১২ দফা দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
Published: 20th, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে একটি টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। সোমবার দুপুরে পুলিশ লাইন্সের সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শহরের পশ্চিম ইসদাইর মালঞ্চনগর এলাকার আরএন নিট টেক্সটাইলের শ্রমিকরা এ অবরোধ করে। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
শ্রমিক মুক্তার আহমেদ ও জাহানারা জানান, কাজকর্ম ঠিকমতো না হওয়ায় মিরন নামের এক শ্রমিককে কয়েক দিন আগে মালিকপক্ষ ছাঁটাই করে। শনিবার কারখানায় মিরনের সঙ্গের লোকজন বলতে থাকেন, মিরনকে জোর করে ছাঁটাই করা হয়েছে এবং তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। এক পর্যায়ে তারা কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার (পিএম) রিপন ও তৃতীয় তলার সুইং ইনচার্জ আশিকসহ কয়েকজন শ্রমিকের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। তারা সুইং ফ্লোরের বুয়াকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়। এর জেরে রোববার মালিকপক্ষ সিসি ক্যামেরা দেখে ৫৭ জন শ্রমিককে চিহ্নিত করে শোকজ নোটিশ দেয়। পরে গার্মেন্ট বন্ধ করে দিয়ে ফতুল্লা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে।
শ্রমিকরা জানান, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আরএন নিট টেক্সটাইল থেকে মিছিল নিয়ে শতাধিক শ্রমিক পুলিশ লাইনের সামনে এসে রাস্তা অবরোধ করেন। তারা এ সময় ১২ দফা দাবি জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– সব শ্রমিকের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৯ শতাংশ বৃদ্ধি, বার্ষিক অর্জিত ছুটির টাকা দেওয়া, হাজিরা বোনাস পাঁচশ টাকা করা, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া, ইস্তফা দিলে শ্রম আইন অনুযায়ী সার্ভিস বেনিফিট, মাতৃত্বকালীন ছুটি, প্রোডাকশন শ্রমিকদের ৬টার পর কাজ করলে ওভার টাইমের দ্বিগুণ মজুরি, দুটি বেসিকের সমপরিমাণ ঈদ বোনাস, অবিলম্বে প্রোডাকশন ম্যানেজার (পিএম) রিপন ও তৃতীয় তলার সুইং ইনচার্জ আশিককে চাকরি থেকে অপসারণ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ পুলিশ দিয়ে হয়রানি বন্ধ করা।
সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, ফতুল্লা থানা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে
আসেন। তারা দুপুর ১টার দিকে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক
সাইফুল ইসলাম বলেন, ১২ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করছি। তবে গার্মেন্টে কোনো বিশৃঙ্খলা তারা সমর্থন করেন না।
আরএন নিট টেক্সটাইলের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, একজনের ছাঁটাইয়ের ঘটনা নিয়ে তাঁর সমর্থকরা পিএম, জিএম, সুইং ইনচার্জসহ অপর শ্রমিকের ওপর হামলা চালায়। সিসি ক্যামেরা দেখে তারা প্রথমে ৫৭ জন শ্রমিককে চিহ্নিত করেছিলেন। পরে ৪১ জনকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ৪১ জনকে শ্রম আইন অনুযায়ী সব পাওনা শোধ করে ছাঁটাই করবেন। এ জন্য তারা সড়ক অবরোধ করেছেন। (আজ) মঙ্গলবার তারা গার্মেন্ট খুলবেন।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) সেলিম বাদশা জানান, শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে ও তাদের ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছে। শিল্প পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবর ধ ন র য়ণগঞ জ সড়ক অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।