সীতাকুণ্ডে ৬ মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যরা
Published: 14th, January 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৩ নম্বর আসনের সদস্য ফাতেমা বেগম। গত বছরের ১২ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত ভাতা তুলতে পারেননি ফাতেমা বেগম।
শুধু ফাতেমা বেগম নন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ৮১ জন সাধারণ সদস্য ও ২৭ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য মিলে মোট ১১৭ সদস্যের ছয় মাস ধরে ভাতা বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, একজন ইউপি সদস্য দুই ভাগে মোট ভাতা পান আট হাজার টাকা। ইউনিয়ন পরিষদ দেয় ৪ হাজার ৪০০ টাকা, সরকারের কাছ থেকে পান ৩ হাজার ৬০০ টাকা। সর্বশেষ গত বছরের জুনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাঁদের ভাতা উত্তোলন করেছিলেন। এরপর গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর উপজেলার প্রায় সব ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যরা কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন। এতে জনদুর্ভোগের তৈরি হয়।
১৯ আগস্ট একটি পরিপত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কার্যক্রম গতিশীল রাখতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণের জন্য জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ ও বাকি চারটি ইউনিয়নের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের দ্বারা সেবাগ্রহীতাকে বিভিন্ন সনদ ইস্যু করছেন ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের বেশির ভাগ সাধারণ সদস্য পরিষদ কার্যালয়ে নানা কারণে অনুপস্থিত থাকায় সমস্যা দেখা দেয়। পরে সংরক্ষিত নারী সদস্যের সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদের কাজ চলমান রেখেছে প্রশাসন।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.
গতকাল সোমবার সকালে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, সভাকক্ষে বসে ব্যক্তি শনাক্তের কাজ করছেন ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৩ নম্বর আসনের নারী সদস্য ফাতেমা বেগম। উদ্যোক্তার কক্ষে রানা ও বাইরে দুজন গ্রাম পুলিশ কাজ করছিলেন। নির্ধারিত ফরমে ফাতেমা বেগম স্বাক্ষর করে শনাক্ত করেন। পরে উদ্যোক্তা রানার কাছে জমা দেন। এ ছাড়া অন্তত ২০ সেবাগ্রহীতা পরিষদের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
ফাতেমা বেগম বলেন, নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকে প্রতিদিন তিনি অফিস করছেন। মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্য দুই নারী সদস্যও আসেন। তবে পুরুষ সদস্যরা কম আসেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি একবারও ভাতা পাননি।
বেলা সাড়ে তিনটায় ভাটিয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে দেখা গেছে, কার্যালয়ের বাইরে একজন গ্রাম পুলিশ একটি চেয়ারে বসে রয়েছেন। তাঁকে ঘিরে বসে ছিলেন অন্তত চার সেবাগ্রহীতা। ভেতরে উদ্যোক্তার কক্ষের সামনে দেখা গেছে অন্তত ১০ সেবাগ্রহীতাকে। কিন্তু সচিব কিংবা কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।
উদ্যোক্তা শম্পা মিত্র জানান, সংরক্ষিত ২ নম্বর আসনের নারী সদস্য দেলোয়ার বেগম নিয়মিত ইউপি কার্যালয়ে এসে কাজ সামলাচ্ছেন। দিনের বেলায় জন্মনিবন্ধনের সার্ভার ডাউন থাকে। তাই বিকেলের পর অনেক সময় রাত পর্যন্ত তাঁদের কাজ করতে হয়।
সেখানে কথা হয় সেবাগ্রহীতা জুলি আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, নিজের দ্বিতীয় সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। নারী ইউপি সদস্য তাঁকে শনাক্ত করেছেন। কাজ হয়েছে কি না জানতে এসেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাসের মতো ইউপি সদস্যদের ভাতা বন্ধ রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে ভাতা পরিশোধের জন্য কার্যক্রম শুরু করবেন তাঁরা।
ভাতা বন্ধ হতে পারে বেশির ভাগ সদস্যেরউপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ইউপি সদস্যদের বেতন–ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে ইউপি কার্যালয় ও নিজ নিজ এলাকায় কোন কোন সদস্য উপস্থিত আছেন, তা যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ২৭ নারী সদস্য ও ১৯ সাধারণ (পুরুষ) সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি ৬২ সদস্য অনুপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যানরাও অনুপস্থিত রয়েছেন।
ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাতা পরিশোধের জন্য কর্মস্থলে উপস্থিত আছেন, এমন ৪৬ ইউপি সদস্যের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাঁরা পাঠিয়েছেন। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের ভাতা পরিশোধ করা হবে। চেয়ারম্যানসহ মোট ৭১ জন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ভাতা থেকে তাঁরা বাদ পড়তে পারেন বলে জানান তিনি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী
অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।
আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগেগতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।
ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’
সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।
আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে