২৯ দিন পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, স্টেডিয়াম সংস্কার কতোদূর?
Published: 20th, January 2025 GMT
দীর্ঘ ২৯ বছর পর আইসিসির কোনো ইভেন্ট আয়োজন করার সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান। ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক তারা। তাইতো এই আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস ও আয়োজনের কমতি রাখছে না সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি মাঠে গড়াবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। হাতে সময় আছে মাত্র ২৯ দিন। কিন্তু এখনও সংস্কার কাজ চলছে স্টেডিয়ামগুলোর।
এই যেমন আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি, ২০২৫) করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজের চূড়ান্ত ধাপ শুরু হলো। যেখানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী ম্যাচে এখানেই লড়বে পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ড। ২১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ১ মার্চ ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার একটি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে এখানে।
আরো পড়ুন:
রুদ্ধশ্বাস জয়ে ঢাকার ‘প্রতিশোধের’ হাসি
এবার দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক পরিবর্তন
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সংস্কার কাজের মেয়াদ বাড়লো। করাচি স্টেডিয়ামের জেনারেল ম্যানেজার আরশাদ খান ও প্রজেক্ট ম্যানেজার মুহাম্মদ বিলাল চৌহান জানিয়েছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এই স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে।
এই স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ সালে। কিন্তু সেটা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। এরপর বাড়িয়ে করা হয় ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫। এখন সেটা ধরা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
পাঁচতলা স্টেডিয়াম ভবনটির কাজ প্রায় শেষ। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এই ভবনের নিচতলায় থাকবে আইসিসি এন্টি-করাপশন ও এন্টি-ডোপিং ইউনিট, ফিজিও রুম, ম্যাচ অফিসিয়ালদের রুম।
দ্বিতীয় তলায় থাকবে ড্রেসিং রুম। যেটার সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রয়েছে ২৪টি হসপিটালিটি বক্স, যেখানে ১ হাজার লোক বসে খেলা দেখতে পারবে। এটার কাজও শেষ পর্যায়ে। পঞ্চম তলায় থাকবে চেয়ারম্যান বক্স ও অ্যাডমিন ব্লক। এগুলোর কাজ পরে শেষ করা হবে।
এছাড়া এই স্টেডিয়ামের ভিআইপি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। সেটাতে এক্সক্লুসিভ সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকবে। সেন্ট্রাল ভবন থেকে মাঠে প্রবেশ করতে খেলোয়াড়দের জন্য আধুনিক পাথওয়ে থাকব। দর্শকদের জন্য আরামদায়ক সিটের ব্যবস্থা করতে গাদ্দাফি স্টেডিয়াম থেকে সিট এনে এখানে বসানো হয়েছে।
এছাড়া এই স্টেডিয়ামে থাকবে দুটি ডিজিটাল স্কোরবোর্ড। যেগুলোর সাইজ ৮০ ফুট বাই ৩০ ফুট। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেডিয়ামের মতো করাচি স্টেডিয়ামেও বসানো হচ্ছে আধুনিক এলইডি লাইট। ছয়টি খুঁটিতে লাইটগুলো বসানো হচ্ছে।
নিরাপত্তার জন্য ১০ ফুট উচ্চতার লোহার বেড়া বসানো হয়েছে। অনুশীলনের জন্য ওভাল গ্রাউন্ডে বসানো হয়েছে দুটি ফ্লাডলাইট। পাশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পথচারী ব্রিজ। যেটা দিয়ে দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন। সংস্কার করা এই স্টেডিয়ামে একসঙ্গে ২ হাজার ৭০০ গাড়ি পাকিং করা যাবে। এটি অবশ্য আইসিসির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
এসব সংস্কার করতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের খরচ হচ্ছে ৩.
শুধু করাচিই নয়, লাহোরের মুয়াম্মর গাদ্দাফি স্টেডিয়ামেরও সংস্কার কাজ চলছে। সেটার কাজও ৩০ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। আইসিসি ইতোমধ্যে লাহোর ও করাচি স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখে গেছে। তারা অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই স ট ড য় ম র জন য আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫