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারোনি রোববার বলেছেন, চলতি সপ্তাহের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝোড়ো বাতাসের কথা বলা হয়েছে। আর ঝোড়ো বাতাস থাকলে দাবানলজনিত জরুরি সতর্কাবস্থা আপাতত শেষ হওয়ার সুযোগ নেই।
এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যারোনি বলেন, লোকজন এখনই বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সহজ কথায়, এখন বাড়ি ফেরাটা নিরাপদ নয়।
লোকজনকে যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের জায়গা বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা বহাল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাড়ি ফেরার সুযোগ নেই।
লোকজনকে বাড়িতে ফিরতে দেওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা আগামী বৃহস্পতিবার শুরু করা হবে বলে জানান ম্যারোনি।
নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতায় স্বল্প সময়ের জন্য দাবানলদুর্গত নিজ নিজ এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ পেতে লোকজনকে দীর্ঘ সময় সারি ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
জ্যানেল নামের এক নারী সম্প্রচারমাধ্যম কেটিএলএকে বলেন, তিনি জানেন, তাঁর ঘরবাড়ি নাই হয়ে গেছে। তবু তিনি ধ্বংসাবশেষটুকু দেখতে চান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জ্যানেল বলেন, ‘আমি ছবি দেখেছি, ভিডিও দেখেছি। এখন আমি শুধু নিজ চোখে তা দেখতে চাই। আমি জানি, সব শেষ হয়ে গেছে। আমি শুধু চাই নিজে গিয়ে তা দেখতে।’
তবে নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতায় দাবানলদুর্গত এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ গত রোববারই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রচণ্ড বাতাসের আশঙ্কা করছেন। আর এই বাতাসের কারণে উত্তপ্ত কয়লা থেকে আবার আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ম্যারোনি বলেছেন, দাবানলের কারণে এলাকাছাড়া মানুষেরা যেন তাঁদের বাড়িঘরের বর্তমান অবস্থা, ঘরবাড়ি ধ্বংস বা নষ্ট হয়েছে কি না, তা অনলাইনে দেখতে পারেন, সে জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সিটি কাউন্সিলর ট্র্যাসি পার্ক বলেছেন, দাবানলের ভুক্তভোগীদের যন্ত্রণাটা তিনি বুঝতে পারছেন। কিন্তু পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।
ট্র্যাসি পার্ক বলেন, এগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত। তিনি জানেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকার অনেকে হতাশ ও মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টিকে তাঁদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন দাবানল এলাকার প্রায় এক লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য আদেশ জারি রয়েছে। গত সপ্তাহে অবশ্য এই সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল
ইরানে এবার চালানো ইসরায়েলের হামলা আগের দুটি সামরিক অভিযানের তুলনায় শুধু বিস্তৃত ও তীব্রই ছিল না, এতে গত নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে ব্যবহৃত কিছু কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কৌশল হলো– শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত করা নয়, বরং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে হত্যা করতেও হামলা চালানো।
গতকাল শুক্রবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার কৌশল ওই সংগঠনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। একটি টেকসই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। তেহরানে হামলার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত হানার দৃশ্য অনেকটা বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের আক্রমণের চিত্রের মতো, যার পরিণতিতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন।
ইরানে এত বড় কোনো ব্যক্তি নিহত হননি বলে মনে হচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্তু অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সামরিকপ্রধান, শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে দেশটির অভিজাতদের অভূতপূর্ব ক্ষতি করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলতে পারে।
গত বছর ইসরায়েলে দুইবার হামলা চালায় ইরান। এবার তারা আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তেহরানের পক্ষে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো এতটা সহজ হবে না। সম্ভবত নেতানিয়াহু হিসাবনিকাশ করেই এ বিরোধে উস্কানি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এখনই আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন– যেটা তিনি এতদিন ধরে সমর্থন করে আসছিলেন। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়।
নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, তারা জানতে পেরেছেন– ইরানের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে।
ইরানে এ হামলার পেছনে ভিন্ন একটি কারণও থাকতে পারে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ দফায় আলোচনা শুরু হতে চলেছে। এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর কাছে মনে হতে পারে, সম্ভাব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ চুক্তি বন্ধের এটাই উপযুক্ত সময়।
সামরিক দিক থেকে তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো বুঝতে পারছেন– শুধু ইরানই নয়, বরং এ অঞ্চলে তার সহযোগী, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা আগের মতো আর হুমকি নয়। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে প্রমাণ হবে– এটি সঠিক, নাকি একটি বিপজ্জনক ভুল গণনা।