সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবৈধভাবে প্রবেশ করে একটি চক্র পারশে মাছের পোনা নিধন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ চক্রের সঙ্গে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপের (সিপিজি) একজন প্রভাবশালী সদস্য জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা টাকার বিনিময়ে সুন্দরবন থেকে পারশে মাছের পোনা আহরণ ও পরিবহনের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে জেলেরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, একটি পারশে পোনা আহরণের বিপরীতে কমপক্ষে ১১৯ প্রজাতির চিংড়ি, ৩১২ প্রাণী কণা ও ৩১টি অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হয়। প্রতিষ্ঠানটি পাইকগাছা নোনাপানি গবেষণা কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। পোনা শিকারে জড়িত কয়েকজন জেলের ভাষ্য, জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার ব্যবসায়ীরা বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পারশের পোনা শিকারে গেছেন। 
সিপিজির একজন সদস্যের মধ্যস্থতায় বন বিভাগ থেকে সাদা মাছ পরিবহনের জন্য ট্রলারের অনুমতি নিয়ে পারশের পোনা শিকার করছেন জেলেরা। তাদের এ কাজে সহযোগিতার জন্য মিলন হোসেন নামে বন বিভাগের একজন ফরেস্ট গার্ড (এফজি) মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন বলে জানা গেছে। একাধিক জেলে জানিয়েছেন, তাঁর মাধ্যমে সবকিছু ম্যানেজ করা হয়।
অবশ্য ফরেস্ট গার্ড মিলন হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই কোনো অবৈধ কাজে জড়িত নই। অনেকে আমার নাম ব্যবহার করে সুবিধা নিতে চায়। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
অন্তত ২০ জেলের সঙ্গে কথা বলে পারশের পোনা ধরতে ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করা কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন– কয়রার ২ নম্বর কয়রা এলাকার তাজমিনুর রহমান, ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের আল আমিন, ঝিলেঘাটা বাজার এলাকার আজিজুল ওরফে ছাতি আজিজুল, জাহিদুল ইসলাম, ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের হাবিবুল্লাহ, পাইকগাছার গড়াইখালী গ্রামের ফারুক গাজী ও বাবু এবং দাকোপ উপজেলার নলিয়ান এলাকার জহির উদ্দীন। 
পারশে পোনা নিধনের অভিযোগ ওঠা দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাজমিনুর রহমানকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কোস্টগার্ড সদস্যদের হাতে দুই ট্রলার ধরা পড়ায় হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি। ট্রলার ছাড়াতে পারলে ফের পোনা ধরতে সুন্দরবনে যাব।’
এসব ব্যবসায়ী দ্রুতগামী ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকার খালে প্রবেশ করেছেন বলে একাধিক সূত্রে তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, পারশের পোনা নিধনকারীরা সুন্দরবনের দুবলারচর, আলোর কোল, বঙ্গবন্ধুর চর, বাটলুরচর, নারিকেলবাড়িয়া, টিয়েরচর, পশুর, আগুনজ্বলা ও মজ্জত নদীতে অবস্থান করেন। প্রতিটি ট্রলারে আট থেকে ১০ জন জেলে, ২০০-৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪০-৫০ মিটার প্রস্থের মনোফিলামেন্ট জাল থাকে। এ জাল একবার টানলে দুই থেকে তিন মণ পারশে পোনা পাওয়া যায়। দু’দিন পরপর এসব ট্রলার পোনা নিয়ে লোকালয়ে ফেরে।
সুন্দরবনে কোনো অভিযান পরিচালনার আগেই মধ্যস্থতাকারী দুই সদস্য জেলেদের জানিয়ে দেন। সতর্ক সংকেত পেয়ে তারা বনের মধ্যে পালিয়ে থাকেন। অভিযান শেষ হলে ফের তারা পোনা ধরতে শুরু করেন। পারশের পোনা নিধনে জেলেরা নিষিদ্ধ মনোফিলামেন্ট বা মশারি জাল ব্যবহার করায় শতাধিক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের পোনা নষ্ট হচ্ছে। পোনা পরিবহনে দ্রুতগামী ট্রলার ব্যবহার করায় অভয়ারণ্য এলাকায়ও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার বলেন, মনোফিলামেন্ট জাল ব্যবহার করে পারশে পোনা ধরতে গিয়ে অন্য প্রজাতির কোটি কোটি পোনা ধ্বংস করছেন জেলেরা। এতে সুন্দরবন এলাকায় আশঙ্কাজনকহারে মাছের উৎপাদন কমছে।
যোগদানের পর এসব ট্রলার বন্ধ করে দিয়েছেন বলে দাবি সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমানের। তিনি বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কোথাও পারশে পোনা ধরতে দেওয়া হয় না। পশ্চিম সুন্দরবনে ট্রলার প্রবেশের অনুমতি নেই। কেউ আইন অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র এল ক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে

ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
 
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।

সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
 
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’ 

আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’ 

সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে