প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য হয়েছে
Published: 16th, January 2025 GMT
সামিউল কবির: আপনাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম কেমন চলছে?
সামিউল কবির: আমাদের ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ সেবার মাধ্যমে এমন গ্রাহকরাও ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন, যাদের জন্য প্রচলিত শাখাভিত্তিক ব্যাংকসেবা সহজলভ্য নয়। সারাদেশে ৪৬ জেলায় আমাদের ১৯৪টি এজেন্ট আউটলেট আছে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে জানতে বা নিকটস্থ এজেন্টের ঠিকানা পেতে গ্রাহকরা আমাদের হেল্পলাইন বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।
সমকাল: এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামের অর্থনীতিতে কীভাবে অবদান রাখছে?
সামিউল কবির: এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এর মাধ্যমে গ্রামবাসীরা সহজেই সঞ্চয়, ঋণ গ্রহণ, বিল পরিশোধ এবং টাকা পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন। যেসব মানুষ আগে ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তারা এখন এর মাধ্যমে এ সেবাগুলো নিতে পারছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং কৃষকরা সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসা বা চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে পারছেন। গ্রামবাসীকে শহরে গিয়ে ব্যাংকিং সেবা নিতে হয় না। ফলে তাদের সময় ও পরিবহন খরচ কমছে। লেনদেন বাড়ার ফলে স্থানীয় বাজারের কার্যক্রমও উন্নত হচ্ছে। সুতরাং এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
সমকাল: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আর কী করণীয় রয়েছে বলে মনে করেন? ব্যাংকগুলো কী করতে পারে?
সামিউল কবির: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে উদ্যোগগুলো নিতে পারে সেগুলো হচ্ছে– নীতিমালা আরও সহজ ও স্বচ্ছ করা, জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণা, স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা, উৎসাহমূলক প্রণোদনা প্রদান এবং যথাযথ সুপারভিশন ও মনিটরিং। ব্যাংকগুলোর করণীয়র মধ্যে রয়েছে–উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, অধিক এজেন্ট নিয়োগ, কাস্টমাইজড পণ্য ও সেবা চালু, ত্বরিত সেবা প্রদান, সচেতনতা ও বিপণন কার্যক্রম, সেবার মান উন্নয়ন ইত্যাদি।
সমকাল: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ আদায়ের হার ও আমানতের ক্ষেত্রে সাড়া কেমন? কোনো সীমাবদ্ধতার জায়গা দেখেন?
সামিউল কবির: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ আদায়ের হার সন্তোষজনক। কারণ গ্রামীণ সমাজে সামাজিক সম্পর্কের গুরুত্ব বেশি। কিছু ক্ষেত্রে ঋণ আদায়ে চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব। কৃষিঋণের ক্ষেত্রে বন্যা, খরা বা অন্যান্য দুর্যোগ ঋণ পরিশোধে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকলে তাদের ঋণ শোধে সমস্যা হতে পারে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রান্তিক জনগণ যাদের আগে সঞ্চয়ের সুযোগ ছিল না, তারা এখন সহজেই এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে অল্প পরিমাণে হলেও নিয়মিত সঞ্চয় করছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিয়ের জন্য আলাদা সঞ্চয় স্কিমের প্রতি গ্রামের মানুষের আগ্রহ বেশি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। যেমন প্রযুক্তিগত সমস্যা, ইন্টারনেট সংযোগের অভাব বা ধীরগতির কারণে লেনদেনে বিলম্ব হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এজেন্টদের দক্ষতার অভাবও দেখা যায়। আবার অনেক এলাকায় এখনও যথেষ্ট সংখ্যক এজেন্ট নেই; যার ফলে সেবা পেতে ভোগান্তি হয়। নগদ অর্থ বহন এবং সাইবার নিরাপত্তা দুর্বল হলে প্রতারণা ও চুরির ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া অনেক মানুষ এখনও এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন না বা সেবাগুলোতে আস্থা রাখতে পারেন না।
সীমাবদ্ধগুলো কাটিয়ে উঠতে প্রযুক্তি উন্নত করা এবং ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা, সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণা, এজেন্টদের জন্য কমিশন এবং প্রণোদনা বাড়ানো, ঋণগ্রহীতার জন্য ব্যবসা ও অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা সম্ভব।
সমকাল: নতুন বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
সামিউল কবির: নতুন বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিস্তৃতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। গ্রাম এলাকায় এজেন্ট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরও এজেন্ট নিয়োগ করা, এলাকাভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রদানের উদ্যোগ থাকছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে মোবাইল অ্যাপ ও ই-ওয়ালেট সমন্বয় করা, সেবা আরও দ্রুত ও সহজলভ্য করার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি; কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ স্কিম চালু, ঋণের শর্ত সহজ করে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া, এজেন্টদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান, গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে আরও সচেতন করা, সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা, লেনদেনের সময় এজেন্ট ও গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ব যবস র জন য সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে কারখানায় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় মঞ্জু টেক্সটাইলে এন্ড ডাইং কারখানায় গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে কারখানার দুই নিরাপত্তাকর্মীসহ তিন জন দগ্ধ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার তারাবো পৌরসভার কাজীপাড়া এলাকায় কারখানায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলেন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুল হান্নান, গার্ড কবির হোসেন ও সিনিয়র অফিসার সাইফুল ইসলাম।
কারখানার সুপারভাইজার মিজানুর জানান, নাইট ডিউটি শেষে সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা চলে যাওয়ার ঠিক পরপরই তিতাস গ্যাস সংযোগের আরএমএস রুমে গ্যাসের অতিরিক্ত চাপে বিকট শব্দে একটি দেয়াল ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীসহ তিনজন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণ ও আগুনের তীব্রতায় আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ, সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক
মাইক্রোবাসে বিস্ফোরণ, অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন ৫ ছাত্রনেতা
তিনি জানান, কারখানায় দায়িত্বে থাকা টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত গ্যাসের চাবি বন্ধ করে নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দগ্ধ তিনজনকে দ্রুত রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। আগুনে কারখানার কিছু কাপড় ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ইউনিট সেখানে যায়। তবে তার আগেই কারখানার লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। বিস্ফোরণ ও আগুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি তিনজন দগ্ধ হয়েছেন এবং তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/অনিক/বকুল