ভবদহে বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ায় সপ্তাহব্যাপি বিক্ষোভের ডাক
Published: 20th, January 2025 GMT
যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ায় সপ্তাহব্যাপি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। তারা বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) নীল রতন ধর রোডস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ভবদহ অঞ্চলের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে ৫টি দাবিতে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ সময় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু ও অনিল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল সংবাদ সম্মেলনে জরুরিভিত্তিতে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানান। দাবিগুলো হচ্ছে-
১.
২. চলতি বোরো আবাদ সফল করার লক্ষ্যে ভবদহ স্লুইস গেট খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা অপরিকল্পিত তৎপরতা বন্ধ করে ফসল ফলানো নিশ্চিত করতে হবে।
৩. এখনই সম্ভাব্য বিলে টিআরএম চালু করতে হবে। এটা সমাধানের প্রধান উপায় হিসেবে আইনি দীর্ঘসূত্রিতার অবসান করতে হবে।
৪. নদীগর্ভে সকল অবৈধ দখলদার স্থাপনা উচ্ছেদ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. কৃষি ঋণ আদায় বন্ধ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও দিনমজুর গরীব কৃষকদের খাদ্য দিতে হবে।
চৈতন্য কুমার পাল জানান, ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলে অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে। বোরো চাষ হবার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা নস্যাৎ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়ী।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেন।
এসব দাবির ভিত্তিতে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ ও টেন্ডার করা হয়েছে। তবে খালের ইউ-ড্রেন অংশ ৩৩ ফুট চওড়া করায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে আমডাঙ্গা খালের স্লুইসগেট প্রশস্ত করার। সেক্ষেত্রে ইউ-ড্রেন কমপক্ষে আরও ১০ ফুট বাড়ানো দরকার। ভবিষ্যতে বাড়াতে গেলে নতুন সংকট ও অর্থ অপচয় হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই জনপদ ডুবে যাবার যে সম্ভাবনা তা মোকাবেলায় পানি নিষ্কাশনের সকল পথ উন্মুক্ত প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে বোরো চাষ করার লক্ষ্যে ভবদহ স্লুইসগেট থেকে ভাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া হরি নদী খননের জন্য আমাদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৮টি খনন যন্ত্র প্রদান করা হয়। নদী খননের সাথে সাথে গেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চলেছেন। ফসল ফলানোর জন্য উপদেষ্টা মহোদয়ের বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ করে দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বিগত সরকারের আমলে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে টিআরএম প্রকল্প বাতিল ও পাম্প চালু করে নদীকে হত্যা করা হয়েছিল। এখনো সেই চক্র সক্রিয় এবং তারা সরকারের কাছে কিছু স্বাক্ষরসহ আবেদন করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের মধ্যে সেই ভূত চেপে আছে। সে কারণেই সরকারি সিদ্ধান্ত বানচাল হতে চলেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে ভবদহ স্লুইসগেট খুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার অব্যাহত রাখলে ফসল ফলানো সম্ভব হতে পারে।”
তিনি বলেন, “টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হবে মর্মে সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টিআরএম বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎপর। ফলে জনপদের মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, চলমান নদী খনন কাজের সাথে এখনই একটি বিলে টিআরএম চালু করা হোক। তা না করা গেলে যে খনন কাজ হচ্ছে তা আবার ভরাট হয়ে যাবে। ফলে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, ডুমুরিয়ায় নদী-খাল সংস্কারের কাজ অর্থহীন হয়ে পড়বে। ফলে জরুরী ভিত্তিতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ ও চালুর উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “পানিসম্পদ উপদেষ্টা যশোর সার্কিট হাউজে গণশুনানিতে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি গঠন করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সে নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন।”
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প উপদ ষ ট র জন য সরক র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
৮ দাবিতে সিলেট বিভাগে রেল অবরোধ
সিলেট-আখাউড়া রেলপথে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা, রেলপথ সংস্কার, দুটি নতুন ট্রেন চালু করাসহ আট দাবিতে পূর্বঘোষিত রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সিলেট বিভাগের সব রেলস্টেশনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। অবরোধের কারণে ট্রেন যাত্রা বিলম্ব হয়। বিশেষ করে, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া রেলস্টেশনে অবরোধকারীরা রেললাইনে অবস্থান করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, শমশেরনগর, ভানুগাছ স্টেশনে দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির পাশাপাশি সাধারণ মানুষও একাত্মতা প্রকাশ করে লাল পতাকাসহ স্টেশনগুলোতে অবস্থান নেন।
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক আতিকুর রহমান এক বিবৃতিতে সাধারণ জনগণকে ১ নভেম্বর ট্রেন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন আগেই।
তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের রেলপথের বেহাল অবস্থা দূর করতে এবং যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে ৪ মাস ধরে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ায় অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে আন্দোলনকারীরা ট্রেন আটকালে রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের ডিআরএম ১৫ দিনের মধ্যে আলোচনার আশ্বাস দেন।
এর পর ১০ অক্টোবর কুলাউড়া জংশন স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিং রুমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. মহিউদ্দিন আরিফ। তবে, বৈঠকে আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে আন্দোলনকারীরা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১ নভেম্বর অবরোধের ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারীদের ৮ দাবি
সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু করা। আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডাবল লাইন বাস্তবায়ন। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে অন্তত একটি লোকাল ট্রেন চালু করা। আখাউড়া-সিলেট সেকশনের সব বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু করা। কুলাউড়া জংশন স্টেশনে আসন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। কালনী ও পারাবত ট্রেনের যাত্রাবিরতি প্রত্যাহার করা। শিডিউল বিপর্যয় রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন ব্যবহার ও যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।আন্দো
লনকারীরা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সিলেটবাসী প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা আরো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
কুলাউড়া রেল স্টেশনে অবরোধ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবেদ রাজা প্রমুখ।
এদিকে, অবরোধ চললেও সকাল সাড়ে ৮টার পর সিলেট থেকে আসা ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে।দুপুর ১২টা ৩০ মি
নিটে কুলাউড়া স্টেশন মাস্টার রোমান আহমদ জানিয়েছেন, রেলপথ অবরোধের কারণে দুটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্ব হচ্ছে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেছেন, আট দফা দাবিতে অবরোধ চললেও এর প্রভাব সিলেট রেলস্টেশনে পড়েনি। সকালের কালনী ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। আবার চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা ট্রেন দেরিতে স্টেশনে আসায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। ১২টার জয়ন্তিকা ট্রেন একটু দেরিতে ছেড়ে যায়।
ঢাকা/আজিজ/রফিক