Samakal:
2025-05-01@12:12:38 GMT

শ্বেতহস্তী পালন বন্ধ হউক

Published: 18th, January 2025 GMT

শ্বেতহস্তী পালন বন্ধ হউক

চাহিদা অপেক্ষা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অত্যধিক হইবার কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবিকে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র নামক এক প্রকার শ্বেতহস্তী পালন করিতে হইতেছে বলিলে ভুল হয় না। কারণ চুক্তি অনুযায়ী এই সকল কেন্দ্র হইতে বিদ্যুৎ ক্রয় না করিয়াও পিডিবিকে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। ফলে একদিকে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় অনাকাঙ্ক্ষিতরূপে, অন্যদিকে জনগণের উপর ইহার চাপ হ্রাসকল্পে ফি বৎসর ভর্তুকির পরিমাণ বর্ধমান। উদাহরণস্বরূপ, শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, বর্তমানে চাহিদা অপেক্ষা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫৪ শতাংশের অধিক; যদিও এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ২০ শতাংশ। ইহার ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বৎসরে ১ লক্ষ ৩৩ সহস্র কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের পকেটস্থ হইয়াছে। সমস্যার এইখানেই ইতি ঘটে নাই। এই ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামলাইতে সরকারকে উক্ত সময়ে অস্বাভাবিক হারে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করিতে হইয়াছে। দিন শেষে সরকারের ভ্রান্ত নীতির কাফফারা দিতে হইয়াছে সাধারণ জনগণকে। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ছিল প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৭৩ পয়সা, যাহা বর্তমানে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। যাহা অধিকতর উদ্বেগজনক, বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও দুই যুগের অধিক সময় দেশবাসীকে এই ঘানি টানিতে হইবে।

এহেন পরিস্থিতির পশ্চাতে বিগত সময়ে বিদ্যুৎ খাতে সম্পাদিত অসম চুক্তি, ভ্রান্ত নীতি ও অনিয়ম দায়ী হইলেও সকল কিছুর মূলে ছিল উক্ত সরকারের ভয়াবহ স্বজনতোষণ নীতি। বিষয়টি সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইতোপূর্বে বহুবার প্রকাশিত হইয়াছে, বিগত সরকারের সময় স্থাপিত প্রায় সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাগণ ছিলেন হয় সরাসরি সরকারি দলের সহিত যুক্ত অথবা ঐ দলের আশীর্বাদপুষ্ট। উহাদের হীনস্বার্থেই একদিকে বিদ্যুতের চাহিদা না থাকিবার পরও নূতন নূতন বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন পাইয়াছে, অন্যদিকে চুক্তির শর্তে রাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল রাখিয়া এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে মানহীন যন্ত্রপাতিসম্পন্ন ও অস্বাভাবিক জ্বালানিখেকো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হইয়াছে। শুধু উহাই নহে, রীতিমতো আইন করিয়া উক্ত অনিয়মকে সুরক্ষা দিবার প্রয়াসও চালাইয়াছে তৎকালীন সরকার। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়া সেই সকল অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি দফায় দফায় নবায়ন করা হইয়াছে। 

বিগত সময়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি-সংক্রান্ত একাধিক গণশুনানিতে আমরা বিশেষজ্ঞদের তথ্য-উপাত্ত সহকারে বলিতে শুনিয়াছি, অলস থাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান বন্ধের পাশাপাশি সিস্টেম লসরূপী চুরি প্রতিরোধ করিতে পারিলেই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাসকরণ সম্ভব। এমনকি উক্ত উপায়ে ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে প্রতিবৎসর প্রদেয় ভর্তুকি হইতেও মুক্তি অসম্ভব নহে। কিন্তু সেই পথে হণ্টন না করিয়া উক্ত সরকার বরাবর লোকসান হ্রাসকরণের ‘সহজ’ পন্থাস্বরূপ মূল্য বৃদ্ধির অপ্রিয় সিদ্ধান্তই গ্রহণ করিত।

আমরা মনে করি, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের কল্যাণে বিদ্যুৎ খাতে জনবান্ধব নীতি-কৌশল অবলম্বনের সময় আসিয়াছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক বিগত সরকারের চুক্তি খতাইয়া দেখিবার জন্য জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠনকে আমরা স্বাগত জানাইয়াছি। সমকালের সহিত আলাপচারিতায় কমিটির সদস্য এবং বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী যথার্থ বলিয়াছেন, কোনো পক্ষ ইচ্ছা করিলেই একটি চুক্তি বাতিল করা যায় না। তজ্জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ প্রয়োজন। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা হইতে মুক্তি যে সম্ভব– তাহা তিনি স্বীকার করিয়াছেন। বিশেষত পুরাতন ও অদক্ষ কেন্দ্র বাতিল, চুক্তি নবায়ন না করা, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নূতন কেন্দ্রের চুক্তি না করিয়া রিজার্ভ মার্জিন হ্রাসের ন্যায় যেই সকল পরামর্শ তিনি দিয়াছেন, সেইগুলির বাস্তবায়ন কঠিন নহে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত সরক র সরক র র হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।

এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ