বিয়ে থেকে ফিরে মাজেদা দেখলেন ঘর নেই, পড়ে আছে চৌকি
Published: 18th, January 2025 GMT
নাতির বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে দেখেন নিজের ভিটাবাড়ির টিনের চাল, বেড়া, আসবাবপত্রসহ সবকিছু লুট হয়ে গেছে। শুধু চালাহীন ঘরে পড়ে আছে একটি চৌকি। সেই চৌকিতে বসে বসে বিলাপ করছেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের বড়চালা গ্রামের মাজেদা খাতুন (৬০)। নিজের সহায় সম্বল হারিয়ে কোনোভাবেই যেন কান্না থামছে না তার।
শনিবার খোলা ঘরে ফেলে রাখা একটি চৌকিতে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান ভুক্তভোগী বৃদ্ধা।
তিনি জানান, গত ১৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল এলাকায় নাতির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। কিন্তু সেখান থেকে বাড়ি ফিরে নিজের এই তিনটি ঘরের কোনোটিরই চাল, বেড়া কিংবা কোনো আসবাব পত্রেরই হদিস পাচ্ছেন না তিনি।
এ ঘটনায় মাজেদার আপন ছোট ভাই মো.
জানা যায়, পোশাক শ্রমিক ও প্রবাস ফেরত মাজেদা খাতুনের (৬০) স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় প্রায় দশ বছর আগে। অভাব অনটনের তাড়নায় নিরাশ্রয় মাজেদা খাতুন ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। সেখানে পৈত্রিক ভিটার পাশে নিজের একখণ্ড জমিতে ছোট একটি টিনের ঘর তুলে বসবাস করতেন তিনি। সেই ঘরের সঙ্গেই টিনের চাল দিয়ে একটি রান্নাঘর এবং তার পাশে আরেকটি লাকড়ির ঘর বানিয়ে কায়ক্লেশে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি।
উপজেলার টোক ইউনিয়নের বড়চালা গ্রামের মৃত আবদুল আউয়ালের মেয়ে মাজেদা খাতুন আরও জানান, রাজধানীর গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত এক সহকর্মীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সে ঘরে তাদের একটি কন্যা সন্তানও হয়। সন্তান তাছলিমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বিয়ে দেন। গত সোমবার তাছলিমার ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিনি স্বজনদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে গেলে প্রতিবেশী আ. মতিন (৪৬) ও তার লোকজন বসতঘরসহ সবগুলো ঘর ভেঙে ফেলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি দাবি করেন, এ সময় তারা ঘরগুলোর টিনসহ সব আসবাবপত্র ও টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যান। জীবনের সব সঞ্চয় হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি।
তার আপন চাচা মো. সিরাজউদ্দিন (৮৩) জানান, ঘর ভাঙার সময় তিনি বাধা দিলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন।
তিনি আরও দাবি করেন, মাজেদার বসতঘর ও আশপাশের প্রায় ৭০ শতাংশ জমি তার বাবার নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। ১৯৪৪ সাল থেকে হালনাগাদ খাজনা দিয়ে ভোগ করে আসছেন তিনি। এ জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আদালতে মামলা দিলেও আদালত পরপর দুইবার মাজেদাদের পক্ষে রায় দেন। টোক ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলে চেয়ারম্যানও তাদের পক্ষে লিখিত রায় দেন। তাই প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে বসতঘর ভেঙে মালামাল লুটপাট করে নেওয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিবাদী আ. মতিন জানান, এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তাই তার লোকজন টিনের ঘরগুলো ভেঙে ফেলেছে। তবে তিনি তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল জানান, আমরা আদালতের কপিটি হাতে পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।