চীনা ঋণের সুদের হার ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। অপরদিকে, চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ—জিডিআই, জিএসআই এবং জিসিআই-তে যোগদানে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন চীনকে প্রেফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং সরকারি কনসেশনাল ঋণ (জিসিএল) উভয় ক্ষেত্রেই সুদের হার ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ  করার প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ থেকে ৩০ বছর করার অনুরোধ জানান তিনি।

বৈঠকে ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের ভালো রেকর্ডের প্রশংসা করে চীনা  পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হন এবং সুদের হার কমানোর অনুরোধটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর তিন বছর ধরে চীনা বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের কোটা ফ্রি প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশের অনুরোধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ে ৩ থেকে ৪টি স্বীকৃত হাসপাতালকে বিশেষায়িত করার চীনের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ঢাকায় একটি বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশের প্রস্তাবকেও তিনি স্বাগত জানান। শিক্ষা, রেলপথ, কৃষি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পশুসম্পদ, মৎস্য, জাহাজ ভাঙা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং নীল অর্থনীতির মতো খাতে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির সহযোগিতা এবং সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করার জন্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানায় উভয় পক্ষ। বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান স্বীকার করে উভয় পক্ষ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে অব্যাহত সহযোগিতার ওপর জোর দেয়। তারা চীনা অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্প যেমন দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন এবং ৪-জি সম্প্রসারণে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ  প্রকাশ করে।

বৈঠকে উভয় নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করার জন্য তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য মিয়ানমারের সাথে চীনের অব্যাহত সম্পৃক্ততার আশ্বাস দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশকে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ—জিডিআই, জিএসআই এবং জিসিআই-তে যোগদানের কথা বিবেচনা করার অনুরোধও করেন। জবাবে বাংলাদেশ প্রস্তাবগুলি পরীক্ষা করার এবং বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনায় চীনের সাথে জড়িত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক ফোরামে একে অপরের প্রার্থিতার বিষয়ে সহযোগিতা করতেও সম্মত হন।

উল্লেখ্য, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে সোমবার দেশটিতে সফরে যান  পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বেইজিং সফর শেষে সাংহাই যাবেন। তিন দিনের সফর শেষে আগামী ২৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে ফিরবেন।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট রমন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের তফসিলে ভোটের তারিখ ছাড়াও যা যা থাকে

নির্বাচনকে ঘিরে দেশের মানুষের কৌতূহল ঘটতে যাচ্ছে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে। তবে এবার জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট একই দিনে হওয়ার কথা, যে কারণে আবহ কিছুটা আলাদা।  

আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করবে; এই তফসিলের মাধ্যমে ছাড়বে ভোটের ট্রেন। আর সেই ট্রেনের গন্তব্য অর্থাৎ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখেই থাকবে সবার দৃষ্টি।

আরো পড়ুন:

‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে কমিশন সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে’

ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগে জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠালো ইসি

যতদূর জানা গেছে, ইসি ভোটগ্রহণের যে তারিখটি ঘোষণা করবে, ওই দিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুবিধা থাকার কথা। 

এবার যেহেতু দুটি ভোট হবে, ফলে দুটি পৃথক রঙের ব্যালট থাকবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হওয়ার কথা সাদা-কালো। তবে গণভোটের ব্যালটের রং হওয়ার কথা গোলাপি।

দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হতে যাচ্ছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিলও ঘোষণা করবেন। এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা হয়।

তফসিলের মধ্যে কী কী থাকে
তফসিলে মূলত নির্বাচন আয়োজনের শুরু থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথগ্রহণ পর্যন্ত সময়সূচির বিস্তারিত বর্ণনা থাকে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “খুব সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে এটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখের আইনি ঘোষণা।”

তফসিলে থাকে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে প্রার্থীরা কবে থেকে মনোনয়নপত্র কিনতে ও জমা দিতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র বাছাই করতে কত দিন সময় লাগবে।

বাছাইয়ে বাতিল হলে প্রার্থীর আপিল করার সময়সীমা।

প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর তালিকা প্রকাশের তারিখ।

নির্বাচনি প্রচার কখন থেকে শুরু হবে এবং কতদিন চলবে।

ভোটের তারিখ ও সময়, ভোট গণনার প্রক্রিয়া ও স্থান।

নির্বাচনী প্রতীক ঘোষণা ও প্রচারের সূচি।

তফসিলের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয়
সংবিধানে কিছু বিষয় নিশ্চিতভাবে বলা থাকে। তাই সেগুলোতে আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে এবারের নির্বাচন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতার বলে সংসদ ভেঙে দেন এবং এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেন। তাই এবার ৯০ দিনের বাধ্যবাধকতা নেই; কমিশন দুই মাসের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করছে।

ঢাকা/এএএম/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের অযোগ্যতার বিধান নেই ইসির পরিপত্রে
  • মেট্রোরেল নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলবে
  • নির্বাচনের তফসিলে ভোটের তারিখ ছাড়াও যা যা থাকে