নাতির বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে দেখেন নিজের ভিটাবাড়ির টিনের চাল, বেড়া, আসবাবপত্রসহ সবকিছু লুট হয়ে গেছে। শুধু চালাহীন ঘরে পড়ে আছে একটি চৌকি। সেই চৌকিতে বসে বসে বিলাপ করছেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের বড়চালা গ্রামের মাজেদা খাতুন (৬০)। নিজের সহায় সম্বল হারিয়ে কোনোভাবেই যেন কান্না থামছে না তার।

শনিবার খোলা ঘরে ফেলে রাখা একটি চৌকিতে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান ভুক্তভোগী বৃদ্ধা।

তিনি জানান, গত ১৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল এলাকায় নাতির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। কিন্তু সেখান থেকে বাড়ি ফিরে নিজের এই তিনটি ঘরের কোনোটিরই চাল, বেড়া কিংবা কোনো আসবাব পত্রেরই হদিস পাচ্ছেন না তিনি।

এ ঘটনায় মাজেদার আপন ছোট ভাই মো.

সমশের বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ একটি মামলা করেছেন। পরে আদালত পিবিআইকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা যায়, পোশাক শ্রমিক ও প্রবাস ফেরত মাজেদা খাতুনের (৬০) স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় প্রায় দশ বছর আগে। অভাব অনটনের তাড়নায় নিরাশ্রয় মাজেদা খাতুন ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। সেখানে পৈত্রিক ভিটার পাশে নিজের একখণ্ড জমিতে ছোট একটি টিনের ঘর তুলে বসবাস করতেন তিনি। সেই ঘরের সঙ্গেই টিনের চাল দিয়ে একটি রান্নাঘর এবং তার পাশে আরেকটি লাকড়ির ঘর বানিয়ে কায়ক্লেশে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি।

উপজেলার টোক ইউনিয়নের বড়চালা গ্রামের মৃত আবদুল আউয়ালের মেয়ে মাজেদা খাতুন আরও জানান, রাজধানীর গুলশানের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত এক সহকর্মীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সে ঘরে তাদের একটি কন্যা সন্তানও হয়। সন্তান তাছলিমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বিয়ে দেন। গত সোমবার তাছলিমার ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিনি স্বজনদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে গেলে প্রতিবেশী আ. মতিন (৪৬) ও তার লোকজন বসতঘরসহ সবগুলো ঘর ভেঙে ফেলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি দাবি করেন, এ সময় তারা ঘরগুলোর টিনসহ সব আসবাবপত্র ও টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যান। জীবনের সব সঞ্চয় হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি।

তার আপন চাচা মো. সিরাজউদ্দিন (৮৩) জানান, ঘর ভাঙার সময় তিনি বাধা দিলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। 

তিনি আরও দাবি করেন, মাজেদার বসতঘর ও আশপাশের প্রায় ৭০ শতাংশ জমি তার বাবার নামে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। ১৯৪৪ সাল থেকে হালনাগাদ খাজনা দিয়ে ভোগ করে আসছেন তিনি। এ জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আদালতে মামলা দিলেও আদালত পরপর দুইবার মাজেদাদের পক্ষে রায় দেন। টোক ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলে চেয়ারম্যানও তাদের পক্ষে লিখিত রায় দেন। তাই প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে বসতঘর ভেঙে মালামাল লুটপাট করে নেওয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে বিবাদী আ. মতিন জানান, এ জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তাই তার লোকজন টিনের ঘরগুলো ভেঙে ফেলেছে। তবে তিনি তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল জানান, আমরা আদালতের কপিটি হাতে পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় বিএনপি কার্যালয়ে গুলি ও বোমা হামলা, নিহত ১

খুলনা নগরের আড়ংঘাটায় কুয়েট আইটি গেট–সংলগ্ন বিএনপির কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে ইমদাদুল হক (৫৫) নামের এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সোয়া নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মামুন শেখসহ আরও তিনজন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, রাতে মামুন শেখ স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে ওই কার্যালয়ে বসে ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা অফিস লক্ষ্য করে পরপর দুটি বোমা ও চারটি গুলি ছোড়ে। এরপর তারা পালিয়ে যায়। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পাশে থাকা শিক্ষক ইমদাদুল হকের শরীরে লাগে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে আবার গুলি চালালে মামুন শেখসহ অন্য দুজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বজনেরা তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

নিহত ইমদাদুল বছিতলা নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, তিনি একটি মাহফিলের অনুদান সংগ্রহের জন্য ওই কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।

আড়ংঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাসার বলেন, মামুন শেখ প্রায়ই স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কার্যালয়ে বসে আড্ডা দেন। গতকাল রাতেও তিনি আড্ডা দিচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ