উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার ৪০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার। প্রায় ৪৫ বছর ধরে তারা উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের গুড়ইল মৌজার একটি অর্পিত সম্পত্তিতে বসবাস করছেন। এই জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) মধ্যরাতে পাড়ার রিপন মুর্মু নামের এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ নিয়ে রিপন মুর্মু তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি।

তানোর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। আমি জমিজমার বিষয়টা দেখি না। তারপরেও অভিযোগ যখন হয়েছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরো পড়ুন:

বিজিবিকে মেরে মহিষ ছিনিয়ে নিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা 

বিএনপি নেতার বাড়িতে মিলল মাদক ও টাকা, স্ত্রী-ছেলে গ্রেপ্তার

অভিযোগে মোসারুল হক দুখু (৬০), বাবুল মৃধা বাবু (৪০), মিজান সরকার (৩৫), মো.

জুলফর (৪৫), মো. নাজমুল (২৯), মো. বিপ্লব (২২), শরিফুল ইসলাম ভুলু (৬০) ও মো. ভাসা (৫৫) নামে আট জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ভুলুর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ। অন্যদের বাড়ি তানোরের গুড়ইল গ্রামে। এদের মধ্যে বাবুল মৃধা বাবু ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে গুড়ইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের বাতা ও পলিথিন দিয়ে বাড়ির উঠোন ঘিরেছিলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের রিপন মুর্মু। আগুনে পলিথিন পুড়ে গেছে। গ্রামবাসী জানান, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন মোসারুল হকসহ অন্যরা। তারা পাড়ার শুরুতেই থাকা রিপনের বাড়ির বেড়ায় আগুন দেন। পাড়ার সবাই একযোগে বের হয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। তখন তারা আগুন নেভান।

পাড়ার হেরা টুডু, শিবলাল মুর্মু, হরেন মুর্মু, বিশ্বনাথ সরেন, বাবুলাল সরেন, জগেন টুডু, মীরেন মার্ডি, মনোসুরি কিস্কু, রসিক মার্ডি, পাতরাজ টুডু, ফিলিপ কিস্কু, সৈনিক হাঁসদাসহ অন্যরা এই প্রতিবেদকে ঘিরে ধরেন। তারা বলেন, মৌজার ১০ একর ৩০ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন শিবদাস ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি। ষাটের দশকে রাজশাহীর দারুশা দাঙ্গার পর শিবদাস ভট্টাচার্য ভারতে চলে যান। তারপর তার জমি অর্পিত সম্পত্তি হয়ে যায়। প্রায় ৩৩ বিঘা জমির মধ্যে ১০ বিঘায় তারা ৪০টি পরিবার ৪৫ বছর ধরে বসবাস করছেন।

আরএস রেকর্ডে এখনো জমির মালিক হিসেবে শিবদাস ভট্টাচার্যের নাম লেখা আছে। ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটও এই সম্পত্তির মালিক হিসেবে শিবদাস ভট্টাচার্যের নাম আসে। অথচ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শরিফুল ইসলাম ভুলু এ জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারগুলোর।

তারা জানান, তাদের বসতভিটা দখলে নিতে শরিফুল ইসলাম ভুলু আদালতে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় রায় এসেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পক্ষে। এরপর ভুলু আবার আপিল করেছেন। সেই মামলা এখনো চলমান। এর মধ্যেই ঘরবাড়ি পুড়িয়ে তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ মামলা রেকর্ড করছে না।

গ্রামের গৃহবধূ সাবিনা টুডু বলেন, ‍“১৮ বছর আগে বিয়ের পর এই গ্রামে এসেছি। কয়েকবছর ধরে রাতে ঘুমাতে পারি না। মাঝে মাঝেই লোকজন এসে অস্ত্রপাতি দেখায়। গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। আমরা ব্যাপক অত্যাচারের মুখে আছি। কখন না জানি তুলে দেবে সেই চিন্তা করছি।”

রিপন মুর্মু বলেন, “এই চক্রটা শিবদাস ভট্টাচার্যের ফেলে যাওয়া প্রায় ২০ বিঘা ধানি জমি দখল করে আছে। অথচ ওই জমিও তাদের না। ওটা খাস জমি, ভূমিহীনদের অধিকার। ওরা এখন আমাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বাকি ১০ বিঘা জমিও দখলে নিতে চায়।”

তিনি বলেন, “গত পরশু (শুক্রবার) রাতে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তারপর সকালে থানায় অভিযোগ করি। সারাদিনেও পুলিশ আসেনি। সন্ধ্যায় একজন পুলিশ এসে দেখে গেছে। কিন্তু তারপর মামলা রেকর্ড করেনি। আমাদের কাছে পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক মনে হচ্ছে।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম ভুলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আরেক অভিযুক্ত মোসারুল হক দুখু বলেন, “শরিফুল ইসলাম ভুলু ভালো লোক। আমরা তার মাঠের জমি চাষাবাদ করি। আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মিথ্যা অভিযোগ।”

তিনি দাবি করেন, “সব জমির মালিক এখন শরিফুল ইসলাম ভুলু।” ভারতে যাওয়া ব্যক্তির অর্পিত সম্পত্তি তার নামে কীভাবে হলো জানতে চাইলে মোসারুল বলেন, “শিবদাস ভারতে যাওয়ার আগে বিনিময় করেছিলেন। যার সঙ্গে তিনি বিনিময় করেন, তার কাছ থেকে শরিফুল জমি কিনেছেন। ভুল করে জমি অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র কর ড ত রপর

এছাড়াও পড়ুন:

জব্দ করা জাটকা এতিমখানায় বিতরণ, সেই মাছ লুট করলেন আড়তদারেরা

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জব্দ করা ৭০ কেজি জাটকা দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছিল। তবে সেই মাছ লুট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আড়তদারের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জাটকা রক্ষার অভিযানে আমিরাবাদ ও দশানী বাজার থেকে ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। পরে আমিরাবাদ এলাকায় জব্দ করা জাটকা উপজেলার হাজীপুর ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় কিছু দুস্থ মানুষকেও কিছু জাটকা দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জাটকা নিয়ে ওই দুই মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কমিটির লোকজন সন্ধ্যায় আমিরাবাদের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান। তখন আমিরাবাদ বাজারের মাছের আড়তদার আবুল প্রধান, আরিফ গাজী, সেরু প্রধানিয়া, দেলু বেপারীসহ আরও কয়েকজন তাঁদের পথরোধ করেন এবং জাটকাগুলো লুট করে নিয়ে যান।

হাজীপুর মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, মাছের ওই আড়তদারেরা তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে জাটকা লুট করে নিয়ে যান। বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে আবুল প্রধান, আরিফ গাজী ও সেরু প্রধানিয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দেলু ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, জাটকা লুট করা তাঁদের উচিত হয়নি। ওই জাটকা আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁরা ফেরত দেবেন। এটি তাঁদের বড় ভুল হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। জাটকা উদ্ধারে ব্যবস্থাপনা নেওয়া হচ্ছে।

ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর জাটকা উদ্ধারে তিনি থানার ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতিমদের জাটকা লুট হওয়ার বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ