গাজায় অবশেষে যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতা করেছে তিন দেশ
Published: 16th, January 2025 GMT
জ্বলেপুড়ে ছারখার।চতুর্দিকে রুক্ষতা। মরু-মানচিত্রে বিভীষিকার দাগ। বাতাসে লাশের গন্ধ। ১৫টি মাস কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে; শোকে পাথর গাজা। দিবস ও রজনীর কঠিন দিনরাত্রি পাড়ি দিয়ে অবশেষে এসেছে সুখবর। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। আনাহার, নিদ্রাক্লান্তি আর মৃত্যুর ফনা তোলা সময়ে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতার মধ্যে হঠাৎ ঘটেছে জাগরণ।
একটু স্বতির খবর আসতেই তাই উচ্ছ্বাস দেখাতে দেরি হয়নি গাজার মানুষের। আর হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির অধীর অপেক্ষায় সময় কাটছে তাদের পরিবারের সদস্যদের। ইসরায়েলেও দেখা গেছে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে।
হামাস ও ইসরায়েল চুক্তির শর্তে রাজি হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানির পক্ষ থেকে। ১৫ জানুয়ারি গভীর রাতে তিনি এই ঘোষণা দেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গাজা ও ইসরায়েলে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
বিশ্ববাসীর চোখের সামনে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস গাজায় নির্বিচার নৃশংসতা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে যার সাময়িক সমাপ্তি হচ্ছে। ১৯ জানুয়ারি রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে যুদ্ধবিরতি। প্রথম দফায় ৪২ দিন স্থায়ী হবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ। উভয় পক্ষ শর্ত প্রতিপালন করে চললে পরবর্তীতে আসবে নতুন ঘোষণা।
কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের প্রতিনিধি ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারীরা। কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করেছে। তারা দুই পক্ষের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করে চুক্তির শর্তে হামাস ও ইসরায়েলের সম্মতি আদায় করে। এরপর আসে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এখন পর্যন্ত ৩৩ জন হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে। আর গাজা থেকে পুরোপুরি সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে ইসরায়েলকে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের একাংশকে মুক্তি দিতে হবে। অবশ্য চুক্তির শর্তগুলো আরো বিশদ, যেখানে অনেক যদি-কিন্তুর ব্যাপার রয়েছে।
হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হতে যাওয়া যুদ্ধবিরতির পরদিনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিতে হবে বাইডেনকে। অবশ্য ট্রাম্পও এই যুদ্ধবিরতির জন্য কৃতীত্ব নিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতে সহায়তা করায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথমে ট্রাম্প এবং তারপর বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
১৫ মাসে যুদ্ধে গাজায় প্রাণ গেছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সব মিলে দেড় হাজারের মতো ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এই অসম যুদ্ধে গাজা জ্বলেপুড়ে ছারখার হলেও মাথা নোয়ানি ফিলিস্তিনিরা।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র ও ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।