Samakal:
2025-06-15@23:44:35 GMT

শ্বেতহস্তী পালন বন্ধ হউক

Published: 18th, January 2025 GMT

শ্বেতহস্তী পালন বন্ধ হউক

চাহিদা অপেক্ষা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অত্যধিক হইবার কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবিকে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র নামক এক প্রকার শ্বেতহস্তী পালন করিতে হইতেছে বলিলে ভুল হয় না। কারণ চুক্তি অনুযায়ী এই সকল কেন্দ্র হইতে বিদ্যুৎ ক্রয় না করিয়াও পিডিবিকে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। ফলে একদিকে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় অনাকাঙ্ক্ষিতরূপে, অন্যদিকে জনগণের উপর ইহার চাপ হ্রাসকল্পে ফি বৎসর ভর্তুকির পরিমাণ বর্ধমান। উদাহরণস্বরূপ, শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, বর্তমানে চাহিদা অপেক্ষা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫৪ শতাংশের অধিক; যদিও এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ২০ শতাংশ। ইহার ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বৎসরে ১ লক্ষ ৩৩ সহস্র কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের পকেটস্থ হইয়াছে। সমস্যার এইখানেই ইতি ঘটে নাই। এই ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামলাইতে সরকারকে উক্ত সময়ে অস্বাভাবিক হারে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করিতে হইয়াছে। দিন শেষে সরকারের ভ্রান্ত নীতির কাফফারা দিতে হইয়াছে সাধারণ জনগণকে। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ছিল প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৭৩ পয়সা, যাহা বর্তমানে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। যাহা অধিকতর উদ্বেগজনক, বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও দুই যুগের অধিক সময় দেশবাসীকে এই ঘানি টানিতে হইবে।

এহেন পরিস্থিতির পশ্চাতে বিগত সময়ে বিদ্যুৎ খাতে সম্পাদিত অসম চুক্তি, ভ্রান্ত নীতি ও অনিয়ম দায়ী হইলেও সকল কিছুর মূলে ছিল উক্ত সরকারের ভয়াবহ স্বজনতোষণ নীতি। বিষয়টি সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইতোপূর্বে বহুবার প্রকাশিত হইয়াছে, বিগত সরকারের সময় স্থাপিত প্রায় সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাগণ ছিলেন হয় সরাসরি সরকারি দলের সহিত যুক্ত অথবা ঐ দলের আশীর্বাদপুষ্ট। উহাদের হীনস্বার্থেই একদিকে বিদ্যুতের চাহিদা না থাকিবার পরও নূতন নূতন বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন পাইয়াছে, অন্যদিকে চুক্তির শর্তে রাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল রাখিয়া এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে মানহীন যন্ত্রপাতিসম্পন্ন ও অস্বাভাবিক জ্বালানিখেকো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হইয়াছে। শুধু উহাই নহে, রীতিমতো আইন করিয়া উক্ত অনিয়মকে সুরক্ষা দিবার প্রয়াসও চালাইয়াছে তৎকালীন সরকার। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়া সেই সকল অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি দফায় দফায় নবায়ন করা হইয়াছে। 

বিগত সময়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি-সংক্রান্ত একাধিক গণশুনানিতে আমরা বিশেষজ্ঞদের তথ্য-উপাত্ত সহকারে বলিতে শুনিয়াছি, অলস থাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান বন্ধের পাশাপাশি সিস্টেম লসরূপী চুরি প্রতিরোধ করিতে পারিলেই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাসকরণ সম্ভব। এমনকি উক্ত উপায়ে ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে প্রতিবৎসর প্রদেয় ভর্তুকি হইতেও মুক্তি অসম্ভব নহে। কিন্তু সেই পথে হণ্টন না করিয়া উক্ত সরকার বরাবর লোকসান হ্রাসকরণের ‘সহজ’ পন্থাস্বরূপ মূল্য বৃদ্ধির অপ্রিয় সিদ্ধান্তই গ্রহণ করিত।

আমরা মনে করি, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের কল্যাণে বিদ্যুৎ খাতে জনবান্ধব নীতি-কৌশল অবলম্বনের সময় আসিয়াছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক বিগত সরকারের চুক্তি খতাইয়া দেখিবার জন্য জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠনকে আমরা স্বাগত জানাইয়াছি। সমকালের সহিত আলাপচারিতায় কমিটির সদস্য এবং বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী যথার্থ বলিয়াছেন, কোনো পক্ষ ইচ্ছা করিলেই একটি চুক্তি বাতিল করা যায় না। তজ্জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ প্রয়োজন। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা হইতে মুক্তি যে সম্ভব– তাহা তিনি স্বীকার করিয়াছেন। বিশেষত পুরাতন ও অদক্ষ কেন্দ্র বাতিল, চুক্তি নবায়ন না করা, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নূতন কেন্দ্রের চুক্তি না করিয়া রিজার্ভ মার্জিন হ্রাসের ন্যায় যেই সকল পরামর্শ তিনি দিয়াছেন, সেইগুলির বাস্তবায়ন কঠিন নহে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত সরক র সরক র র হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনের অপচয় রোধ জরুরি

দেশে পানিতে ডুবিয়া শিশুর প্রাণহানির যেই চিত্র শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ঈদুল আজহার ছুটি আরম্ভ হইবার পূর্বের ১০ দিবসেই বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছে, যাহাদের মধ্যে ১৩ জন ছিল শিশু। উপরন্তু, ঈদুল ফিতরের পূর্বাপর ১২ ছুটিতে মোট ৪৯ জন অনুরূপভাবে প্রাণ হারাইয়াছে, যথায় শিশুর সংখ্যা ৪৭। এদিকে ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঈদুল ফিতরে ৫৮ জন ও ঈদুল আজহায় ৬৫ শিশু পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছিল। এই ধারণা অমূলক নহে যে ঈদের ছুটিতে শহরবাসী অনেকে ছুটিয়া যায় গ্রামাঞ্চলে, যেইখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ শিশুদের আকৃষ্ট করিয়া থাকে। তাহারা পানির আশপাশে খেলার বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকে না, জানে না খাল-বিল, ডোবা-পুকুর কতটা বিপজ্জনক পরিণতি ডাকিয়া আনিতে পারে। গ্রামের বিস্তৃত ও অপেক্ষাকৃত নির্জন পরিবেশে শিশুদের তদারকির অভাবও প্রকট। অভিভাবকগণ সাধারণত গৃহকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তেমন নজর থাকে না শিশুর গতিবিধির উপর। এই সকল কিছু মিলাইয়া সংশ্লিষ্ট শিশুর জন্য সৃষ্টি হয় মৃত্যুফাঁদ। দুর্ভাগ্যজনক হইল, এই সকল বিয়োগান্তক ঘটনার কারণে গ্রামের মুক্ত পরিবেশে অনেক পরিবারে ছুটির উচ্ছ্বাস নিমেষে মাটি হইয়া যাইবার পরও জনচেতনতা পরিলক্ষিত হইতেছে না। ফলস্বরূপ, এহেন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়াই চলিয়াছে।

প্রতিটি শিশুর প্রাণই মূল্যবান। একটি জীবন অকালে ঝরিয়া যাইবার অর্থ একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু, একটি ভবিষ্যতের হারাইয়া যাওয়া। এই ক্ষতি শুধু সংশ্লিষ্ট পরিবারের নহে, সম্পূর্ণ সমাজের এবং রাষ্ট্রের। অথচ এহেন মৃত্যু রোধে রাষ্ট্রীয়ভাবেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নহে। প্রতিবেদনমতে, ২০১১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবিয়া শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে চিহ্নিত করিবার পর ২০২২ সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ সহস্র কমিউনিটিবেজড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল এক হইতে পাঁচ বৎসর বয়সী শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও সাঁতার শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি। বাস্তবে কয়েকটি প্রশিক্ষণ ব্যতীত কিছুই হয় নাই। ২০১৫ সালে স্কুল-কলেজে সাঁতার শিখাইবার নির্দেশনা প্রদান করা হইলেও তাহা এখনও উপেক্ষিত। জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা নির্ধারিত থাকিলেও বাস্তবায়নের চিত্র প্রায় শূন্য। এই অবস্থায় দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় ধরা পড়িয়াছে, দেশে প্রতিবৎসর প্রায় ১৪ সহস্র শিশু পানিতে ডুবিয়া মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু প্রাণ হারায়। তাদের ৭৫ শতাংশের বয়স পাঁচ বৎসরের নিচে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে পানিতে ডুবিয়া প্রতিবৎসর আহত হয় অন্তত এক লক্ষ শিশু। ইহাদের মধ্যে প্রায় ১৩ সহস্র পঙ্গু হইয়া যায়। পরিণামে ঐ শিশুরা পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের বোঝা হইয়া দাঁড়ায়।

বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেন, দেশে অপঘাতজনিত শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবিয়া যাওয়া। এমনকি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় যত শিশু মৃত্যুবরণ করে, ততোধিক শিশু মারা যায় পানিতে ডুবিয়া। এতদসত্ত্বেও এই প্রাণহানি লইয়া কোনো তথ্যপ্রবাহ ব্যবস্থা নাই, অতএব সরকারি কোনো তথ্যভান্ডারও গড়িয়া উঠে নাই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তথ্যাদি নথিভুক্তি শুরু হইলে বৎসরান্তে ইহার অন্তত হিসাব মিলিত। বিলম্বে হইলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটুক, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। এই বিষয়ে প্রয়োজনে ইউনিসেফের ন্যায় সংস্থাসমূহকেও কাজে লাগানো যায় বলিয়া আমরা মনে করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জীবনের অপচয় রোধ জরুরি