সিলেটের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আট তরুণ-তরুণীকে আটক করে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। রোববার দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকায় রিজেন্ট পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। অনেকেই মন্তব্য করছেন, রিসোর্ট মালিককে শাস্তি না দিয়ে এমন কাজের মধ্য দিয়ে কয়েকটি পরিবারকে হেয় করা হয়েছে।

জানা যায়, রোববার দুপুরে রিজেন্ট পার্ক ঘেরাও করে ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণীদের আটক করেন দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার বাসিন্দারা। তাদের মধ্যে আটজনকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি আটজনকে স্থানীয় কাজী ডেকে দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলাম ইউনিয়নের কাজী আব্দুল বারী। বিবাহিতদের মধ্যে তিনজনের ১০ লাখ করে এবং একজনকে ১২ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। বিয়ে হওয়া যুগলরা দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানী নগর উপজেলার বাসিন্দা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে উদ্বোধন করার পর থেকে সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নাম পার্ক হলেও এখানে তরুণ-তরুণীরা অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত থাকেন। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও এসব কক্ষ ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। রোববার দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দারা পার্কে হানা দিয়ে তরুণ তরুণীদের কক্ষের ভেতর আটকে রাখলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ লাইভ করতে থাকে। এমনকি তরুণ-তরুণীদের নানা অপ্রীতিকর প্রশ্ন করতে শোনা যায়। তাদের ছবিও দেওয়া হয়।

ফয়সল আহমদ নামে একজন লেখেন, এলাকাবাসী ও ‘মিডিয়া ফেসবুক’ ব্যবহারকারীদের অনুরোধ প্রতিটি পদক্ষেপ আগামীতে ভেবে-চিন্তে করবেন। কারো ব্যক্তিগত জীবনের ভিডিও বা ছবি প্রকাশ করা তাদের সারা জীবনের কলঙ্ক হতে পারে। ভবিষ্যতে তাদের সন্তান হবে, তাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। সমাজ গড়তে হলে ব্যক্তি নয়, সিস্টেম বদলাতে হবে।

লিমা নামে একজন লেখেন, হায়ার ইজ দ্যা ল, দে আর এডাল্ট অ্যান্ড দ্যা হ্যাভ রাইট টু গো এনি হোয়ার, ইটস রিয়েলি শেইম ফর কান্ট্রি।

দেওয়ান আরাফাত চৌধুরী জাকি লেখেন, এভাবে লাইভে নিয়ে আসা ঠিক হয়েছে কি?

মো.

রিপন নামের এক ব্যক্তি জানান, রিসোর্টের মালিককে শাস্তি না দিয়ে ওদেরকে শাস্তি দিয়ে কি হবে? যাদেরকে শাস্তি দেওয়ার তাদের শাস্তি দেন। 

মিডিয়ায় এভাবে প্রচারের কারণে সিলেটের মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও কেউ কেউ লিখেন। বিএনপি নেতা তছির আলী জানান, গোপনে বিয়ে দিলে ভালো হতো। 

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি তাজুল ইসলাম তাজুল বলেন, খবর পেয়ে মুরব্বিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে আটক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এনে আটজনকে বিয়ে পড়িয়ে দেই এবং বাকিদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়। এলাকার লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে বিয়ের ব্যবস্থা করার কথা বললে এলাকার লোকজন শান্ত হন বলেও তিনি জানান। 

এ বিষয়ে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মোগলাবাজার থানা পুলিশ যায়। তবে স্থানীয় মুরুব্বিরা ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে তাদের জিম্মায় দিয়ে দেন। তবে তিনি বিয়ের বিষয় সম্পর্কে জানেন না বলে জানান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে